• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

টেথিস সাগরের উপর হিমালয়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০১:০৭ এএম

টেথিস সাগরের উপর হিমালয়

ফিচার ডেস্ক

টেথিস একটি প্রাচীন মহাসাগর। পার্মো-ট্রায়াসিক যুগে প্রাচীন বৃহৎ মহাদেশ প্যানজিয়া খণ্ডিত হওয়ায় টেথিস সাগরের জন্ম হয়। প্রাচীন গ্রিক পুরাণের সমুদ্রের দেবী টেথিসের নামে এই মহাসাগরের নাম দেয়া হয় টেথিস। অস্ট্রিয় ভূতত্ত্ববিদ অ্যাডওয়ার্ড সুয়েস ১৮৯৩ সালে এই নামকরণ করেন।

প্রায় সাড়ে সাত কোটি বছর আগে লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানার মধ্যবর্তী অংশে এটির অবস্থান ছিল। প্রথমাবস্থায় পশ্চিম থেকে পূর্বে কিছুটা ত্রিভূজাকারে বিস্তৃত ছিল এই মহাসাগর। আজ থেকে প্রায় ১৫ কোটি বছর পূর্বে বিস্তৃতির চরমতম মুহূর্তে ছিল এটি। পূর্ব থেকে পশ্চিমে লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানা মহাদেশের মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত ছিল। সে সময়ে উত্তর-দক্ষিণে তার বিস্তৃতি ছিল নিরক্ষরেখা থেকে প্রায় ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত। এই সময় অপেক্ষাকৃত চওড়া পূর্ব দিকে এর বিস্তৃতি ছিল প্রায় ২০০০-৩০০০ কিলোমিটার।

Southern Ocean starts to absorb carbon again

ক্রিটেশিয়াস যুগেও এই মহাসাগর ১০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৫ ডিগ্রি  উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আজকের ইউরোপের দক্ষিণাংশ, পূর্ব ভূমধ্যসাগর, উত্তর আফ্রিকা, ইরান ও সমগ্র হিমালয় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্বে এই মহাসাগর সম্ভবত মিয়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত ছিল।

অন্যদিকে পশ্চিমে আজকের ইউরোপের আল্পস পর্বতমালা ও উত্তর আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতীয় ও আফ্রো-আরবীয় প্লেটের সঙ্গে ইউরোপীয় প্লেটের সংঘর্ষ হয়। এতে সৃষ্ট হয় আলপাইন-হিমালয় মহাপর্বত। ফলে মধ্য নবযুগের দিকে বন্ধ হয়ে যায় টেথিস মহাসাগর।

5 Things You Should Know About the ‍‍`New‍‍` Southern Ocean | HowStuffWorks

বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও পূর্বে ভারত-মিয়ানমার পর্বতমালা টেথিস থেকে নেমে আসা টেথিসাইড নামে পরিচিত। এটি বৃহৎ গিরিজনিক কমপ্লেক্সের একটি অংশ। আজ থেকে প্রায় ৪ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারত পূর্বমুখে ভাসমান অবস্থায় এশীয় স্থলভাগের সঙ্গে ধাক্কা খায়। মধ্যবর্তী টেথিস সাগর দক্ষিণ তিব্বতের গর্ভে হারিয়ে যায়। এই সংঘর্ষ হিমালয় গিরিজনি বলয়ের সৃষ্টি করে।

বিগত ৪ কোটি বছর ধরে প্রতিবছর প্রায় ৫ সে.মি. হারে ভারতীয় প্লেট অব্যাহতভাবে উত্তরমুখী বিচলন, একে এশিয়ান প্লেটের ভেতর ঠেলে দিয়েছে। এতে ভারতের উত্তর প্রান্তের হিমালয় পর্বতমালা, ভূমিকম্প ও তিব্বতের ফাটল আজও বছরে কয়েক মি.মি. হারে উঠছে।

The Southern Ocean is a critically important carbon sink • Earth.com

হিমালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিবর্তনের পেছনে কয়েকটি মডেলের ধারণা দেয়া হয়েছে। প্রধানত সব মডেলেই এ ধারণার সমর্থন পাওয়া যায় যে, সেনোজোয়িক যুগে ভারতীয় প্লেট ও এশিয়ান প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ কারণে সৃষ্ট সংকোচন ও বিকৃতি হিমালয় পর্বত সৃষ্টির জন্য দায়ী।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ