প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২২, ০৩:৪৮ এএম
সারা বিশ্বে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হয়েছে ভিডিও গেম। ২০২০ সালে ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রি সর্বমোট ১৭৪.৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই ইন্ডাস্ট্রি সিনেমা, টিভি, সংগীত সবধরনের বিনোদন মাধ্যমকে ছাড়িয়ে গেছে অর্থের দিক দিয়ে।
আরও পড়ুনঃ শোনা যায়না গাড়িয়াল ভাইয়ের গান
দ্য লাস্ট অব আস পার্ট টু:
এলির পালক বাবা জোয়েলের সাথে তার সম্পর্ক ও নানা ঘটনা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে পুরো গেমটি প্রতিশোধের এক ভয়ানক পথ অনুসরণ করে। প্লেয়ারকে এখানে এলি নামে উনিশ বছর বয়সী এক কিশোরীর ভূমিকায় খেলতে হয়। পুরো দুনিয়া অদ্ভুত এক মহামারিতে ছেয়ে গেছে, আক্রান্তরা যেখানে জম্বি হয়ে যায়। এর মাঝে যারা বেঁচে আছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তারা ছোট ছোট এলাকা তৈরি করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসবই অবশ্য প্রথম গেম ‘দ্য লাস্ট অব আস’-এ দেখানো হয়েছে।
ন্যারেটিভ দিয়ে এই গেমটি যা অর্জন করেছে, তা এর আগে অকল্পনীয় ছিল। প্লেয়ারকে যে সহিংস সিদ্ধান্তগুলো নিতে বাধ্য করে, তা হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো। গেমটি উপলদ্ধি করাতে বাধ্য করে যে, প্রতিশোধ একটা একমুখী রাস্তা, যেখানে নির্মমতা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা নেই, নির্দয় ভিন্ন অন্য কোনো চরিত্র নেই।
গেমটি দ্য গেম অ্যাওয়ার্ডসে এই বছরের সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদিকে, দ্য লাস্ট অব আসের গল্প থেকে এইচবিওতে টিভি সিরিজ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
স্পিরিটফেয়ারার:
পুরো গেমটিতে কল্পনা ও বাস্তবের অদ্ভুত একটি মিশেল তৈরি করা হয়েছে, যেটি মোহ তৈরি করে। এছাড়াও এই গেমটি দ্বারা উপলদ্ধি করা যাবে যে, মৃত্যু অনিবার্য। মৃতদেহ থেকে মুক্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করা একদল বিপর্যস্ত আত্মাকে শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে হয় এই গেমে। এরকম বিমর্ষ আত্মাদের কথা বেদনাদায়ক শোনালেও, গেমটি আপনাকে একটি আত্মোপলব্ধির উষ্ণতা দেবে।
বিখ্যাত স্টুডিও জিবলির অ্যানিমে পেইন্টিংয়ে প্রভাবিত হয়ে এই গেমটির গ্রাফিক্স নির্মাণ করা হয়েছে। তাই গেমটি খেলার সময়ে চমৎকার দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে স্মৃতিকাতরতায় ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অ্যামং আস:
২০১৮ সালে মাল্টিপ্লেয়ার এই গেমটি মুক্তি পেলেও ২০২০ সালে এটি বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর কারণ হচ্ছে গেমটি খেলতে একমাত্র যে দক্ষতাটি প্রয়োজন, তা হচ্ছে চাতুরি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, ডিজিটাল স্পেসে খেলার ছলে আড্ডা দেয়ার একটি চমৎকার উপায় বলে দিয়েছে গেমটি। তাই যারা কখনো এই গেম খেলেননি, তারাও এই গেমে তুখোর হয়ে উঠতে পারেন।
গেমটি এমন যে- আপনি বন্ধুদের সাথে একটি স্পেসশিপে রয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন গোপন খুনী রয়েছে। সে আবার স্পেসশিপের যন্ত্রপাতিতে গোপনে বিভিন্ন ক্ষতি করে যাচ্ছে। কে সে? ভুল অভিযোগে কাউকে যদি স্পেসশিপ থেকে বের করে দেওয়া হয়, তার বড় একটি মূল্য দিতে হবে। কারণ, এভাবে একজন একজন করে আপনার বন্ধুর সংখ্যা কমতে থাকবে। তাতে সেই গোপন খুনীর জন্যই সুবিধা।
ইফ ফাউন্ড:
আয়ারল্যান্ডে বেড়ে ওঠার একটি আবেগপ্রবণ, স্মৃতিকাতর গল্প `ইফ ফাউন্ড…` গেমটি। তরুণ ক্যাসিওর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার কঠিন সময়টুকু তুলে ধরা হয়েছে গেমটিতে। পরিণত বয়সে পা দেওয়ার সময়ে একটি পুরো দুনিয়া তার কাছ থেকে ধীরে ধীরে কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, সেই গল্পটিই তার জার্নাল থেকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই জার্নালটির পৃষ্ঠাগুলো গেমের জগতে ইন্টার্যাক্টিভ হয়ে ওঠে। কখনো স্টপমোশন অ্যানিমেশন দিয়ে, কখনো ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পীদের রঙের ব্যবহার করে, ক্যাসিওর হৃদয়ের জানালা গেমারের সামনে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গেমটিতে সবচেয়ে বেদনার্ত অংশটি হচ্ছে- মায়ের সাথে পুরনো দিনগুলো থেকে শুরু করে রক মিউজিকে সমবেত হওয়া বন্ধুদের গল্প, সমুদ্রের পাশে বাতাসের গর্জন, ভাঙা ছাদ দিয়ে উঁকি দেওয়া নক্ষত্র, সবই ধীরে ধীরে তার জীবন থেকে হারিয়ে যায়। পুরনো জায়গা, পুরনো সময়ের অনুভূতি ঘিরে এই গেমে যে নস্টালজিক আর্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তা আমাদের কৈশোরের অনুভূতি জাগ্রত করে তুলবে।
ফল গাইজ:
মাল্টিপ্লেয়ার গেম হওয়া সত্ত্বেও, এর সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতাই আনন্দদায়ক। ফোর্টনাইটের মতো গেমে হেরে গেলে যে ধরনের হতাশা তৈরি হয়, তা এখানে অনুপস্থিত। এর পেছনে একটি কারণ হচ্ছে, জিততে হলে প্লেয়ারদেরকে এখানে প্রায়ই অন্যকে সাহায্য করতে হয়।
গেমের আর্টগুলো এতই মজাদার ও কার্টুনময় যে, গেমটি সহজেই বাচ্চাসুলভ আনন্দ দেয়।
হেডিস:
জ্যাগ্রিয়াস হচ্ছে হেডিসের পুত্র, যে তার বাবার কুৎসিত পাতালপুরী থেকে পালাতে চায়। উল্লেখ্য, হেডিস গ্রিক মৃত্যুদেবতা, যিনি পাতালপুরী শাসন করেন। গেমটিতে প্লেয়ারের নিয়ন্ত্রণে জ্যাগ্রিয়াসকে দেওয়া হয়, তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। পথিমধ্যে গ্রিক পুরাণের অনেক প্রাণীর সামনাসামনি পড়তে হয়, যাদের সাথে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হয়। কিছু দেবতার সাথেও এখানে দেখা হয়ে যাবে, তাদেরকে পেরোতে হলে আশ্রয় নিতে হবে চাতুরির।
শুনতে ভরপুর অ্যাকশনের গেম মনে হলেও, হেডিসের সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান হচ্ছে, গল্পকথনে এর অপ্রচলিত রীতি। চমৎকার আর্ট ও নিমজ্জিত করে ফেলার মতো পরিবেশ যে কাউকেই গেমটি আবার খেলার জন্য আহবান জানাবে।
মাইক্রোসফট ফ্লাইট সিমুলেটর:
অনেক প্লেয়ারকে সত্যিকারের পাইলট হওয়ার জন্যে, ত্রিশ হাজার ফুট ওপরের আকাশের অনুভূতি নেওয়ার জন্যে প্রেরণা জুগিয়েছে এই গেমটি। এই বছরের সিমুলেটরটি দেখতে এতটাই বাস্তবের মতো হয়েছে যে, মহামারির জন্যে যারা ঘর ছেড়ে বেরুতে পারেননি, তারা ঘরে বসেই পুরো পৃথিবী ভ্রমণের স্বাদ পেয়েছেন।
ই-গেমটিকে মাইক্রোসফটের অসাধারণ ক্লাউড প্রযুক্তির একটি প্রদর্শনী বলা যায়। যে প্রযুক্তির ফলে আমাদের সমগ্র পৃথিবীর একটি ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো শহরে, যেকোনো বন অথবা সমুদ্রের চমৎকার দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় কখন পার হয়ে যাবে, তার খেয়ালই থাকবে না।
স্পাইডারম্যান: মাইলস মোরালেস
স্পাইডারম্যানকে সবাই চিনে এবং জানে। তার কথা মাথায় ভাবলেই সবার মাথায় শ্বেতাঙ্গ, অসামাজিক পিটার পারকারের চেহারা ভেসে উঠে। কিন্তু নিউ ইয়র্ক শহরে নতুন একজন স্পাইডারম্যানের আগমন ঘটেছে এবং এবারে সে কোনো পার্শচরিত্র নয়, বরং প্রধান চরিত্রের জায়গাটি কেড়ে নিয়েছে। `স্পাইডারম্যান: মাইলস মোরালেস` গেমে পোর্তোরিকান এক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরের ভূমিকায় প্লেয়ারকে খেলতে হয়।
মাইলস মোরালেস নামের এই কিশোর সবে ব্রুকলিন থেকে হারলেমে এসেছে। তার মেন্টর ছুটিতে গেলে শহরটি রক্ষার দায়িত্ব তার কাঁধেই এসে পড়ে।
অ্যানিমেল ক্রসিং: নিউ হরাইজনস
জাপানি স্টুডিও নিনটেন্ডোর লাইফ সিমুলেটর ফ্র্যাঞ্চাইজির সর্বশেষ সংযোজন এ গেমটি। এটি আপনাকে একটি নির্জন দ্বীপে নামিয়ে দেবে, যেখানে আপনার পুরো সময় কাটাতে হবে। ছোট একটি ঘরে আপনাকে থাকতে দেওয়া হবে।
আপনি সেই দ্বীপে ভ্রমণ করবেন, মাছ ধরবেন, গাছ লাগাবেন, চাষ করবেন। অর্থাৎ, আপনার জীবনটুকু সেখানে কাটাতে হবে। কোনো প্রতিযোগিতা নেই, কোনো লক্ষ্য নেই, আপনাকে শুধু নিজের মতো করে সময় কাটাতে হবে।
অরি অ্যান্ড দ্য উইল অব দ্য উইস্পস:
২০১৫ সালের জনপ্রিয় ‘অরি অ্যান্ড দ্য ব্লাইন্ড ফরেস্ট’-এর সিক্যুয়েল এই গেমটি। গ্রাফিক্সের চমৎকার এই গেমটি নরডিক রুপকথা থেকে প্রভাবিত। বনের মধ্যে একটি শিশু পেঁচা ও একটি আত্মা ভয়ংকর সব প্রাণীর সাথে লড়াই করে এগিয়ে যেতে থাকে।
গেমটির আর্ট নির্দেশনা নান্দনিকতায় ভরপুর, তার সাথে যুক্ত হয়েছে এর পরিবেশের সাউন্ড। এই দুইয়ে মিলে গেমটি মনের মধ্যে ভারি একটি রেশ রেখে যায়, যা থেকে বের হতে ইচ্ছা করে না।
সাজেদ/