• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বরিশালের প্রসিদ্ধ আমড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২২, ১১:১৫ পিএম

বরিশালের প্রসিদ্ধ আমড়া

বরিশালের আমড়া

ফিচার ডেস্ক

বরিশালের আমড়া সারাদেশে প্রসিদ্ধ। আমড়া বাঙালির অতি প্রিয় একটি ফলের নাম। টক-মিষ্টি মিশ্রণে ভিন্ন এক স্বাদ। কচি অবস্থায় টক। পরিপক্ক হলে খেতে বেশ লাগে। পাকা ফল খুবই মিষ্টি। আমড়ার সিংহভাগ কাঁচা খাওয়া হলেও ভর্তা, আচার, চাটনি আর পরিপক্ব ফল দিয়ে তৈরি করা যায় জুস, জেলি এবং মোরব্বার মতো লোভনীয় খাবার। গ্রামাঞ্চলের কেউ কেউ গোশতের সাথে আমড়া রেঁধে খান। ডালের সাথেও খাওয়া যায়। আমড়ার শাঁস সাদা। পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে। যে কারণে একে গোল্ডেন আপেল বলে।

মাঘ-ফাল্গুনে আমড়ার মুকুল আসে। এর পরে ফল। কচি অবস্থায় ফলের বিচি নরম থাকে। পরিপক্ক হলে আঁটি বেশ শক্ত হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণে ফল পাকে। পাকা ফলের গন্ধ চমৎকার। আমড়া সারা দেশেই চাষ করা যায়। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানির জন্য এর ফলন ও গুণগতমান কাঙ্খিত হয়।

আরও পড়ুনঃ মানব আশ্রয়ে দিঘিতে পাখির কলরব

বরিশালের আমড়া নামকরা হিসেবে জানলেও আসলে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিকে (নেছারাবাদ) আমড়ার রাজধানী বলা যায়। কারণ, ওখানকার ফলন হয় সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনায়ও আমড়া ভালো জন্মে।

বাংলাদেশে দু’প্রজাতির আমড়া চাষ হয়। দেশি এবং বিলাতি। বিলাতি আমড়ার অপর নাম বরিশালের আমড়া। দেশি আমড়া খেতে টক, বিচি বড়। বিলাতি আমড়া খেতে মিষ্টি, বিচিও ছোট। ভালো ফলনের জন্য আমড়ার উচ্চফলনশীল জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি আমড়া-১ এবং বারি আমড়া-২।

আরও পড়ুনঃ পবিত্র কুরআনের স্মৃতিময় পাণ্ডুলিপি

 বারি আমড়া-১ বারোমাসি। গাছ বামনাকৃতির হয়। তাই বাড়ির ছাদেও লাগানো যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। নাম এফটিআইপি বাউ আমড়া-১।

ইউরোপে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বরিশালের আমড়া!

আমড়া পুষ্টিগুণে যেমন টইটম্বুর, তেমনি ভেষজগুণও যথেষ্ট আছে। আমড়ায় ভিটামিন-সি’র পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লৌহ। বাচ্চা থেকে বড়রা পর্যন্ত সকলেই নানা রকম লৌহস্বল্পতা রোগে ভুগে। লৌহস্বল্পতাজনিত সকল রোগে লৌহসমৃদ্ধ অন্য খাবারের পাশাপাশি আমড়া খেলে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

বাংলার ফল - আমড়া - mohdfiendblog‍‍`s bangla blog

কফ ও পিত্ত নিবারণের পাশাপাশি মুখে রুচি আনা এবং কন্ঠস্বর পরিষ্কারে এর ভূমিকা রয়েছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, এমনকি ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুকে প্রতিরোধ করে। দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখে। দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত ও পুঁজপড়া বাঁধা দেয়। স্ট্রোক এবং হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে। পেকটিনজাতীয় আঁশ থাকায় বদহজম, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্যে দূরীকরণে সহায়তা করে। মুখের রুচি বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় আমড়া ক্যান্সার প্রতিরোধক। 

আরও পড়ুনঃ নমরুদের মৃত্যু দুঃসহ যন্ত্রণায়

ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। রক্ত আমাশয় হলে আধা কাপ পানিতে ৩/৪ গ্রাম আমড়ার কষ, সেই সাথে ১ চা-চামচ গাছের রস এবং একটু চিনি মিশিয়ে খেতে হবে। ব্রণ, ফুস্কুড়ি কমাতে এবং ত্বক মোলায়েম ও উজ্জ¦ল রাখতে এর অবদান বেশ। 

বরিশালে আমড়ার বাম্পার ফলন

আমড়ার পাতা, ছাল, শিকড় এবং বীজে ঔষষিগুণ আছে। পাতার তৈরি ‘চা’ জ্বর ও শরীরের ব্যথা দূর হয়। চা বানানোর জন্য পাতাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকানোর পর গুঁড়ো করে ব্যবহার করতে হবে। গাছের ছাল ছত্রাকজনিত সংক্রমণ প্রতিহত করার উপাদান রয়েছে। ফলের বীজ উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর শিকড় প্রজননজনিত রোগ নিরাময়ে অবদান রয়েছে। ভেষজবিদদের মতে, আমড়ায় গর্ভপাত হওয়ার উপাদান থাকায় গর্ভবতী নারীদের এ ফল খাওয়া নিষেধ। ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা আমড়া খেতে পারবেন। পাকা ফল নয়।

 

সাজেদ/

 

আর্কাইভ