• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিশ্বের ভয়ঙ্করতম নরখাদক রাতু উদ্রে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০৪:০৬ এএম

বিশ্বের ভয়ঙ্করতম নরখাদক রাতু উদ্রে

বিশ্বের ভয়ঙ্করতম নরখাদক রাতু উদ্রে

ফিচার ডেস্ক

বাঘ বা সিংহ যেমন অন্য প্রাণী তাড়া করিয়ে শিকার করে। এরপর তার মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। তেমনিভাবেই আমরা সিনেমায় মানুষের মাংস মানুষকেই খেতে দেখেছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে এর চেয়েও ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর নরখাদক খলিলুল্লাহ’র কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। ১৯৭৫ সালের ৩ এপ্রিলের কথা।

খলিলুল্লাহ: যে বাঙালি ছিল নরখাদক – Unknown Fact BD

আরও পড়ুনঃ পেরুর নাজকা রেখায় কী আছে?

দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ ও  ছবিতে দেখা যায় এক যুবক মরা একটি লাশের বুক চিরে কলিজা বের করে খাচ্ছে। খলিলুল্লাহ নামের এই নরখাদককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মানসিক চিকিৎসার জন্য তাকে সেসময় পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয় । সে ২০০৫ সালে মারা যায় ।

ফিজি, আমাজন অববাহিকা, আফ্রিকার কঙ্গোসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এমনি কয়েকজন নরখাদকদের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা যায়, উগান্ডার স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনায়ক ইদি আমিনও নাকি নরখাদক ছিলেন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নরখাদকের খেতাবটি ফিজির সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রের দখলে।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি বিমান দুর্ঘটনা

রাতু উদ্রে এতই ভয়ঙ্কর ছিল যে মানুষকে খাওয়ার পর হাড়গুলো এক জায়গায় জমা করে রাখতো। এরপর সেগুলোকে স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য উত্তর ভিটিলেভুর রাকিরাকি এলাকায় একটি একটি করে পাথর দিয়ে সাজিয়ে রাখতো। মাঝেমধ্যে সেগুলো গুনতো। মনে রাখতো কয়টা মানুষ খেয়েছে সে। তার ইচ্ছে ছিল- সাজিয়ে রাখা পাথরগুলোর পাশে যেন তাকে কবর দেয়া হয়। হয়েছিলও তাই। মৃত্যুর পর তাকে সেই এলাকার পাথরের স্তূপের মধ্যেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

ভয়ংকর নরখাদক গুহা, ভেতরে গেলে জীবিত ফিরে আসে না কেউ

১৮৪০ সালে ফিজির রাকিরাকি এলাকার উদ্রের সমাধির পাশ থেকে মিশনারি রিচার্ড লিথ ৮৭২টি পাথর পেয়েছিলেন। লিথ মনে করেন, সমাধির পাশে আরও বেশি পাথর ছিল। পরবর্তীকালে, স্থানীয়রা নিজেদের প্রয়োজনে সেই পাথর সরিয়ে নিয়েছিল।

লিথ যখন ফিজিতে অবস্থান করছিলেন-তখন তিনি অনেক গবেষণা করেছিলেন। ওই সময় সেখানে তিনি উদ্রের এক ছেলের সন্ধান পেয়েছিলেন।  তার নাম ছিল রাভাতু। সে তার বাবার মত নরখাদক ছিল না। সে লিথ সাহেবের কাছে স্বীকার করেছিল- তার বাবা সর্দার রাতু উদ্রে উদ্রে সত্যিই নরখাদক ছিল।

আরও পড়ুনঃ নমরুদের মৃত্যু দুঃসহ যন্ত্রণায়

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ফিজির আদিবাসী গোষ্ঠী সংঘর্ষে হেরে যাওয়া যুদ্ধবন্দীদের খেয়ে ফেলতো উদ্রে উদ্রে। খাওয়ার জন্য তার দলের অনান্য আদিবাসী সর্দাররা তাদের জীবিত বন্দী ও মৃত শত্রুর দেহ উদ্রে উদ্রের হাতে তুলে দিত।

উদ্রের ছেলে রাভাতু জানায়, মানুষের মাংস ছাড়া তার বাবা আর কিছু খেত না। তার বাবা হতভাগ্য মানুষদের পুরো শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আগুনে ঝলসে খেত। একেবারে একটা দেহের সব মাংস খেতে না পারলে অর্ধভুক্ত দেহটি একটা বাক্সে তুলে রাখত। পরে পুরোটা খেয়ে নিত সে।

বিশ্বের নরখাদকদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর লরেন্স গোল্ডম্যান ‘অ্যানথ্রোপোলজি অফ ক্যানিবলিজম’ নামক একটি বই লিখেছেন। বইটিতে উদ্রে উদ্রে সম্পর্কে অনেক কিছুই লিখেন তিনি। তার বইয়ের শেষ লাইনে একটি ভয়ানক মন্তব্য করেন। সেটি হলো -নরখাদক মানুষগুলোকে আমরা সবাই ভয় পাই। কিন্তু আমি একই সঙ্গে তাদের প্রশংসা করব, কারণ ওরা শক্তির প্রতীক। নিজেদের বীরত্ব ওরা এভাবেই প্রমাণ করতে চেয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে। তার সেই লেখায় নরখাদকদের প্রশংসা করা নিয়ে ঝড় উঠেছিল পৃথিবীতে। শুরু হয়েছিল পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি। 

এরপর পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম নরখাদক মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পায় উদ্রে। মৃত্যুর পরে হলেও গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠে আসে তার নাম।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ