• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী

মুক্তাগাছার মণ্ডা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২, ১১:০১ পিএম

মুক্তাগাছার মণ্ডা

মুক্তাগাছার মণ্ডা

ফিচার ডেস্ক

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় তৈরি হওয়ায় এ মিষ্টির নামের পাশে জড়িয়ে রয়েছে রাজা-জমিদারদের স্মৃতিবাহী মুক্তাগাছার নাম। ময়মনসিংহের মিষ্টির ঐতিহ্য এ মণ্ডা। যুগের পর যুগ ধরে এ মণ্ডা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সমাদৃত।


বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের মুক্তাগাছা উপজেলা প্রাচীনকাল থেকেই মণ্ডা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ। মণ্ডা একটি গোল চ্যাপ্টা আকৃতির বাঙালি মিষ্টান্ন। দেখতে অনেকটা পেঁড়ার মত। "‍মিঠাই-মণ্ডা" একটি বহুল প্রচলিত শব্দযুগল।

আরও পড়ুনঃ জ্বীনরা কোথায় থাকে, কী খায়?

 

স্বপ্নে পাওয়া‍‍` রেসিপিতে দুই‍‍`শ বছর ধরে মিষ্টিপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে মুক্তাগাছার  মন্ডা
এ এলাকায় মণ্ডা তৈরির অন্যতম কারিগর শ্রী রবীন্দ্র নাথ পাল ও রথীন্দ্র নাথ পাল। এ দুজন সুস্বাদু মণ্ডার স্বাপ্নিক ও প্রথম কারিগর গোপাল পালের পঞ্চম বংশধর। প্রক্রিয়াজাত করার পর দানাদার ও সামান্য আঠালো এ মণ্ডা মোড়ানো হয় ওয়েল পেপারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা যখন কোথাও যান তখন উপহার হিসেবে এ মণ্ডা নিয়ে যান। আর বাইরের লোক ময়মনসিংহে এলে লোভনীয় মুক্তাগাছার মণ্ডার স্বাদ নিতে ভোলেন না। মুক্তাগাছায় জমিদারী পরগণায় রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য।

আরও পড়ুনঃ রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


অনেক কিছুই কালপরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে গেলেও দিনকে দিন ঐতিহ্য হিসেবে টিকে রয়েছে দেশ সেরা মিষ্টান্ন মণ্ডা। উপমহাদেশেও রয়েছে এর নাম ও পরিচিতি।

দুই শ‍‍` বছরের ঐতিহ্যবাহী মুক্তাগাছার মণ্ডা


ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরের উপজেলা মুক্তাগাছা। এ উপজেলা সদরের মাঝখানে রাজবাড়ির অদূরে এ মণ্ডা তৈরির কারখানা। নাম আদি ও অকৃত্রিম গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মণ্ডার দোকান। এখন থেকে প্রায় ২শ’ বছর আগে ১৮২৪ সালে গোপাল পাল এক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে এ মণ্ডা তৈরির নির্দেশনা ও ফর্মুলা পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে বংশ পরম্পরায় তার উত্তরসূরীরা মণ্ডা তৈরিকে পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে নেন। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ওই সময়ে গোপাল পালের বানানো এ মণ্ডা খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন।


মুক্তাগাছার মণ্ডা এক প্রকার সন্দেশ। চ্যাপ্টা আকৃতির এ মণ্ডা তৈরির ফর্মুলা এখন পর্যন্ত ওই পরিবারটির বাইরে যায়নি। এ মিষ্টান্ন তৈরির কৌশলও বেশ গোপনীয়। বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র ও চমকপ্রদ। একেবারেই নরম এ মণ্ডা মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।


মুক্তাগাছার মন্ডা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়- প্রথমে গরুর দুধকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ছানা তৈরি করা হয়। একটি কাঠের পাত্রে রেখে গরম এ ছানা ঠাণ্ডা করা হয়। পানি ঝরে যাবার পর ছানার সঙ্গে পরিমাণমত চিনির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। ঐ ছানাকে নরম অবস্থাতেই গোল করে একটি বড় মন্ড তৈরি করা হয়। এরপর ঐ মণ্ডকে পরিষ্কার শক্ত কোন স্থানের উপর বিছানো কাপড়ের উপর হাত দিয়ে ছুঁড়ে আছাড় মেরে মেরে চ্যাপ্টা করা হয়। 

মুক্তাগাছার মণ্ডা

পরে তা ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায় ও তখন কাপড় থেকে খুলে নেওয়া হয়। তাই মন্ডের যেই অংশ নিচে থাকে, তা সোজা হয়, আর অন্য দিকগুলো একটু উঁচু হয়। কোণার গুলো একটু ফাটা ফাটা হয়। মন্ডার রং সাদা বা খয়েরি হয় এর ছানার রং-এর উপর ভিত্তি করে। চিনিকে বেশি গরম করলে পুড়ে বা ক্যারামেলাইজ হয়ে খয়েরী রং ধরে। মণ্ডা সাধারণত কাগজে মুড়িয়ে বিক্রি করা হত, তবে আজকাল মিষ্টির প্যাকেটে করেই বিক্রি করা হয়।
 

সাজেদ/

আর্কাইভ