প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ১১:৫৯ পিএম
ভোজন রসিক হিসেবে আদিকাল থেকেই বাঙ্গালীর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তার ওপর খাবারের মেন্য্যুতে যদি থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী? তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
প্রায় একশ’ বছর আগে লোভনীয় খাবারের তালিকায় এই নামটি যোগ করেছিলেন মহাদেব পাঁড়ে। তার পর থেকে দীর্ঘ সময় একই জনপ্রিয়তা পেয়েছে খাবারটি। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ‘ছানামুখী’-এর সুখ্যাতি বৃটিশ রাজত্বকাল হতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বৃটিশ কর্মকর্তা থেকে আমজনতা সবাই তৃপ্ত এর স্বাদে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখনো পছন্দের খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতে আসে ছানামুখীর নাম।
আরও পড়ুনঃ বরিশালের প্রসিদ্ধ আমড়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যেসব খাবার বিখ্যাত, তার একটি ছানামুখী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টির সুনামের পেছনে যে ব্যক্তির নাম জড়িত তিনি হলেন মহাদেব পাঁড়ে। তাঁর জন্ম স্থান কাশীধামে। তাঁর বড় ভাই দুর্গা প্রসাদ কিশোর মহাদেবকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। বড় ভাই এর মিষ্টির দোকানে মিষ্টি তৈরী শুরু করেন বালক মহাদেব। কিন্তু অসময়ে বড় ভাই দুর্গা প্রসাদ পরলোক গমন করেন। নিরাশ্রয় হয়ে মহাদেব বেড়িয়ে পড়েন নিরুদ্দেশে। অবশেষে এলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। শতাধিক বছর পূর্বে তখন শহরের মেড্ডার শিবরাম মোদকের একটি মিষ্টির দোকান ছিল। তিনি মহাদেবকে আশ্রয় দিলেন। মহাদেব আসার পর শিবরামের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর সময় শিবরাম তাঁর মিষ্টির দোকানটি মহাদেবকে দিয়ে যান।
বাইরে থেকে শুকনো। কামড় বসালেই ভেতরের হালকা রস মুখে আনে তৃপ্তি। ছানামুখী তৈরিতে ব্যবহার হয় দুধের ছানা, চিনি, তেজপাতা, এলাচ, আইসিং সুগার। সাধারণত ছয় কেজি ছানামুখী তৈরি করতে সাধারণত ৪০ লিটার দুধ প্রয়োজন। দুধের ছানা তৈরি করে তা থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরাতে হয়। এরপর শুকনো ছানাকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রাখতে হয় ফ্রিজে। এতে ছানা শক্ত হয়ে যায়। শক্ত ছানাকে ছোট ছোট চার কোনা আকারে কেটে নেয়া হয়। চাইলে গোল বা ইচ্ছে মতো অন্য আকারও দেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ নমরুদের মৃত্যু দুঃসহ যন্ত্রণায়
এরপর একটি প্যানে চিনি, পানি ও এলাচ দিয়ে মাঝারি আঁচে চুলায় দিয়ে ফুটিয়ে সিরা তৈরি করে নিতে হবে। সিরা সঠিক ভাবে ঘন হয়ে এলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। এবার ছানার টুকরোগুলো ছেড়ে দিতে হবে সিরাতে। চার-পাঁচ মিনিট আস্তে আস্তে নাড়ার পর যখন ছানাগুলো উপরে ভেসে উঠলে তা নামিয়ে নিতে হবে। এরপর আইসিং সুগারের ওপর গড়িয়ে রেখে দিতে হবে। ঠাণ্ডা হলে খেতে হবে অথবা পরিবেশন করতে হবে।
এক সময় দেখা যাবে, ছানার গায়ে চিনি সুন্দরভাবে লেগে গেছে। ভাল করে জ্বাল দেয়ার কারণে ছানার ভেতরে কিছুটা রস ঢুকে গেছে। বাইরে চিনির রস শুকিয়ে লেগে থাকলেও ভেতরের অংশ খানিকটা ভেজাই থাকবে।
ছানার তৈরি মিষ্টিটি চার কোনা, ক্ষুদ্রাকার ও শক্ত। এর ওপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপ থাকে। খেতে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রতি কেজি ছানামুখী বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায়।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও এর কদর কমাতে পারেনি। অবরুদ্ধ সময়েও বিক্রি বন্ধ নয়। করোনা মহামারির আগে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার ছানামুখী বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার।
ছানামুখীর জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে শহরের ভোলাগিরি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, ভোলানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আনন্দময়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আদর্শ মাতৃ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।
সাজেদ/