• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

আমাজন জঙ্গলের রহস্য

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২২, ০১:৪৬ এএম

আমাজন জঙ্গলের রহস্য

আমাজন জঙ্গলের রহস্য

ফিচার ডেস্ক

অজানা জিনিসের প্রতি মানুষের কৌতূহল অনেক। সেই কৌতূহল থেকেই মানুষ চষে বেড়ায় পৃথিবীর পথে-প্রান্তরে। খুঁজে বেড়ায় নানান রহস্য। সবচেয়ে বড় জঙ্গলের নাম আমাজন। রহস্যময় স্থান হিসেবেও এই জঙ্গল অন্যতম। পৃথিবীর মানচিত্রে সবুজে ঘেরা সবচেয়ে বড় অংশটিও অ্যামাজনের।  প্রায় ৯টি দেশজুড়ে বিস্তৃত এই জঙ্গলটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগে ছড়িয়ে আছে ।

আমাজন জঙ্গল রহস্য ঘেরা এক মহাবিস্ময় - ১২ মিশালি
প্রথম ব্যক্তি হিসেবে স্প্যানিশ ফান্সিসকো ডি ওরিলানা ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিশাল এক সৈন্য দল নিয়ে আমাজনের রহস্য উদঘাটনে যাত্রা শুরু করেন। আমাজন নদী ধরে তিনি এর শেষ প্রান্তে  পৌঁছান। তার এই অভিযানের লিখিত রুপ পাওয়া যায় জারগাভাল নামের এক ধর্মযাজকের হাতের লেখায়। যিনি ফান্সিসকো ডি ওরিলানার সফরসঙ্গী ছিলেন।
যাত্রার এক পর্যায়ে তারা অস্ত্রহাতে নারী যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। গ্রিক কল্পকথার স্বর্ণের শহর এলডোরাডো, যা নাকি সোনায় মোড়ানো শহর। যেখানে অস্ত্রহাতে নারী যোদ্ধারা পাহারায় থাকার কথা বলা আছে। সেখানকার এসব নারীদের আমাজন বলা হয়। সেই অনুসারে ফান্সিসকো ডি ওরিলানা এই জঙ্গলের নামকরণ করেন আমাজন।


এ বনের প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলের অধীনে। ব্রাজিল ছাড়াও পেরু, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্জ গায়ানা আমাজন বিস্ময়ে ডুবে রয়েছে। ৭০ লাখ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই বনের অনেক যায়গায় এখনও মানুষের পা পড়েনি। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশই হলো এই দুর্গম জঙ্গল। পৃথিবীজুড়ে রেইন ফরেস্টের যত আয়তন তার অর্ধেকটাই আমাজন। বিস্ময়কর এই বনের আয়তন যেমন বিশাল, তেমনি বিশাল এই বনের প্রাণী ও উদ্ভিদ-বৈচিত্র্য। রেইন ফরেস্ট আমাজনে মাত্র দুটি ঋতু রয়েছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা। গরম প্রধান এই জঙ্গলে ছয় মাস গ্রীষ্ম ও বর্ষা থাকে। এই বনে গরম আবহাওয়া কখনোই সরে না। প্রায় সময়ই ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকায় এখানে পথচলা খুব কষ্টকর। এ ছাড়া এখানকার আর্দ্রতা ৭৭ থেকে ৮৮ শতাংশ। যে কারণে অল্পতেই হাঁপিয়ে যান আমাজনে প্রবেশকারীরা। 

আমাজনের অজানা রহস্য

আমাজনের  সৃষ্টি প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে ইউসিন যুগে। এখানে প্রায় ৪০০০০ প্রজাতির গাছ আছে, ১৩০০ প্রজাতের পাখি পাওয়া যায়, ২২০০ জাতের মাছ, ৪২৭ জাতের স্তন্যপায়ী, ৪২৮ জাতের উভয়চর, ৩৭৮ জাতের সরীসৃপ এবং ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, ৪২৮ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী আছে। পাশাপাশি আমাজন নদীতে প্রায় ৩০০০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী আছে। 

Explore the diverse wildlife and tranquil nature at its best: Amazon  Rainforest - Tripoto
পৃথিবীর ২০% অক্সিজেন আসে এখান থেকে। তাই তো আমাজনকে পৃথিবীর ফুঁসফুঁস বলা হয়। আমাজন পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি। 
জারগাভালের লেখায় ফুটন্ত নদীর কথা ছিল, বিশাল বিশাল মানুষ খেকো সাপ আর গাছের কথা ছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমাজনের জঙ্গলে এমন নদী আছে যা শুধু ফুটন্ত বললে ভুল হবে গরমে পানি রীতিমতো টগবগ করে ফুটতে থাকে। আমাজনের বিশাল বিশাল কুমির আর অ্যানাকোন্ডা সাপের কথা কারো অজানা নয়। রয়েছে বিদ্যুৎ ইল, মাংসখেকো পিরানা মাছ, বিষাক্ত ফ্রগ। 

Deadliest Animals | Deadliest animals of Amazon dgtl - Anandabazar
এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আমাজন নদী যা এই জঙ্গলের প্রাণশক্তি। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। আমাজন নদী বিশ্বে প্রচুর পানির যোগান দিয়ে থাকে। প্রায় এক হাজার উপনদী মিলিত হয়ে আমাজন নদী গঠিত হয়েছে। যেখানে আমাজন নদীর পানি সমুদ্রে মিলিত হয়েছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘনফুট পানি সাগরে ফেলে। বর্ষাকালে যা ৭ মিলিয়ন ঘনফুটে গিয়ে দাঁড়ায়। দিনে প্রায় ১৮ হাজার কিউসেক পানি আমাজন নদী থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে মেশে। সেখানে নদীর মুখ এত চওড়া যে বড় আকারের একটি দ্বীপ তলিয়ে যায়। যার আয়তন বর্তমান সুইজারল্যান্ডের সমান। আমাজন নদী এখন পর্যন্ত মানুষের কাছে বড় বিস্ময়। কোথাও কোথাও এই নদীটি ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। 

আমাজন জঙ্গল এর রহস্যময় ও বিচিত্র বিষয়সমূহ

শুনতে আশ্চর্য লাগবে যে, আমাজনের জঙ্গলে প্রায় ১৫০০টির মতো ফল পাওয়া গেলেও এরমধ্যে খাওয়ার যোগ্য মাত্র ২০০টির মতো ফল। সঠিক খাদ্য চিনতে না পারলে এখানে এক মুহূর্ত টিকে থাকা অসম্ভব।


আমাজনে প্রায় তিনশো’র বেশি উপজাতি বাস করে। মোট ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। তারা বেশির ভাগই ব্রাজিলিয়ান। এরা পর্তুগিজ, স্প্যানিসের পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায়ও কথা বলে। এ ছাড়া এদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। 
 

 

সাজেদ/এএল
 

আর্কাইভ