• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

মাটির নিচের পৃথিবীতে বাস করেন যারা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২২, ০২:৫৬ এএম

মাটির নিচের পৃথিবীতে বাস করেন যারা

মাটির নিচের পৃথিবীতে বাস করেন যারা

ফিচার ডেস্ক

রহস্যময় এই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিচিত্রসব অপার বিস্ময়। যার অনেক কিছুই মানুষের রয়েছে অজানা। আবার এসবের কিছু জানতে পারলে এখনো অবাক হতে হয়। এই বিচিত্র পৃথিবীতে কোথাও পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে। আবার কোথাও মাটির নিচে পাওয়া বিচিত্র এক শহর। আমরা এতো দিন জেনে এসেছি, আদিমযুগের মানুষ বসবাস করত গুহায়। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে আজ আমরা এই সুন্দর পৃথিবী পেয়েছি। 

আরও পড়ুনঃ বিশ্বের প্রলয়ংকরী সব ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশ

এখন আমরা গুহার ভেতর কিংবা মাটির নিচে বসবাসের কথা ভাবতেও পারিনা। অথচ খুব বেশি দূরে নয়, অস্ট্রেলিয়াতেই রয়েছে এমন একটি শহর যেখানে গোটা শহরটি গড়ে উঠেছে মাটির নিচে। শহরটির নাম ‘কুবারপ্যাডি’। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বসবাস শহরটিতে। শহরটির নাম হচ্ছে কুবারপ্যাডি। 

কুবারপ্যাডি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত ছোট একটি শহর। এই শহরটি পৃথিবীর একমাত্র মাটির নিচের শহর যা এখনও মানুষের বসবাসের উপযোগী রয়েছে। কুবারপ্যাডি পৃথিবীর ওপাল রাজধানী নামেও খ্যাত। এখানে পাওয়া যায় ওপাল নামক বহুমূল্য রত্নের খনি। বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ওপালই পাওয়া যায় কুবারপ্যাডি এলাকা থেকে। একটি-দুটি করে এক সময় মাটির নিচে পুরো একটি শহর গড়ে তুলেছে সৃষ্টির এই সেরা জীবেরা। 

Subterranean sights: World‍‍`s top underground tourist attractions

যে শহরকে পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমির নিচে। শহরটির নাম ‘কুবারপ্যাডি’। তবে মাটির নিচের এই শহরটি আপনা আপনি গড়ে উঠেনি। ১৯১১ সালের আগে এই জায়গার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষধর পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। জায়গাটির বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইলহাচিসন নামের চৌদ্দ বছরের এক কিশোর। ১৯১৬ সালের দিকে ‘ওপাল’ নামে একধরনের খনিজ পদার্থের খোঁজে এই স্থানটিতে জড়ো হতে থাকেন খনি শ্রমিকেরা। ওপাল হচ্ছে পানির মতো একধরনের পদার্থ, যা মাটির সঙ্গে মিশে থাকে।পৃথিবীর ৮০ ভাগ ওপালের জোগান আসে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই কুবারপ্যাডি থেকে। কুবারপ্যাডিতে ওপাল সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন অনেক শ্রমিক আসতেন। লোকালয় থেকে স্থানটি অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন এসে কাজ করা এবং ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিলনা। 

Underground Cities | National Air and Space Museum

এদিকে দিনের বেলায় এখানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা থাকত। আবার রাতের বেলা সম্পূর্ণ বিপরীত- একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে যেত তাপমাত্রা। তারপরও রয়েছে ধূলিঝড়। সবমিলিয়ে কঠিন এক অবস্থা। তারপরও কাজ করতে হবে। এই ভেবে শ্রমিকরা মরুভূমির মাটির নিচে ঘর বানানো শুরু করে। একজনের দেখা দেখি আরেকজন। এভাবে একেএকে ঘর বানাতে বানাতে একসময় মাটির নিচে গড়ে ওঠে পুরো একটি শহর। প্রথমদিকে বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা না থাকলেও সময়ের ব্যবধানে সেগুলোর ব্যবস্থা হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে উন্নত শহরের প্রায় সবকিছুই এখানে গড়ে উঠতে থাকে। প্রথমে বাজার, তারপর মার্কেট, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ব্যাংকসহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুই মাটির নিচের এই শহরে স্থাপন করা হয়।

এই শহরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো এখানে কোনো ঘাস নেই, নেই কোনো গাছ। সবুজ বলতে এখানে কিছু নেই। আছে কেবল তৈলাক্তবালি। তবে সেদিনের সেই ‘কুবারপ্যাডি’ এখন শুধু খনি শ্রমিকদের শহর নয়।বর্তমানে এটি পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক এই স্থানটি দেখতে আসেন। এছাড়া আরো নাগরিক সুবিধা যুক্ত হয়েছে এখানে। অস্ট্রেলিয়ার ‘কুবারপ্যাডি’ শহর ছাড়াও পৃথিবীতে আরও একটি গ্রাম রয়েছে যার অবস্থান মাটির নিচে। এটি চীনের হুনান প্রদেশের সানমেনেক্সিয়ায় অবস্থিত। অদ্ভুত এই গ্রামের ঘরগুলো সমতল থেকে কমপক্ষে ২২ থেকে ২৩ ফুট নিচে। আর এগুলো ৩৩ থেকে ৩৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা।  গ্রামটিতে প্রায় ২০০ বছর ধরে মানুষবাস করছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি রয়েছে। সেখানে এখনও বাস করছেন ৩ হাজার মানুষ। বাকিরা এই জায়গা ছেড়ে আধুনিক ঘর বাড়িতে চলে গেছেন। 

আরও পড়ুনঃ নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা

এই গ্রামে বসবাসকারী ইয়াংগুয়ারাং নামের এক নারী জানান, মাটির নিচে তার ঘরটি খুবই আরামদায়ক। কারণ, এটি শীতকালে গরম আর গরমকালে ঠাণ্ডা থাকে । মাটির নিচে তৈরি ওই ঘরগুলোতে শীতকালে তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি। আর গরমে এই তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়না। ঐতিহাসিকদের মতে, চীনের পার্বত্য এলাকায় ৪ হাজার বছর আগে, ব্রোঞ্জ যুগে এই ধরনের বাড়ি তৈরি হত।মাটির তৈরি এই ঘরগুলোকে বলা হয় `ইয়াংয়োডং`। এর অর্থ হলো গুহা ঘর। ছয় প্রজন্ম আগে এখানে মানুষের বসবাস শুরু হয়। 

২০১১ সাল থেকে গ্রামটি চীনা ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। স্থানীয় সরকার এটি সংরক্ষণ করছে। আগামীতে পর্যটকদের জন্য গ্রামটি আরও আকর্ষনীয় করার ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। গুহাঘর গুলো বিদ্যুত সংযোগসহ সবধরনের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ভূমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়না এসব ঘর।সেই সঙ্গে এগুলো শব্দ নিরোধকও। চারকোনা বাড়িগুলো রয়েছে মাটির তলায়। বাড়ি গুলো দেখতে পর্যটকরাও সেখানে যায়, ফলে এগুলো সংরক্ষণ করছে স্থানীয় প্রশাসন। এগুলো ভূমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। এগুলো সাউন্ড-প্রুফও। আশেপাশের জায়গা চাষের কাজে ব্যবহার করা যায়। অনেক পর্যটক গ্রামটিতে ঘুরতে আসেন। ২১ ইউরো দিলে একমাসের জন্য মাটির নিচের এই গ্রামের একটি ঘর ভাড়া পাওয়া যায়। আর ৩২ হাজার ইউরো দিলে এখানকার একটি ঘর কেনাও যায়। 

 

সাজেদ/

আর্কাইভ