• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পেরুর নাজকা রেখায় কী আছে?

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০৩:১৪ এএম

পেরুর নাজকা রেখায় কী আছে?

নাজকা রেখা

ফিচার ডেস্ক

পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ঘটছে অসংখ্য রহস্যময় ঘটনা। আর এসব রহস্য উদঘাটন করতে মরিয়া বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কোনটির আংশিক রহস্য উদঘাটন হলেও অনেককিছু অজানা রয়ে গেছে। পৃথিবীতে এসব ঘটনা এখনও ঘটছে, আগামীতেও ঘটবে। তবে, বিজ্ঞানীরাও তাদের চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন। এরকম একটি রহস্যময় জায়গা পেরুর ‘নাজকা রেখা’। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাজকা মরুভূমি। আর এখানেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে নাজকা রেখা।

Peru | Mystery about Nazca lines of Peru, giant geoglyph dgtl - Anandabazar

১৭০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে অতিশয় বিশাল সেই লাইন কীভাবে টানা হয়েছিল সে ব্যাপারে মোটামুটি একমত হয়েছেন পুরাবিদরা। কিন্তু কেনো ওই বিশাল এলাকা জুড়ে রুক্ষ জমিতে এক হাজারের ওপরে ছবি তৈরি করা হয়েছিল, তা আজও বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুনঃ বরিশালের প্রসিদ্ধ আমড়া

১৯২৭ সালে পেরুর এক আর্কিওলজিস্ট তোরিবিও মেহিয়া কেসপ দক্ষিণ পেরুর ওই নাজকা মালভূমি অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ-ই তার চোখে পড়ে দূরে অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চলে কিছু অদ্ভুত রেখা। কেউ যেন রেখাগুলো দিয়ে কিছু অতিকায় জ্যামিতিক নকশা তৈরি করেছে মরুভূমির বুকে। এর প্রায় ৩ বছর পর এক পাইলট ওই শুষ্ক অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে তারও চোখে পড়ে মরুভূমির বুকে অন্কিত জটিল নকশাগুলো।

১৯৩৯ সালে পেরুর রাজধানী লিমা শহরে এক আর্কিওলজিক্যাল কনফারেন্সে তোরিবিও ওই রহস্যময় রেখাগুলোর কথা আবার উল্লেখ করেন। তার কথা শুনে সকলের মনে তীব্র কৌতূহল জাগে। ওই সময় একজন আমেরিকান ঐতিহাসিক পল কসক কাজ করেছিলেন পেরুতেই। তার গবেষণার বিষয় ছিল পেরুসহ বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার সেচ-প্রণালী ব্যবস্থা। নাজকা রেখা সম্পর্কে জানতে পেরে তারও দারুণ কৌতূহল জাগে। এরপর তিনি একটি বিমান ভাড়া করে নিজের চোখে দেখতে গেলেন ওই রহস্যময় রেখা।

নাজকা লাইন : পেরুর মরুভূমির বুকে অঙ্কিত হাজার বছরের রহস্যে ঘেরা রেখাচিত্র!  - ইতিবৃত্ত

অদ্ভুত ওই নাজকা রেখা দেখেই তিনি বসে থাকেননি। এই রেখার রহস্য উদঘাটনে উঠে পড়ে লাগেন তিনি। তার সঙ্গে যোগ দেন জার্মান গণিতজ্ঞ ও আর্কিওলজিস্ট মারিয়া রাইখ। এই দুজন শুরু করেন নাজকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো আজ থেকে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি বছর আগে তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো প্রাচীন নাজকা ও প্যারাকাস সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহণ করে। বিশেষজ্ঞরা নাজকা রেখা দিয়ে তৈরি চিত্র বা নকশাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। জিওগ্লিফস এবং বায়োমরফস।

পেরুর নাজকা লাইনে ২২০০ বছর আগের আঁকা রহস্যময় বিড়ালের ছবি

জিওগ্লিফস অর্থ জ্যামিতিক আকৃতি। নাজকার ওপর প্রায় শতাধিক এমন জ্যামিতিক নকশা চোখে পড়ে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই চিত্রগুলো আকারে বেশ বড়। কোনো কোনো চিত্র প্রায় ২০০ মিটার অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছে। অপরদিকে, বায়োমরফস বলতে বুঝায় জীবজগৎ অর্থাৎ পশু- পাখি বা গাছপালার ছবি। যেমন- হামিংবার্ড, মাকড়শা, হনুমান এবং মানুষের ছবি।

আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি বিমান দুর্ঘটনা

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, নাজকা রেখা আয়রন অক্সাইড পাথরে আবৃত। এর নিচে রয়েছে চীনাপাথরের মাটি। নাজকা লাইনগুলো তৈরি হয়েছে এই পাথুরে জমি খুঁড়ে। রেখাগুলো প্রায় চার থেকে ছয় ইঞ্চি গভীর। প্রাচীন হট এয়ার বেলুন থেকে বা পাহাড়ের ওপর থেকে সার্ভের মাধ্যমে আঁকা হয় নাজকা লাইনস। তবে, এগুলো কে বা কারা এঁকেছেন তা আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি।

গবেষকরা মনে করছে এগুলোর সঙ্গে আদি সময়ের মানুষের জ্যোর্তিবিজ্ঞান সংক্রান্ত কোনো রীতির যোগসূত্র থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে, কোথায় খাবার ও জল রয়েছে এই ধরনের তথ্য পাকাপাকিভাবে স্মরণ রাখতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল।

What Is Nazca Line Is It A Alien Runway Speculation | Nazca Line: মরুভূমিতে  ভিনগ্রহীদের রানওয়ে? প্রাচীন রহস্য আজও ঘিরে রয়েছে এই এলাকাটিকে

বাণিজ্যিক উড়ান চালু হওয়ার পর এই ভূচিত্র অধিকাংশ মানুষের নজরে এসেছে। কারণ একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা ছাড়া এর অবয়ব বোঝা সম্ভব নয়। ১৯৯৪ নাজকাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো।

এই রহস্যঘেরা নাজকা রেখা নিয়ে বিভিন্ন গবেষকদের গবেষণা এখনও শেষ হয়নি। যদিও সঠিক উত্তর এখনো আমাদের অজানা। আর অজানা বলেই তো এত রহস্য, এত প্রশ্ন। সবারই আশা, এর উত্তর একদিন মিলবেই।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ