• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রাচীন নিদর্শন সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ১০:৫৬ পিএম

প্রাচীন নিদর্শন সৈয়দপুরের ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

ঐতিহাসিক চিনি মসজিদ

মু আ কুদ্দুস

প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহাসিক নিদর্শন সৈয়দপুরের ‘চিনি মসজিদ’। যা অনেকের কাছে ‘চীনা মসজিদ’ নামে বেশি পরিচিত। সৌন্দর্যমন্ডিত এ মসজিদটি নীলফামারী সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুরে অবস্থিত। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক নামাজ আদায় করতে পারে।

ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস বেশ সুদীর্ঘ। চিনি মসজিদ শুধু উপসনালয় নয়, এই মসজিদ অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীকও। এই মসজিদের নির্মাণ শৈলী ও সৌন্দর্য সবার নজর কাড়ে খুব সহজে। ইতোমধ্যে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি এ অঞ্চলের অন্যতম মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই তো দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতিদিন আসে একনজর দেখার জন্য এই মসজিদটি।

সৈয়দপুর শহরের উত্তরে ইসলামবাগ এলাকায় এলাকায় ছন ও বাঁশ দিয়ে প্রথমে ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রথম দিকে এটি দোচালা ছোট একটি টিনের ঘর ছিল। পরবর্তীতে ১৯২০ সালে হাজী হাফিজ আব্দুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়। হাজী আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা এঁকেছিলেন। পুনরায় ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। এই চিনি মসজিদের সারা অবয়ব রঙ্গীন উজ্জ্বল চীনা মাটির পাথরের টুকরো দ্বারা আবৃত।

১৯৬৫ সালে বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টনের মতো চীনা মাটির পাথর দান করে। এছাড়া সেই সময় কোলকাতা ২৪৩টি শংকর মর্মর পাথর এনে লাগানো হয়। মসজিদ নির্মাণে মুঘল স্থাপত্য শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালে ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, একটি বৃত্তে একটি ফুল, চাঁদতারাসহ নানা চিত্র অঙ্কিত আছে। মসজিদ তৈরিতে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়। ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদে ২৭ মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটি দ্বিতল। 

প্রবেশ পথের উপরে আজান দেবার জন্য মিম্বার রয়েছে। মসজিদের বারান্দা সাদা মোজাইকে বাঁধানো। মসজিদের সম্পূর্ণ অবয়ব রঙিন পাথরে মোড়ানো। মসজিদটি দুই ধাপে বর্ধিত করা হয়। মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে দরজা রয়েছে। মসজিদের দোতলায় একটি ভবনসহ পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। 

সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ দেখার জন্য বহু বিদেশি পর্যটকদের আগমনের ইতিহাস রয়েছে। স্থাপত্যের নিদর্শন এই চিনি মসজিদ দেশের ক’জন রাষ্ট্র প্রধানও পরিদর্শন করে গেছেন। ইসলামের মহিমা প্রচার যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি ইসলাম অনুসারীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে সৈয়দপুর চিনি মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। মসজিদটির ডানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বামে একটি ইমামবারা রয়েছে। আর পশ্চিমে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে দক্ষিণে মসজিদের গাঁ ঘেঁষে ১২টির মত দোকানঘর। 

এইসব দোকানের ভাড়া ও মুসল্লীদের চাঁদায় মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস। যার উপর নির্ভর করে মসজিদের সকল ব্যয় ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড। তাই সৈয়দপুর শহরের অতীত ইতিহাসের প্রতীক ‘চিনি মসজিদ’ এর সংস্কার ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য সরকারি সাহায্য প্রয়োজন।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ