প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ১২:১১ এএম
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধ্বংসের দিন হবে কেয়ামত। যেদিন পৃথিবী অসীমের মাঝে বিলীন হয়ে যাবে। সেদিন মহান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবেনা।
পৃথিবী ধ্বংসের প্রাক্কালে যখন মানুষ পাপের অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। ধর্ম-কর্ম ভুলে আবার জাহেলী যুগে ফিরে যাবে। পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। মানুষের মধ্যে থেকে ইমান, ভালোবাসা চলে যাবে। খোদাভীতি সব উঠে যাবে। মহান আল্লাহর নাম নেয়ার মতো বা নেক আমল করার মতো পৃথিবীতে কেউ থাকবেনা। এমন এক সময়ে কেয়ামত সংঘটিত হবে।
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট দিনের বা সময়ের বর্ণনা নেই। তবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর কিছু আলামত বা লক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের প্রলয়ংকরী কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়
পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে কেয়ামতের নিকটবর্তিতার প্রমাণস্বরূপ কিছু ছোট আলামতের লক্ষণ দেখা যাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট আলামতগুলো কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগেই প্রকাশিত হবে। এর মধ্যে কোন কোন আলামত ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। আবার কোন কোন আলামত নিঃশেষ হয়ে আবার পুনঃপ্রকাশ পাচ্ছে। কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে এবং অব্যাহতভাবে প্রকাশিত হয়েই যাচ্ছে। আর কিছু আলামত এখনো প্রকাশ পায়নি।
কেয়ামতের পূর্বে ছোট ছোট আলামতগুলোর লক্ষণ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহম্মাদ (সা.) বলেছেন-
- শিরক, বিদআত, নিফাক ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে।
- মানুষ গচ্ছিত সম্পদের তথা আমানতের খেয়ানত করবে এবং ওয়াদার বরখিলাফ ঘটবে অহরহ।
- প্রতিযোগিতা করে অট্টালিকা নির্মাণ হবে এবং এসব সুউচ্চ অট্টালিকার মালিক হবে বকরির রাখালেরা ।
- হিংসা, লোভ ও অহংকারের সীমা ছাড়িয়ে যাবে।
- দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের পরিবর্তে দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমনের কার্যক্রম গর্বের সঙ্গে করা হবে।
- মানুষ থেকে নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে যাবে। অন্যায়-অবিচার এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করবে যে মানুষ অন্যায়কেই ন্যায় মনে করবে। মানুষের প্রতি মানুষের জুলুম বেড়ে যাবে।
- জাকাত দেয়াকে জরিমানা মনে করবে।
- মানুষ হত্যা বেড়ে যাবে।
- জিনা-ব্যভিচার বেড়ে যাবে।
- সুদ-ঘুষ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়বে। ঘুষকে স্বাভাবিকভাবে দেখা হবে এবং সুদকে ব্যবসার ন্যায় হালাল মনে করা হবে।
- নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং নারীরা পর্দা করার পরিবর্তে পর্দাহীনতাকে অহংকার মনে করবে । কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও নারীদের উলঙ্গতার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।
- মদপানকে তুচ্ছ করে দেখা হবে।
- মানুষ অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জনে প্রতিযোগিতা শুরু করবে।
- ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে জাগতিক বিদ্যা অর্জনে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
- পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে।
- মায়ের সঙ্গে সন্তানরা খারাপ আচরণ করবে।
- বাবাকে বাদ দিয়ে সন্তান তার বন্ধুকে আপন করে নেবে।
- মসজিদে মসজিদে নানারকম ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হবে।
- জাতির দূর্বল ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্ব দেবে।
- নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা জনপ্রতিনিধি হবে।
- খারাপ কাজে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করবে এবং এ খারাপ কাজের ভয়ে ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে।
- সমাজে সৎ ও নেককার লোকেরা লাঞ্ছিত হবে। অসৎ ও দুষ্ট লোকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে।
- বাদ্যযন্ত্র ব্যাপকতা পাবে ও নারী শিল্পীর অবাধ বিচরণ বেড়ে যাবে।
- বংশের শেষ প্রজন্মের লোকজন আগের প্রজন্মকে অভিশাপ দেবে।
- অধিকহারে ভূমিকম্প হবে।
- মুমিনের স্বপ্ন সত্য হবে।
- মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া বেড়ে যাবে; সত্য সাক্ষ্য লোপ পাবে। এবং
- মানুষের আকৃতিতে রূপান্তর ঘটবে, ঘনঘন ভূমিকম্প হবে এবং আকাশ থেকে পাথর পড়বে।
এসব ছোট ছোট আলামত ছাড়াও পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে কিছু বড় আলামতের প্রকাশ পবে। যেসব আলামত প্রমাণ করবে যে, কেয়ামত অতি সন্নিকটে। তবে কেয়ামতের বড় আলামতগুলোর মধ্যে কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা গেছে। আবার কোন কোনটির ধারাবাহিকতা জানা যায়নি। ধারাবাহিক আলামতগুলো হচ্ছে- দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হজরত ঈসা (আ.) এর অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের বহিঃপ্রকাশ। প্রথমে দাজ্জালকে পাঠানো হবে। তারপর ঈসা (আ.) এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। তারপর ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে। এসব বড় আলামত সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহম্মাদ (সা.) বলেছেন-
যতদিন পর্যন্ত না এ দশটি লক্ষণ দেখা যাবে ততদিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, লক্ষণগুলো হলো: ধোঁয়া বের হবে, যা পূর্ব হ’তে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত এক নাগাড়ে চল্লিশ দিন বিস্তৃত থাকবে, ধোকাবাজ দাজ্জালের আবির্ভাব হবে, দাব্বাতুল আরদ (জমিন থেকে একটি চতুষ্পদ জন্তু বের হবে), পশ্চিম থেকে সূর্যোদয় (কিয়ামতের ১০০ বছর আগে মাত্র এক দিনের জন্য পশ্চিম দিক দিয়ে সূর্য উদিত হবে), ইমাম মাহদির আবির্ভাব ঘটবে, হজরত ঈসা (আ.) এর অবতরণ ঘটবে, ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ঘটবে, পৃথিবীর পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্প হবে, পৃথিবীর পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিকম্প হবে, আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমিকম্প হবে, ইয়ামেন থেকে একটি আগুনের লেলিহান শিখা বহিঃপ্রকাশ ঘটবে যা মানুষকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে। (সহি মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)
কেয়ামতের ওপর আকীদা ও বিশ্বাস স্থাপন ছাড়া একজন মুসলমান মুমিন বান্দা হতে পারেনা। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে জীবনের শেষ মুহূর্তভেবে উল্লেখিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের সব আলামত ও তার ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। ঈমান ও নেক আমলের ওপর জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সাজেদ/