• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নমরুদের মৃত্যু দুঃসহ যন্ত্রণায়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২২, ১১:০৪ পিএম

নমরুদের মৃত্যু দুঃসহ যন্ত্রণায়

ফিচার ডেস্ক

যুগে যুগে তাওহীদের বাণী প্রচার করতে গিয়ে প্রত্যেক নবী-রাসূলগণ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। তাদেরকে খোদাদ্রোহী সব নাফরমানদের হাতে লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হতে হয়েছে। এসব পাপিষ্ঠ অহংকারীদের শেষ পরিণতি হয়েছে ধ্বংস। এরকমই একজন অহংকারী খোদাদ্রোহী বাদশা ছিলেন নমরুদ। তার সাহস আর অহংকারের সীমা এতটাই লঙ্ঘন হয়েছিল যে খোদা মশা দিয়ে তার পতন ঘটিয়েছিলেন।

হযরত নূহ (আ.)-এর মৃত্যুর পর মিসরের ৪২টি রাজ্যের রাজ্যপতিদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নমরুদকে ‘রাজার রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই খ্যাতি পাওয়ার পর তার মানসিকতার পরিবর্তন আসে এবং নিজেকে দেবতা বলে দাবি করে। একই সঙ্গে প্রজাদের পূজা করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে প্রজারা তাকে উপাস্যরূপে তার পূজা ও অর্চনা শুরু করে।

হজরত ইবরাহীম (আঃ) ও নমরুদের কাহিনী - লা জবাব নমরুদ - আব্দুল মান্নান তালিব -  Bangla Blog

আরও পড়ুন: অনুমতি মিলেছে, গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ: ডা. জাহিদ
হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ:
বাল্যকাল থেকেই হযরত ইব্রাহিম (আ.) প্রকৃতি এবং স্রষ্টাকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। তার গোত্রের লোকজন দেব-দেবীর পূজা করতো। একদিন তিনি দেব-দেবীর সব মূর্তি ভেঙ্গে দেন এবং বলেন- যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনা তারা অন্যদের কিভাবে রক্ষা করবে। এর ফলে, ইব্রাহিম (আ.)-কে বন্দী করে নমরুদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়।

PYTHEYA: Nimrod: এক স্বেচ্ছাচারী নরপতির কাহিনী।

দরবারে ফেরাউন তাকে জিজ্ঞেস করেন- হে ইব্রাহিম, তোমার প্রতিপালক কে ? জবাবে ইব্রাহিম (আ.) বলেন- যিনি এক, যার কোনো শরীক নেই, যিনি আরশের অধিপতি। জবাব শুনে নমরুদ রেগে গিয়ে 
তার লোকজনকে বললো, ‘একটি অগ্নিকুন্ড তৈরি কর; আর হযরত ইব্রাহিম (আ.) কে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দাও। আর পাহারা দাও যেন তাকে কেউ সাহায্য করতে না আসে।

লোকেরা একজায়গায় আগুন জ্বালানোর উপকরণ যোগাড় করে সেগুলোতে তৈল ও ঘি ঢেলে অগ্নিসংযোগ করলো। সাত দিন পর পূর্ণ অগ্নিকুন্ড তৈরি হলো। কিন্তু ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য কেউ কাছেও পৌঁছাতে পারছিল না। এসময় ইবলিস পর্যটকের বেশে সেখানে পৌছে চড়ক গাছ তৈরির পরামর্শ দিলো। এই উদ্যোগকে সফল করতে ইবলিস জনগণকে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছিল। তার পরামর্শে একটা চড়ক গাছ তৈরি করা হয়।

পৃথিবীর শাসক নমরুদের ভয়ংকর পরিণতি (শেষ অংশ) – coxsbazarvision.com

আরও পড়ুন: টাকাওয়ালাদের জয় জয়কার চারিদিকে: রাষ্ট্রপতি

কথিত আছে, চড়ক গাছের সাহায্যেও হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে নিক্ষেপ করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ হযরত জিব্রাইল (আ.) চড়ক ঘোরানোর সময় বাঁধা সৃষ্টি করছিল। তখন আবার ইবলিসের পরামর্শে চড়ক ঘিরে নগ্ন নারী নৃত্যের জন্য। তাই করা হয়। এতে জিব্রাইল (আ.) সেখান থেকে সরে গেলে ইব্রাহিম (আ.)-কে নিক্ষেপ করে তারা।

Las Verdades de tres corazones y los secretos espirituales del ayuno¡ • Nur  Muhammad Realities Biography Islam Allah Haqiqat al Muhammadia

হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষিপ্ত করার সময় হযরত জিব্রাইল (আ.) তাকে জিজ্ঞাসা করলো- তুমি কি আমার সাহায্য চাও? জবাবে ইব্রাহিম (আ.) বললেন, আমার কেবল আল্লাহর সাহায্য দরকার। তখনই মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে অগ্নি, তুমি হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জন্যে শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (৩৭:৯৭) 
 

হযরত ইব্রাহিম (আ.) চল্লিশ দিন পর্যন্ত অগ্নিকুন্ডে ছিলেন। এরপরেও লোকেরা দেখলো ইব্রাহিম (আ.) সম্পূর্ণ সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় অগ্নিকুন্ড থেকে বেরিয়ে এসেছে। এতে ইব্রাহিম (আ.) এর সম্প্রদায়ও হতবাক হয়ে পড়েছিল।

নমরুদের মৃত্যু:
নমরুদ এক সময় আল্লাহর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিলো। হযরত ইবরাহিম (আ.) দূরে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন। দূরে কালো রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছিল, যখন সেটা কাছে চলে এলো, লাখ লাখ মশার গুনগুন শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বললো- এগুলো তো মশা! তুচ্ছ প্রাণী, তা-ও আবার নিরস্ত্র। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সৈন্যের মাথার ওপর মশা অবস্থান নিল। এরপর মশাগুলো তাদের নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে দংশন করা শুরু করলো। এরপর সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো। জ্ঞান হারিয়ে তীরন্দাজরা ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চারপাশে তরবারি চালানোর ফলে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই হত্যা করে ফেলে।

আমরা কি খোদাদ্রোহী নমরুদ? | শব্দনীড়

মশার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে আশ্রয় নেয়। এ সময় একটি দুর্বল লেংড়া মশা তাকে তাড়া করে এবং কিছুক্ষণ মাথার চারপাশে ঘুরে নাসিকাপথে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। এরপর মগজে দংশন করা শুরু করে। নমরুদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উন্মাদের মতো দিশাহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করে। অবশেষে মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করে নমরুদ।

যেভাবে পতন হয়েছিল নমরুদের - প্রবাসীর দিগন্ত
সুদীর্ঘ ৪০ বছর তাকে এই দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মাথার আঘাতের ব্যথায় নমরুদের মৃত্যু হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা. ৬৮৬)
নমরুদকে নিয়ে আরবি ভাষায় একটি বই রয়েছে। বইটির নাম ‘আল-মালিকুন নামরুদ : আওয়ালু জাবাবারাতিল আরদ্বি অর্থাৎ বাদশাহ নমরুদ, যিনি পৃথিবীর প্রথম স্বৈরশাসক।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ