প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৭:৪৫ পিএম
নীল আকাশের মেঘ ফুঁড়ে রূপালি ডানা মেলে দেশের আকাশপথে মানুষের চলাচল এখন সহজতর হয়েছে। আকাশ পথে এই নবদিগন্তের সূচনা করেছে বেসরকারি এয়ারলাইনস। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অনেক পুরনো হলেও এর আসন ও গন্তব্য ছিল হাতে গোনা।
বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের বিমান হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। তাদের সহজ টিকেটিং ব্যবস্থায় যখন-তখন তা মিলছে হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোনের বাটনের আলতো ছোঁয়ায় গন্তব্যের টিকিটটি করা যাচ্ছে নিশ্চিত। সার্বিকভাবে মানসম্পন্ন যাত্রীসেবার বদৌলতে বেসরকারি এয়ারলাইনস এখন আকাশপথের ভরসা।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রীসেবা অনেক ভালো। যাত্রীসেবার প্রথম শর্ত হলো- শিডিউল মতো ফ্লাইট অপারেশন। দেশি এয়ারলাইনসগুলোর অনবোর্ড সার্ভিসও বেশ মানসম্পন্ন। সে কারণেই দিন দিন যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়ছে। আগে যেখানে দিনে একটি ফ্লাইটও চলত না, এখন সেখানে দিনে ১০-১২টি ফ্লাইট চলছে।
বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, ২০১২-১৩ সালে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী ছিলেন সাড়ে ৬ লাখ, ২০১৫ সালে তা হয় সোয়া ৯ লাখ। ২০১৭ সালে যাত্রী বেড়ে হয় সাড়ে ১২ লাখ। আর ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ১৮ লাখ ২১ হাজার। অভ্যন্তরীণ রুটে গত ৬ বছরে যাত্রী বেড়েছে তিন গুণের বেশি। যার ৮০ শতাংশ যাত্রীই বহন করেছে বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা। আন্তর্জাতিক রুটেও বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো ভালো করছে।
উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থাগুলোর হিসাবে দেশি-বিদেশি মিলে উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের বাজার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের। এই বাজারের ২০-২২ শতাংশ মাত্র দেশি উড়োজাহাজ সংস্থার দখলে, বাকি ৭৭-৭৮ শতাংশই বিদেশি উড়োজাহাজের প্রতিষ্ঠানের হাতে।
উড়োজাহাজ পরিচালনা সংস্থাগুলোর হিসাবে দেশি-বিদেশি মিলে উড়োজাহাজে যাত্রী পরিবহনের বাজার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের। এই বাজারের ২০-২২ শতাংশ মাত্র দেশি উড়োজাহাজ সংস্থার দখলে, বাকি ৭৭-৭৮ শতাংশই বিদেশি উড়োজাহাজের প্রতিষ্ঠানের হাতে।
এখন বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে এয়ারলাইনস সেবা প্রদান করছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। অভ্যন্তরীণ রুটে সেবা দিচ্ছে নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস তাদের কেন্দ্রীয় এয়ারপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করছে শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, শাহ আমানত ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, চট্টগ্রাম ও ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, সিলেট। অন্যদিকে বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস- এই দুটি উড়োজাহাজ সংস্থা তাদের কেন্দ্রীয় এয়ারপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করছে শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।
অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইনস কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৯৫ সালের দিকে। ১৯৯৭ সালে যাত্রী পরিবহন শুরু করে এক বছরের মাথায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। মোট ১১টি বেসরকারি এয়ারলাইনস বিভিন্ন সময় লাইসেন্স পেলেও এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলো হলো- রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, জিএমজি এয়ারলাইনস, এয়ার পারাবত, এয়ার বাংলাদেশ, জুম এয়ারওয়েজ, বেস্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার ও রয়েল বেঙ্গল এয়ারলাইনস।
এদিকে বর্তমানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস। তার মধ্যে নভোএয়ার ২০১৩ সালে প্রথম দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে তাদের বহরে রয়েছে এটিআর ৭২-৫০০ মডেলের ৭টি বিমান।
এদিকে বর্তমানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস। তার মধ্যে নভোএয়ার ২০১৩ সালে প্রথম দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে তাদের বহরে রয়েছে এটিআর ৭২-৫০০ মডেলের ৭টি বিমান।
বহরে থাকা বিমান দিয়ে অভ্যন্তরীণ সাতটি বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে নভোএয়ার। এই উড়োজাহাজ সংস্থাটি এখন অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ৫০টি ফ্লাইট আর প্রতিমাসে ১ হাজার ৫০০টি ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাংলাদেশি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ১৭টি বিমান দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান সংস্থাটি ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই প্রথম দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তাদের বহরে রয়েছে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের ৪টি, বোমবার্ডেয়ার ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ মডেলের ৩টি ও এটিআর ৭২-৬০০ মডেলের ৬টি বিমান।
বহরে থাকা ১৭টি বিমান দিয়ে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সাতটি বিমানবন্দরে সর্বাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। এই এয়ারলাইনসটি এখন অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন ৫৮টি ফ্লাইট আর প্রতি মাসে ১ হাজার ৭৪০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সংস্থায় এখন কর্মরত জনশক্তি আছে প্রায় ২ হাজার।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেড়ে ওঠা দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি নিজের জমিতে একটি বিমানবন্দর করার। অনেক দেশে বেসরকারি বিমানবন্দর আছে। আমাদের দেশে সে রকম বিমানবন্দর করার অনুমতি দিলে আমরা একটি বিমানবন্দর গড়ে তুলতে পারব। এর সম্ভাব্যতা যাচাইও করছি আমরা। দেখা যাক কী হয়। হয়তো আমরা ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজও সংযোজনও করব।
সাজেদ/এএল