• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০১:৩৯ এএম

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা

ফিচার ডেস্ক

সিলেট অঞ্চলের খাদ্য তালিকায় জনপ্রিয় অনুসঙ্গ সাতকরা। এখানকার মানুষের বাড়তি চাহিদার নাম ‘সাতকরা’। এখানকার প্রতিদিনের রান্নায়, বিশেষ করে মাংস জাতীয় তরকারি রান্নায় ‘সাতকরা’ যেনো অপরিহার্য। এটি ছাড়া অধিকাংশ খাদ্যবিলাসী মানুষের রসনা বিলাসই যেনো অসম্পূর্ণ। বড় আকারের মাছ ও মাংসের তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে ‘সাতকরা’ ব্যবহৃত হয়। শৌখিন পরিবারের সদস্যদের জিবে জল আনে এই সাতকরা।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস ভুনা

অনেকটা লেবু জাতীয় এই ফলটি মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করা হয়। সিলেটের বাসিন্দাদের কাছে এর জনপ্রিয়তা এতো বেশি যে, এখন বাণিজ্যিকভাবে সাতকড়ার চাষ করা হচ্ছে এবং বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ বরিশালের প্রসিদ্ধ আমড়া

সাতকরা সিলেট অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল। ফল দেখতে চ্যাপ্টা গোলাকার, খোসা পুরু, শাঁস পরিমাণে খুব কম, টক ও তিতা। প্রতিটি ফলের গড় ওজন প্রায় ৩২৯ গ্রাম। সিলেটে সাতকরা দিয়ে মাংস রান্না করা হয়। এটি ওই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী রান্না। সিলেটে অতিথি আপ্যায়নে সাতকরার সুনাম আছে। সাতকরা দিয়ে হরেক রকম আচার তৈরি হচ্ছে। মাংসের সাথে রান্না করলে একটি আকর্ষণীয় ঘ্রাণযুক্ত খাদ্য তৈরি হয়। মূলত সাতকরা ও গরুর পায়ের হাড় দিয়ে জনপ্রিয় খাট্টা (ঝোলযুক্ত টক) তৈরি করা হয়। এছাড়া মাংসের ভুনাও তৈরি করা হয়। ঘ্রাণের জন্য সিলেট অঞ্চলে এটির এতো কদর।

সাতকরার পাতা অন্য সব লেবু জাতীয় ফলের পাতার চেয়ে এতই ভিন্ন যে, একমাত্র পাতা দেখেই সাতকরা গাছ চেনা সম্ভব। পাতা সুস্পষ্টভাবে বড় দু’টি অংশে বিভক্ত। শাখার সঙ্গে যুক্ত একটি অংশ। একমাত্র সাতকরার প্রথম অংশটি বড়। যা অন্য কোনো সাইট্রাস বা লেবু জাতীয় ফলে দেখা যায় না। তাই সাতকরা গাছ একমাত্র পাতা দেখেই চেনা সম্ভব।

অন্যান্য টক জাতীয় ফলের মতো সাতকরায় প্রচুর ভিটামিন সি বিদ্যমান। এটি বমিনাশক, খাবারের রুচি বাড়ায় ও হজমে সহায়তা করে। এর প্রাকৃতির ফ্লেভার বা সুগন্ধি বেশ আকর্ষণীয়। এর মধ্যে ২৫টি উপাদান আছে।

সিলেট অঞ্চলের শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এ ফলটির ব্যাপক কদর। সিলেটিদের কাছে ‘সাতকরা’ যেনো অমৃত। বর্তমানে ‘পাতলা’ ও ‘ছোলা’ নামে দুই প্রকারের সাতকরা বাজারে পাওয়া যায়। রান্নার উপাদান ছাড়াও ‘সাতকরা’ চাষে খরচ কম এবং সাতকরার উচ্চমূল্যের কারণে এ ফলটি অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় অনেকেই ‘সাতকরা’ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।

আরও পড়ুনঃ চলন্ত গাড়ি থেকে শিশুকে ফেলে হত্যার পর মাকে ধর্ষণচেষ্টা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সাতকরা যে শুধু সুস্বাদু তরকারি ও টক তা নয়। এ ফলটি জনস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। বাত, শিরা-উপশিরা ব্যথায় যারা ভুগছেন তারা ‘সাতকরা’ খেলে এসব রোগ থেকে উপশম পেতে পারেন। সিলেট অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে সাতকরা অদ্বিতীয়।

সিলেট যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় অঞ্চল, তেমনি এই অঞ্চলের খাবার দাবারেও আছে নানা বৈচিত্র্য। ‘আখনী পোলাও’ সিলেট অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খাবার। চাল, ঘি, গরম মশলা, সবজি এবং মাংস মিশিয়ে রান্না করা এই খাবারটি সিলেটের একটি নিজেস্ব এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসাবে সুপরিচিত। এছাড়াও সিলেটের আরো কিছু জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে ‘হাঁস-বাশ’ ও ‘হিদল শুঁটকি’ উন্নতম। কচিবাশের কুচি ও হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরী করা হয় ‘হাঁস-বাশ’ খাবার। আর হিদল বা চ্যাপা শুঁটকি, পাঁচফোড়ন ও মশলা দিয়ে তৈরী করা হয় এই ‘হিদল শুঁটকি’ খাবার। এই শুটকিতে অসম্ভব ঝাল দেওয়া হয়, তাতে খেতে যেন আরও বেশি ভালো লাগে।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ