প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ১১:২৯ পিএম
প্যালকা ও সিঁদুল বৃহত্তর রংপুর বিভাগের সব মানুষের প্রিয় খাবার। প্যালকা ও সিঁদুল না খেলে বুঝা যাবে না কতটুকু স্বাদের। কারণ, এটি নামে যাই হোক খুব ব্যয়বহুল একটি তরকারি। অতিথি আপ্যায়নে ওই দুই পদের খাবার প্লেটে দিতে না পারলে বিরাট একটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। তাই অতিথিদের জন্য খাদ্য তালিকায় ওই দুটি খাবার অবশ্যই রাখা হয়। প্যালকার তরকারি সজনী পাতা নয়তো নাপা শাক দিয়ে আর সিঁদুলের তরকারি শৌল, শিং, মাগুর নয়তো টাকি মাছ দিয়ে রান্না করা হয়।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের প্রলয়ংকরী সব ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশ
প্রথমে দেখি প্যালকা কিভাবে রান্না করা হয় : পাট শাক পরিস্কার করে সজনে পাতা, কচু পাতা দিয়েঢ তারসঙ্গে আদা, রসুন বাটা, কাঁচা মরিচ, পরিমান মতো লবন ও খাওয়ার সোডা দিয়ে উনুনে বসিয়ে দেওয়া হয়। ঘন হয়ে আসলে নাড়তে হয়, এভাবে তৈরি হয় প্যালকা। অন্যদিকে নাপা শাক বাছাই করে তারসাথে সামান্য পরিমানে বথুয়া শাক দিয়ে উনুনে উঠিয়ে দিয়ে একইভাবে মশলা মিশিয়ে প্যালকা রান্না করা হয়। এসব প্যালকা দেখতে অনেকটা চাইনিজ স্যুপের মতো। তবে দেখতে সবুজ রংয়ের মতো এবং সুস্বাদু।
বিখ্যাত শিল্পী হরলাল রায় প্যালকা, সিঁদুল, বথুয়া ও নাপা শাক নিয়ে অনেক ভাওয়াইয়া গান গেয়েছেন। এছাড়াও রচিত হয়েছে বহুগান। এবার আসা যাক সুস্বাদু সিঁদুলের কথায়। এর গুনের কথা শেষ করা যাবে না। পেটে না ধরলেও খেতে ইচ্ছ করবে। তবে সিঁদুল তৈরিটা বেশ কষ্টকর। পুঁটি, চোপড়া জাতীয় মাছ শুকিয়ে শুটকি করে সিঁদুল তৈরি করা হয়। শুকানোর পর প্রথমে শুটকি গুড়ো করে পাউডার করা হয় উরুন-গাইনে। তারসাথে কালো কচুর শুকনো কুচি কুচি করে মেশানো হয়। এখানে সব ধরণের মশলা দিতে হয় পরিমান মতো। তারপর হাতের তালুতে হলুদ ও সরিষার তেল নিয়ে সাইজ মতো গোল গোল করে বানানো হয়।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের ভয়ঙ্করতম নরখাদক রাতু উদ্রে
সিঁদুল সংরক্ষন পদ্ধতি এক এক স্থানে এক এক রকম। কেউ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। কেউবা পাতলা সুতি কাপড়ে মুড়িয়ে মাটির হাঁড়িতে ছাই দিয়ে সংরক্ষণ করেন। অনেকে উনুনের একটু উপরে ঝুলে রাখেন। যে ভাবে রাখা হোক সিঁদুলে যাতে পোকার আক্রমন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হয়।
সিঁদুল ভর্তা ও রান্না দুটোই সমান সুস্বাদু। ভর্তা করার জন্য সিঁদুল কলা পাতায় মুড়িয়ে নিয়ে আগুনে পুড়তে হয়। পোড়া শেষ হলে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মাটির পাত্র নোড়ায় ভর্তা করা হয়। এসময় ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, রসুন, আদা বাটা দিয়ে সিঁদুলের ভর্তা পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়। তবে সরিষার তেল দিতে হবে।
বয়স্ক নারীরা একাজে পারদর্শী হলেও বর্তমানে এই ঝামেলায় কেউ যেতে চান না। কারণ, এটি তৈরি এবং খাওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক শ্রম দিতে হয়। আর এটা ব্যয় বহুল বটে। সে যাই হোক, সিঁদুল এবং নাপা শাক দুটোই উত্তর জনপদের মানুষের জন্য একটা প্রিয় খাবার। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে- হয়তো কষ্ট করে হলেও এটির প্রচলন থাকবে।
সাজেদ/