প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৭:৫৯ পিএম
আরবিতে জ্বীন শব্দের অর্থ গুপ্ত, আড়াল, অন্তরাল, পর্দা, গোপন, অদৃশ্য, লুকায়িত, আবৃত প্রভৃতি। আর যেহেতু এ জাতি মানুষের চক্ষুর অন্তরালে থাকে, তাই তাদেরকে জ্বীন বলে। শয়তানরাও হল একপ্রকার জ্বীন, যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত।
কুরআন শরীফ ও সহীহ হাদীসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের ন্যায় আল্লাহ তাআলার অন্যতম আরেকটি হলো- সৃষ্টি জ্বীন জাতি। যারা পৃথিবীতে মানব জাতি আগমনের ২০০০ বছর পূর্ব থেকেই ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। ফেরেশতারা আলোর তৈরি, জ্বীনরা আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে তৈরি। জ্বীনদের বিবেক, বুদ্ধি ও অনুভূতি শক্তি আছে। তাদের আছে ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে রয়েছে ভালো জ্বীন ও মন্দ জ্বীন। সাধারণত মানুষের চোখে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। কিন্তু, জ্বীনরা মানুষদেরকে দেখতে পায়। জ্বীনরা মানুষের মতো মুসলিম ও অমুসলিম জাতিতে বিভক্ত। তাদের মধ্যেও ঈমানদার এবং কাফির ভেদাভেদ রয়েছে। জ্বীনেরা মানুষের মতো পুরুষ ও স্ত্রী জাতিতে বিভক্ত।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, জ্বীন জাতিকে মানুষের পূর্বেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা কোরআনে উল্লেখ করেছেন: ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে। আর এর পূর্বে জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি ধূম্রহীন বিশুদ্ধ অগ্নি হতে।’ -(সূরা আল হিজ্বর, আয়াত: ২৬-২৭) জ্বীন জগৎ একটি পৃথক জগৎ। সে জগৎ মনুষ্য জগৎ ও ফেরেশতা জগৎ থেকে আলাদা। তবে জ্বীন ও ইনসানের মধ্যে কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন জ্ঞান-বুদ্ধি ও ভালো-মন্দ নির্বাচন করে চলার ক্ষমতা ইত্যাদি। অবশ্য বহু বিষয়ে জ্বীন মানুষ থেকে পৃথক। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, মানুষের সৃষ্টি-উপাদান ও জ্বীনের সৃষ্টি-উপাদানের ভিন্নতা ।
ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী জ্বীনেরা মানুষের আকার ধারণ করতে পারে এবং মানুষের মতো কথা বলতে পারে। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর আকারও ধারণ করতে পারে বলে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী জ্বীনেরা মানুষের আকার ধারণ করতে পারে এবং মানুষের মতো কথা বলতে পারে। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর আকারও ধারণ করতে পারে বলে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে।
গঠন অনুযায়ী তিন ধরনের জ্বীন আছে- এক প্রকারের জ্বীন পাখার মাধ্যমে বাতাসে ওড়ে। এক প্রকারের জ্বীন সাপ, বিচ্ছু, পোকা-মাকড় এবং মাকড়শার আকারে থাকে। শেষ প্রকারের জ্বীনরা সাধারণভাবে থাকে এবং চলাচল করে।
মানুষের বসবাসের স্থানে সাধারণত জ্বীন থাকে না। তারা মানুষের পরিত্যক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। তাদের অধিকাংশই মানুষের কাছ থেকে দুরে নির্জন এলাকায় বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতির জ্বীন মানুষের সাথে লোকালয়ে থাকে। যেমনঃ ক্বারীন জ্বীন।
মানুষের বসবাসের স্থানে সাধারণত জ্বীন থাকে না। তারা মানুষের পরিত্যক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। তাদের অধিকাংশই মানুষের কাছ থেকে দূরে নির্জন এলাকায় বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতির জ্বীন মানুষের সাথে লোকালয়ে থাকে। যেমনঃ ক্বারীন জ্বীন।
এক হাদিস থেকে জানা যায়, জ্বীনেরা নোংরা ও গন্ধময় জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, যেখানে মানুষরা ময়লা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখে। পায়খানা এবং প্রস্রাব করার জায়গাগুলোতে জ্বীনদের অবাধ বিচরণ। জায়েদ বিন আরকাম বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, রাসুল (সঃ) বলেছেন-
“এই জায়গাগুলোতে (পায়খানা এবং প্রস্রাব করার জায়গা) জ্বীন এবং শয়তানরা অবাধে বিচরণ করে। তোমাদের মধ্যে যেই এই স্থানগুলোতে যাবে, সে যেন বলে- ‘আমি আল্লাহর কাছে পুরুষ এবং মহিলা শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।” (আহমেদ ইবনে হাম্বল, ‘পবিত্রতা’ খন্ড, ৪/৩৬৯)
বাসস্থানের বেলায় জ্বীনেরা পছন্দ করে ১. বায়তুল খালা, ২. পশুঘর, ৩. নোংরা নালা, জলাশয়, ৪. প্রাচীন বৃক্ষ, ৫. বৃহৎ ছায়াযুক্ত বৃক্ষ, ৬. বড় গাছ (এক প্রকারের বৃক্ষ যাতে লাল বর্ণের দড়ির ন্যায় অতি সরু মূল বের হয় যার নাম বটবৃক্ষ) ৮. আনার বৃক্ষ, ৯. ধ্বংসস্তপ ও বিরানভূমি, ১০. নদী-নালা, ১১. শ্মশান ও বিরান এলাকা, ১২. গহীন বন জঙ্গল, ১৩. সামুদ্রিক দ্বীপ, ১৪. পর্বত, ১৫. দুই পর্বতের মধ্যবর্তী উপত্যকা, ১৬. অনাবাদী গৃহ, ১৭. যেসব গৃহ প্রায় বন্ধ থাকে, ১৮. বিভিন্ন স্থলজ সৃষ্টি যেমন সাপ-ইদুর প্রভৃতির গর্তে, ১৯. কাফেরদের পূজার স্থানসমূহ (মন্দির, গির্জা প্রভৃতি), ২০. আবাদি ভূমির মধ্যবর্তী খালি স্থানসমূহ, ২১. পানি বা জলাশয়, ২২. গন্ধ নোংরা পানির ঝিল, ২৩. ভূমির নিম্নাঞ্চল। এসব স্থান ছাড়াও গ্রামীণ এলাকায় এমন বহু স্থান আছে, যেখানে এ অদৃশ্য অপশক্তির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।
মানুষসহ অন্য প্রাণীরা যেমন খাওয়াদাওয়া করে, তদ্রূপ জ্বীনরাও খাওয়াদাওয়াসহ অন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে থাকে। আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর হাড়-হাড্ডিই হলো জ্বীনের খাবার। জ্বীনের খাবার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খায়। এছাড়া হাড়, গোবর ইত্যাদি খায়। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সঃ) বলেছেন-
“হাড় এবং গোবর জ্বীনদের খাবার। নসীবাঈন শহরের জ্বীনদের একটি দল আমার সাথে দেখা করতে আসে। কত বিনয়ী ছিল তাঁরা। তাঁরা আমার কাছে মানুষের খাবারের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে জানতে চায়। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে তাঁরা এমন কোন হাড় কিংবা গোবর অতিক্রম করবে না। যা তাঁদের জন্য খাবার যেন না হয়ে যায়।” (বুখারী, ৩৫৭১)
আসমানি কিতাবে যারা বিশ্বাস করে, যেমন—ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান, তারা সবাই জ্বীনের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। পৌত্তলিক, কিছু দার্শনিক ও বস্তুবাদী গবেষক জ্বীনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। দার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফেরেশতা ও জ্বীন রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ভালো চরিত্র ফেরেশতা আর খারাপ চরিত্র জ্বীন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়। তাদের বক্তব্য কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী।
জ্বীনের অস্তিত্ব স্বীকার করা ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ২৬টি সুরায় প্রায় শতাধিকবার জ্বীনের কথা নানা আঙ্গিকে সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। বহু সহীহ হাদিসেও জ্বীনের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। জ্বীনজাতির সৃষ্টি, তাদের ইসলাম গ্রহণ, মানুষের আগে তাদের সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা আর-রাহমানে জ্বীন ও মানুষকে একসঙ্গে সম্বোধন করা হয়েছে। সোলায়মান (আ.)-এর আমলে জ্বীনদের কাজকর্ম করার তথ্য কোরআনে উল্লেখ আছে। জ্বীনজাতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ‘সুরা জ্বীন’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল করেছেন। তাই জ্বীনের অস্তিত্ব অস্বীকার করা কোরআন অস্বীকার করার নামান্তর।
এই পৃথিবীতে তিন ধরনের জ্বীন রয়েছে। এদের মধ্যে ঘুল জ্বীন ( দুষ্ট প্রকৃতির জ্বীন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা জ্বীন (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো), এবং ইফরিত জ্বীন (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জ্বীন আছে যারা জ্বীনদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
এই পৃথিবীতে তিন ধরনের জ্বীন রয়েছে। এদের মধ্যে ঘুল জ্বীন ( দুষ্ট প্রকৃতির জ্বীন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা জ্বীন (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো), এবং ইফরিত জ্বীন (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জ্বীন আছে যারা জ্বীনদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
জ্বীনেরা সূক্ষ্ম, তাই স্থূল মানুষ বা পশু-পাখি জ্বীনদের দেখতে পারে না। তবে কুকুর ও উট এদের হুবহু দেখতে পারে। রাতে কোন অপরিচিত বস্তু বা জীব চোখে না দেখা গেলেও কুকুর কি যেন দেখে ছুটাছুটি ও ঘেউ ঘেউ করলে তাতে জ্বীনের আবির্ভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে।
“যখন রাত নামে (সন্ধ্যার শুরুতে) তোমাদের সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে বারণ কর। কারণ শয়তান এই সময়ে বের হয়। আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরের দরজাগুলো বন্ধ কর। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।” (বুখারী, ১০/৮৮. মুসলিম ১৩/১৮৫)
ঝড়-বাদলের দিনে জ্বীনরা চলতে পারে না। কারণ তারা আগুনের তৈরি বিধায় বৃষ্টির সময় আয়োনাজাইশেন ও বজ্রপাতের তীব্র আলোক ছটায় তাদের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং কোনো ঘরে যদি নির্দিষ্ট কিছু দোয়া-কালাম ও কাঁচা লেবু থাকে, তাহলে ঐ ঘরে জিন প্রবেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন হিজড়া জ্বীনদের সন্তান। জনৈক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো এরকম কিভাবে হতে পারে? তিনি উত্তরে বলেন -আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিষেধ করেছেন যাতে কেউ তার স্ত্রীর সাথে মাসিক চলাকালে সহবাস না করে কারন তখন শয়তান আগে থাকে এবং ঐ শয়তানের দ্বারা ঐ মহিলা গর্ভবতী হয়ে হিজড়া সন্তান প্রসব করে।
জ্বীন জাতির মাঝে নবী রাসূল এসে ছিল কিনা এটা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ। এ ব্যাপারে আল-কোরআনে সূরা আনআমের ১৩০ নং আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেছেন, আমি জ্বীন ও মানুষ উভয়ের মাঝে নবী রাসূল প্রেরন করেছি তাদের মাঝ থেকে যারা তাদের আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছিল । আদম (আঃ) এর আগমনের পূর্বে থেকেই জ্বীনরা পৃথিবীতে বসবাস করতো। ঐ সময় তাদের মাঝেও আল্লাহর বিধি বিধান নাযিল হত। তাই জ্বীনদের মাঝে জ্বীনদের কাছ থেকেই নবী রাসূল এসেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
‘ইবলিস’ – আদম (আঃ) কে ওয়াসওয়াসা দিয়ে যেই জ্বীন আল্লাহর আনুগত্য থেকে তাকে বিচ্যুত করেছিল – তার নাম হচ্ছে ইবলিস। আল্লাহ তাকে সরাসরি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, সে হচ্ছে প্রথম জ্বীন যেমন আদম (আঃ) হচ্ছেন প্রথম মানুষ। আদম (আঃ) কে সিজদা করতে অস্বীকার করে সে আল্লাহর সামনে অহংকার প্রদর্শন করে – এই কারণে সে ‘কাফের’ হয়ে চির জাহান্নামি ও আল্লাহর অভিশপ্রাপ্ত। তার সন্তানদের কেউ ঈমানদার মুসলিম, আবার কেউবা কাফের, তাদের পিতা ইবলিসের অনুসারী। যারা কাফের জ্বীন, তাদেরকে সাধারণভাবে ‘শয়তান’ বলা হয়।
‘খানজাব’ – খানজাব হচ্ছে বিশেষ একপ্রকার জ্বীন, যারা মানুষ যখন সালাতে দাঁড়ায় তাদেরকে নানান রকম চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে নামায থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন করে তুলে। এর ফলে তারা সালাতে ভুল করে, কত রাকাত পড়েছে মনে থাকেনা, কোনটা কি করছে সন্দেহে পড়ে যায়। এর কারণে সওয়াবও কমে যায়।
এজন্য নামাযে কিরাত পড়া শুরু করার আগে “আ`উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম” পড়তে হয়। আ’উযুবিল্ললাহ শুধু প্রথম রাকাতেই পড়তে হয়, এর পরের রাকাতগুলোর শুরুতে পড়তে হয়না।
‘ওলহান’ – এরা হচ্ছে একপ্রকার শয়তান জ্বীন যারা মানুষকে ওযুর সময় ওয়াসওয়াসা দেয়। ওয়াসওয়াসাগ্রস্থ মানুষেরা ওযুতে ভুল করে বেশি, এক কাজ কয়েকবার করে, তবুও মনে সন্দেহ থেকে যায় ওযুর অমুক অঙ্গ ধোয়া হয়েছে কিনা? এরা পানি বেশি অপচয় করে।
‘ক্বারীন’ – ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সঙ্গী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সঙ্গী হিসেবে। এরা সবসময় বান্দার অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এদের কথা উল্লেখ করেছেন সুরাতুল ক্বাফেতে।
জ্বীন মানুষের মতোই, কোথাও সে শক্তিশালী, কোথাও বড় দুর্বল । শয়তান শক্তিশালী হলেও তার চক্রান্তের ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ বলেন: "নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল ।" -(সূরা আন নিসা: ৭৬)
জ্বীন মানুষের মতোই, কোথাও সে শক্তিশালী, কোথাও বড় দুর্বল । শয়তান শক্তিশালী হলেও তার চক্রান্তের ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ বলেন: "নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল ।" -(সূরা আন নিসা: ৭৬)
নেক ঈমানদার লোকদের উপর শয়তানের কোন আধিপত্য নেই । শয়তানের শক্তি ও প্রতিজ্ঞা আছে, সে আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করবে । কিন্তু সকলকে নয় । কিছু লোকের কাছে সে বড় মিসকীন ও দুর্বল । তাদেরকে সে কুফরী ও ভ্রষ্টতার বাধ্য করতে সক্ষম হবে না । চেষ্টা তো করবে, কিন্ত সফল হবে না । কারণ তাদের বুনিয়াদ হবে মজবুত, তাদের ঈমান হবে সুদৃঢ়, তাদের আমল হবে নেক এবং তাদের সহায়ক হবেন খোদ প্রতিপালক।
শয়তানের আধিপত্য কেবল তাদের উপর, যারা তার চিন্তা-চেতনায় এক মতাবলম্বী । যারা স্বেচ্ছায় তার অনুসরণ করে এবং সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতা করে । মহান আল্লাহ্ বলেছেন, "বিভ্রান্তদের মধ্য হতে যারা তোমার (শয়তানের) অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না ।" -(সূরা আল হিজ্বর, আয়াত: ৪২) শয়তান জ্বীন মু`মিন মুসলমানকে দেখে ভয়ে পলায়ন করে । কোন বান্দা যখন ইসলামে পরিপক্বতা লাভ করে। তার ঈমান মর্মমূলে পরিশালীত হয়। মহান আল্লাহর সীমারেখার হিফাযত করে। তখন শয়তান তার সাক্ষাতে ভয় করে এবং তাকে দেখে পলায়ন করে ।
জ্বীন বহুরূপী হলেও স্বপ্নে নবী (সা:) এর রূপ ধারণ করতে পারে না । শয়তানেরা কোন মু`জিযা দেখাতে সক্ষম নয় । মহাকাশে তাদের নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতে পারে না । আল্লাহর নাম নিয়ে বন্ধ দরজা তারা খুলতে পারে না ।
জ্বীনদের ওয়াসওয়াসা ও শয়তানি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন আমল করা যেতে পারে। এই যেমন আয়াতুল কুরসী পাঠ। বলা হয় “যে এই আয়াত (আয়াতুল কুরসী) পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দিবেন এবং কোন পুরুষ এবং নারী জ্বীন-শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না।” (সহিহ বুখারী, ৫০১০)
তাই দেখা যায়, ধর্মীয় ব্যাপারে উদাসীন লোকেরাই জ্বীন ও শয়তানের কুপ্রভাব ও কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে থাকে। হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে, টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পাঠ না করলে দুষ্ট জ্বীনরা তার গোপনাঙ্গ নিয়ে খেলা করে। অনুরূপ খাদ্য গ্রহণের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না পড়লে খারাপ জ্বীন তার খাদ্যে অংশগ্রহণ করে।
মহান আল্লাহ আমাদের জ্বীন ও শয়তানের কুপ্রভাব থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
সাজেদ/