• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

অস্তাচলে-রবি

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২, ০৬:০০ পিএম

অস্তাচলে-রবি

রিংকু পাল চৌধুরী

অফিসে কাজের চাপে দিশেহারা! রাইমা

বন্ধু সীমা-  কি রে রাইমা টিফিন করলি না যে?

রাইমা- আজ হয়তো খাওয়া জুটবে না,

সীমা- সে কি কথা?


রাইমা- দুর্ভোগ, একেই বলে ভাগ্য খারাপ! 

অফিসে আজ অনেক কাজ, তার ওপর ট্রেন মিস। শেষে টিফিন-বক্স ফেলে আসা। আরও যে কি কি ভাগ্যে আছে?

সীমা- তাই বুঝি  টিফিন করলি না?

রাইমা- আর কোথায়, সেই  চা-স্টলের ছেলেটি, নাম যেন কি?

-হে জয়, ওকে দু-শ টাকার নোট 

দিয়ে বলেছিলাম, "এক কন্টিনার পোলাও এনে দিতে পারবি"?

মাথাখানা হেলিয়ে বলেছিল,

 "হ্যাঁ কেন পারব না" ম্যাডাম।

কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা হতে চললো-ওর দেখা নেই!

সীমা- তোর মাথা খারাপ? 

অচেনা ছেলেটিকে তুই দু-শো টাকা দিলি! ওদের এত টাকা দেখে অভ্যাস আছে কি? সব্বোনাশ! পালিয়েছে,

টাকাটা আত্মসাৎ করেছ!

রাইমা- তাই মনে হয়, টাকাটা চুরি গেছে;    

সত্যি অবাক লাগে, প্রবঞ্চনা বা মিথ্যাচারে দিনদিন বেড়েই চলছে।

সীমা-  যদি দেখা মিলে পুলিশে দিবি বলছি?

রাইমা-  হ্যাঁ, মাথা নাড়িয়ে সহমত জানালো।


অফিসের কাজ সেরে ক্লান্ত শরীরে 

রাইমা বাসের অপেক্ষা করছিল, বাস ধরে স্টেশনে যেতে হবে, কি ধকলটাই না গেল-আজ। ভালোয় ভালোয় ট্রেন পেয়ে গেলেই হলো।

হঠাৎ চোখে পড়ল-  

অদূরের জমাটবাঁধা কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে, মনে হচ্ছে অ্যাকসিডেন্ট!

হ্যাঁ অ্যাক্সিডেন্ট।

তৎক্ষণাৎ পাশ দিয়ে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটা শাঁ করে উড়ে গেল। অজান্তে    

রাইমার যেন হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল।

 ইস! কার যে নিথর দেহ পড়ে আছে সাদা অ্যাম্বুলেন্সে..।


কিন্তু  ট্র্যাফিকের কাররণ অ্যাম্বুলেন্সটার গতি রোধ হলো। কিছুটা এগিয়ে বাসে উঠতে গিয়ে রাইমার চোখ পড়ল সাদা অ্যাম্বুলেন্সে, চমকে উঠে রাইমা!, গাড়ির  মরদেহটি অন্য কেউ নয়, "সেই টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চায়ের কাপ হাতে চটপটে ছেলে "জয়"।

শোকে স্তম্ভিত রাইমা

মুহূর্তেই ডুকরে কেঁদে ওঠে। 

চারপাশ যেন অন্ধকার হয়ে গেল।

বাস চলে গেল। অ্যাম্বুল্যান্সটাও

চলে গেল।


শোকস্তব্ধ রাইমা একা দাঁড়িয়ে "চোখের সামনে ঘটে যাওয়া জয়ের মৃতদেহ, ট্যাটুযুক্ত রক্তাক্ত হাতে দুশো টাকার নোটখানা দেখলো। এরপর 

স্থির হয়ে যাওয়া চোখ দুটি, 

যেন বলে গেল-

আমি মরে গেছি ম্যাডাম, 

 "এই যে তোমার টাকা,

 আমি চুরি করিনি"॥




আর্কাইভ