প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২২, ০১:১৯ এএম
মহেশখালীর পানের বিশেষত্ব হচ্ছে এর মিষ্টি স্বাদ। মহেশখালীর মিষ্টি পান সারা দেশে বিখ্যাত। মহেশখালীর মিষ্টি পান শুধু এ দ্বীপ নয়, বাংলাদেশে অতিথি আপ্যায়নের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলেই ফোকগান শিল্পী শেফালী ঘোষ গেয়েছেন- ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পান খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম...।’ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রুনা লায়লার কন্ঠে শোনা যায়- ’পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম, কেউ বন্ধু হায় তো হইলো না।’
আরও পড়ুনঃ বরিশালের প্রসিদ্ধ আমড়া
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী। এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম সুপ্রাচীণ ও ঐতিহ্যবাহী পেশা পান চাষ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এর ভূমি পান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মহেশখালীর পানের বিশেষত্ব হল তার মিষ্টি স্বাদ, যার কারণে এই পান সারাদেশে বিখ্যাত।
মিষ্টি পান ছাড়াও এ দ্বীপে কিছু পরিমানে সাচি পানের চাষ করা হয়। পান চাষের জন্য বিশেষ দক্ষতা ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।পান ক্ষেতকে বলা হয় পান বরজ। মহেশখালীর পানের বরজ দু’ধরণের-পাহাড়ি বরজ ও বিল বরজ। এ দ্বীপের প্রায় ১৪০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে প্রায় ০৮(আট) হাজার পান বরজ আছে। পান চাষির সংখ্যা প্রায় ১৩(তের) হাজার। উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা। জমির শ্রেণি অনুসারে পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে পান চাষ দুই/তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে/জুনে শেষ হয়। অপরদিকে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পান চাষ হয় বছরের যে কোন সময়। এমনটাই জানান স্থানীয় পানচাষিরা।
পান চাষের প্রধান ঝুঁকি অতি বৃষ্টি। সেপ্টেম্বরে শেষ বর্ষা অর্থাৎ পান চাষ মৌসুমের শুরুতে দেখা যায় বহু বরজ নষ্ট হয়ে যায়। ২০-২৫ শতক পরিমাণ জমিতে একটি পানের বরজ প্রস্তুতে ব্যয় হয় লক্ষাধিক টাকা। বৃষ্টির মাত্রা অধিক হলে চাষিরা নিশ্চিত লোকসানে পড়ে।
সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় পানের হাট বসে থাকে। কক্সবাজারের চকরিয়া, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, পটিয়া, বাঁশখালী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যপারিরা এসব বাজার থেকে পান সংগ্রহ করে থাকে। তারপর ট্রাক বোঝাই করে পাঠিয়ে দেয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এসব পাইকারি বাজারে পানের আকার ভেদে প্রতি বিরা বিক্রি হয় ৮০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী
বাংলাদেশে উৎপাদিত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজালী, মাঘি, মহানলী, চেরফুলী, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি, প্রভৃতি জাতের মধ্যে মহেশখালীর মিষ্টি পান উল্লেখযোগ্য।
এক সময় মহেশখালীর মিষ্টি পান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হত। অধিকন্তু, এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। কারও কারও মতে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশও বাদ যায় না। সমগ্র বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ মিষ্টি পান মহেশখালী দ্বীপে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
সাজেদ/