• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানব আশ্রয়ে দিঘিতে পাখির কলরব

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০৪:২৫ পিএম

মানব আশ্রয়ে দিঘিতে পাখির কলরব

ফিচার ডেস্ক

হঠাৎ করে কারো চোখ পড়লে মনে হবে, দিঘিজুড়ে ভেসে আছে পোষা হাঁসের দল। খয়েরি হাঁসের ঝাঁক দিঘির পানিতে সাঁতার কাটছে। পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। পালক নেড়ে ঝরাছে পানি। কচুরিপানার মধ্যে এদিক-ওদিক লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি করছে। কিন্তু এরা পোষা নয়, এরা পরিযায়ী পাখির দল। পুরো শীতকাল এখানেই তাদের বসবাস।

আরও পড়ুনঃ যৌনতা ছাড়াই পৃথিবীতে হাজার বছর টিকে আছে এই প্রাণী

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের রামভদ্রপুর গ্রামে শের খাঁ দিঘিজুড়ে পরিযায়ী পাখির রাজত্ব। সারাক্ষণ পাখির কিচিরমিচির ও কলরবে মুখর আশপাশ এলাকা। গ্রামের মানুষ পরম মমতা, ভালোবাসায় এসব পাখি আগলে রাখছেন। গ্রামবাসীর নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে আনন্দে দিন কাটছে পরিযায়ী পাখিগুলোর।
টেংরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. টিপু খান বলেন, এখানে পাখিরা নিরাপদে আছে। রাস্তার পাশে হলেও কেউ ডিস্টার্ব করে না। যারা শিকারে উৎসাহী, তাদের নিষেধ করা আছে।

দিঘির কচুরিপানায় পাখিরা বাসা বুনে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। এরপর একসময় উড়ে যায়। এখানে দু-তিন জাতের হাঁস আসে। আছে পানকৌড়িও। মঙ্গলবার বিকেলে মৌলভীবাজারের রাজনগরে রামভদ্রপুরে

দিঘির কচুরিপানায় পাখিরা বাসা বুনে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। এরপর একসময় উড়ে যায়। এখানে দু-তিন জাতের হাঁস আসে। আছে পানকৌড়িও। 

মঙ্গলবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে। শের খাঁ দিঘির কাছে যেতেই শোনা গেল পাখিদের ডাক। অনেক হাঁস দিঘির জলে সাঁতার কাটছে। ভেসে আছে। কিছু হাঁস দিঘিতে ভেসে থাকা কচুরিপানার ফাঁকে ফাঁকে আছে বসে। শান্ত ও নিশ্চুপ বসে থাকার প্রাণী এরা নয়। এরা পরিযায়ী পাখি। একটু পরপরই কারণে-অকারণে দীঘির নানা দিকে উড়ছে, ঘুরছে। কখনো একটি-দুটি পাখি উড়ছে, আবার কখনো উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। দিঘির ওপর মালার মতো চক্কর দিয়ে আবার দিঘির জলে নেমে আসে পাখির দল। সারাক্ষণ যেন খুনসুটিতে মেতে থাকে পাখিরা।

আরও পড়ুনঃ টেকসই উন্নয়নের জন্য উদ্যোক্তা হওয়া প্রয়োজন

দিঘির পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ দিয়ে গেছে টেংরা-তারাপাশা গ্রামীণ পাকা সড়ক। দিঘির চারপাশেই গ্রামের বাড়িঘর। এখানে অনেক বছর ধরেই গ্রামবাসী ও পরিযায়ী পাখির সহাবস্থান তৈরি হয়েছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। দিঘির পাড়েই বাড়ি সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া নাজমুস ছাকিবদের। মঙ্গলবার বিকেলে ছাকিব বলে, ‘ছোটবেলা থেকে আমি এই পাখিদের দেখছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডাকাডাকি করে, ওড়াউড়ি করে। কেউ এখানে পাখি মারে না। এখানে পাখি মারা নিষেধ।’

আকাশে উড়ছে পরিযায়ী পাখির দল। মঙ্গলবার বিকেলে মৌলভীবাজারের রাজনগরে রামভদ্রপুরে

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামভদ্রপুর গ্রামের শের খাঁ দিঘিটি বেশ পুরোনো। ৮ থেকে ১০ বছর আগের কথা। হঠাৎ করেই দিঘিতে অল্প কিছু পরিযায়ী পাখি আসে। সংখ্যায় ৮-১০টি হবে। প্রথম প্রথম কেউ খেয়াল করেননি। পাখিরা এসেছে, শীতকাল কাটিয়ে আবার চলেও গেছে। এভাবে দু-তিন বছর গেছে। বছর সাতেক আগে পাখির সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসে দিঘিতে। এরপর থেকে প্রতিবছরই পাখির সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিবছরই একটু একটু করে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। শুরুর দিকে পাখিদের বিদায় করার ভাবনা ছিল দিঘির মালিকদের। দু-একজন পাখি শিকারের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে মত বদলান সবাই। পাখিদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসেন গ্রামের মানুষও। গ্রামের কেউ যেমন পাখি শিকার করেন না, তেমনি অন্যদেরও মারতে দেন না। সবাই মিলে পাখিদের পাহারা দেন। কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি করতে না পারে, এ জন্য সবাই সতর্ক। এখানে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাখিরা থাকে। দিঘির কচুরিপানায় তারা বাসা বুনে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। তারপর একসময় উড়ে যায়। এখানে দু-তিন জাতের হাঁস আসে। আছে পানকৌড়িও।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ওখানে (রামভদ্রপুরে) আমরা পাখি সম্পর্কে আরও সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেব। গ্রামের মানুষকে নিয়ে বৈঠক করব। প্রচারপত্র বিতরণ করব। অনেকে তো জানে না পাখি শিকার নিষিদ্ধ। এতে জেল-জরিমানা হতে পারে।’

শের খাঁ দিঘিতে পরিযায়ী পাখির মেলা। মঙ্গলবার বিকেলে মৌলভীবাজারের রাজনগরে রামভদ্রপুরে

দিঘিটির অংশীদারদের একজন অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাদিক আহমদ। তিনি বলেন, সাত বছর থেকে পাখির উপস্থিতি বেড়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন পুকুরে মাছ খেয়ে ফেলবে। পরে দেখলেন মাছ খায় না। এরপর প্রতিবছর পাখিও বাড়তে থাকে। পাখি চলে যেতে পারে, এ জন্য কচুরিপানা পরিষ্কার করতে চাইলে গ্রামের মানুষই বাধা দেন। সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে অনেক মানুষ গাড়ি থামিয়ে পাখি দেখেন। ছবি তোলেন।

আরও পড়ুনঃ ভোর হতেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে বিএনপিকর্মীরা

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে যতটুকু প্রশাসনিক তদারকি দরকার, তাঁরা সেই তদারকি করবেন।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ