প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০২:০১ এএম
বিমান পথে চলাচল মানুষের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোকে করেছে সহজ ও দ্রুততর। সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে বিমান ভ্রমণ সবচেয়ে নিরাপদ। অনেকে আকাশ পথে ভ্রমণকে সবচেয়ে আনন্দময় ভ্রমণ হিসেবেও মনে করে থাকেন। তবে মাঝে মাঝে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এ আনন্দ ভ্রমণেই নেমে আসে বিষাদের ছায়া। বিধ্বস্ত হওয়া বিমান থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা থাকে খুবই ক্ষীণ।
আরও পড়ুনঃ চলন্ত গাড়ি থেকে শিশুকে ফেলে হত্যার পর মাকে ধর্ষণচেষ্টা
বিশ্বের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী ১০টি বিমান দুর্ঘটনার তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
টেনেরিফ দুর্ঘটনা: ২৭ মার্চ, ১৯৭৭: ১৯৭৭ সালের ২৭ মার্চ। স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপপুঞ্জের নর্থ এয়ারপোর্টে কেএলএম রয়েল ডাচ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং-৭৪৭ বিমান উড্ডয়ন শুরু করার ঠিক পরপরই ‘প্যান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজ’-এর অপর একটি বোয়িং-৭৪৭ বিমানের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এতে দুই বিমানের মোট ৫৮৩ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। তবে প্রাণে বেঁচে যান ৬১ জন।
জাপান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১২৩: একক বাণিজ্যিক বিমানে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এটি। ১৯৮৫ সালের ১২ আগস্ট। জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানটি টোকিও থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই দেশটির পাহাড়ি অঞ্চল ইউয়েনো এলাকায় যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে গিরিখাতের ভেতরে বিধ্বস্ত হয়। এতে মারা যান ৫২০ জন। বিস্ময়করভাবে প্রাণে বেঁচে যান চার যাত্রী।
হরিয়ানায় মধ্য-আকাশে সংঘর্ষ: ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের চরকি দাদড়ি এলাকা। সৌদি এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের সঙ্গে কাজাখস্তান এয়ারলাইনসের আরেকটি উড়োজাহাজের মধ্য আকাশে সংঘর্ষ হয়। এতে মারা যান ৩৪৯ জন।
টার্কিশ এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৯৮১: ১৯৭৪ সালের ৩ মার্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ‘ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-১০’ বিমানটি। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই এরমেওনভিলে একটি পার্কে আছড়ে পড়লে ৩৩৫ জন যাত্রী ও ১১ জন ক্রুর সবাই নিহত হন। উড়োজাহাজের পেছনের কার্গো এলাকার দরজা ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এয়ার ইন্ডিয়া ট্র্যাজেডি: ১৯৮৫ সালের ২৩ জুনের ঘটনা। আটলান্টিক মহাসাগরের আয়ারল্যান্ড উপকূলে সম্ভাব্য শিখ জঙ্গিদের বোমায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। মারা যান ৩২৯ আরোহীর সবাই। তাঁদের মধ্যে ২৬৮ জনই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক।
সৌদিয়া ফ্লাইট ১৬৩ : ১৯৮০ সালের ১৯ আগস্টের ঘটনা। সৌদি আরবের রিয়াদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজটিতে আগুন লেগে যায়। মারা যান ৩০১ আরোহীর সবাই।
ইরান এয়ার বিপর্যয় : ১৯৮৮ সালের ৩ জুলাইয়ের ঘটনা। পারস্য উপসাগরের আকাশে ইরান এয়ারের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ গুলি করে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে মারা যান ২৯০ আরোহীর সবাই। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, ভুল করে ওই গুলি করা হয়।
ইরানের ইলিউশিন বিমান : ২০০৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ঘটনাস্থল ইরানের কেরমান এলাকা। খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিধ্বস্ত হয় প্রভাবশালী বিপ্লবী গার্ড সদস্যদের বহনকারী উড়োজাহাজটি। মৃত্যু হয় ২৭৫ আরোহীরই।
আমেরিকান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৯১ : আমেরিকার মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এটি। ১৯৭৯ সালের ২৫ মের ঘটনা। শিকাগোর ও’হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি ম্যাগডোনেল ডগলাস ডিসি-১০ বিমান উড্ডয়ন শুরু করলে রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কারণে বাম পাশের ইঞ্জিনটি পাখা থেকে খুলে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা
এতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে ২৭৩ আরোহীর সবাই মারা যান। নিহত আরোহীদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭ জন, সৌদি আরবের ৪ জন, দক্ষিণ কোরিয়ার ১ জন, অষ্ট্রিয়ার ১জন, বেলজিয়ামের ১ জন ও নেদারল্যান্ডের ১ জন, ১৩ জন ক্রু এবং রানওয়েতে থাকা ২ জন। ইঞ্জিনের ব্যর্থতা ছাড়াও এ দুর্ঘটনায় আরও কয়েকটি কারণ ছিল। হাইড্রোলিক সিস্টেম দুটিই ছিল অকেজো। বৈদ্যুতিক সংযোগ অফলাইনে চলে যাওয়ায় বিকল হয়ে পড়ে বিমানটি।
কোরিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ০০৭: ১৯৮৩ সালের ১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ঘটনাস্থল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মনোরন দ্বীপ। সোভিয়েত বাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি। মারা যান ২৬৯ আরোহীর সবাই।
সাজেদ/