প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২২, ০৫:৪১ পিএম
কাবাঘরের
আদলে নির্মিত বায়তুল মোকাররম বিশাল এলাকাজুড়ে এর অবস্থান। আল্লাহর
৯৯টি নামে এর দেয়াল
অঙ্কিত হয়েছে। মসজিদটিকে বাংলাদেশের অন্য যে কোনও মসজিদ
থেকে আলাদা করা হয়েছে। ‘বায়তুল
মোকাররম মসজিদ’ একটি পরিচিত নাম।
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ এটি। ১৯৬০ সালে
এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
মসজিদের শহর ঢাকার পল্টনে
অবস্থিত এই মসজিদ সম্পর্কে ইতিহাসবিদ
শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘ঢাকা কোষ’ বইয়ে
অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।
যা এই বইয়ে উল্লেখ
ছিল। ১৯৫৯ সালে তৎকালীন
পাকিস্তানি সামরিক শাসন চলছিল। সে
সময় বাওয়ানী জুট মিলস গ্রুপের
মালিক হাজী আবদুল লতিফ
বাওয়ানী একটি মসজিদ নির্মাণের
পরিকল্পনা করেন। পরে তার পরিকল্পনার
কথা পূর্ব পাকিস্তান সামরিক শাসক মেজর জেনারেল
ওমরাও খানের নিকট উপস্থাপন করেন। ওমরাও খানও মসজিদ নির্মাণের
ব্যাপারে একমত পোষণ করে
সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
১৯৫৯
সালের ২৭ এপ্রিল আব্দুল
লতিফ বাওয়ানীর বাড়িতে একটি সভা অনুষ্ঠিত
হয়। সভায় শিল্পপতি জি.
এ মাদানী, হাজী আব্দুল লতিফ
বাওয়ানী, এম. এইচ আদমজী,
এস সাত্তার, মুহাম্মদ সাদিক, এ. জেড. এন
রেজাউল করিম, ইয়াহিয়া আহমদ বাওয়ানী ও
মেজর জেনারেল ওমরাও খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সবার সম্মতিক্রমে মসজিদ
নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর পরিকল্পনা
অনুযায়ী শুরু হয় মসজিদ
নির্মাণের কাজ। নাম দেয়া
হয় ‘বায়তুল মোকাররম’।
এখন
যেখানে বায়তুল মোকাররম অবস্থিত সেখানে ‘পল্টন পুকুর’ নামের বিশাল একটি পুকুর ছিল।
ওই পুকুর ভরাট করে মসজিদের
নির্মাণ কাজ শুরু করা
হয়। নির্মাণের শুরু থেকেই মসজিদটি
নিয়ন্ত্রণ করে আসছে সরকার।
১৯৬০
সালের ২৭ জানুয়ারি মসজিদের
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পাকিস্তানের
রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান। মসজিদের ডিজাইন
করেন প্রকৌশলী আবুল হোসেন থারিয়ানী
ও নির্মাণ কাজের তদারকি করেন প্রকৌশলী মঈনুল
হোসেন। ওই বছরের ২৫
জানুয়ারি সেখানে প্রথম জুমার নামাজ আদায় করা হয়।
আর তারাবিহ নামাজ হয় ১৯৬৩ সালের
২৬ জানুয়ারি। ১৯৭৫ সালের ২৮
মার্চ থেকে মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ
করছে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’।
এ
মসজিদে প্রবেশ করার বারান্দাগুলোতে তিনটি
অশ্বখুরাকৃতি খিলান পথ রয়েছে। এর
মাঝেরটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড়।
ছাদহীন ভেতরের আঙ্গিনা। কাবাঘরের আদলে নির্মিত এবং
বর্তমান জাতীয় মসজিদটি আটতলা। এর নিচতলায় দোকান
ও গুদাম ঘর। দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত
সালাত আদায় করা হয়।
মসজিদের জন্য এক লাখ
২৫ হাজার ৬২ বর্গফুট এলাকা
ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক
তলাতেই অজুর ব্যবস্থা আছে।
মসজিদের দোতলা থেকে খতিব নামাজ
পড়ান। তিন তলার উত্তর পাশে মহিলাদের নামাজের
ব্যবস্থা আছে। এখানে এক সঙ্গে
৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের
ভেতর খোলামেলা হওয়ায় আলো বাতাসের সমস্যা
হয় না। উত্তর, দক্ষিণ
ও পূর্ব দিক থেকে মসজিদে
প্রবেশ করা যায়।
মাওলানা
আবদুর রহামন বেখুদ (রহ.) ছিলেন বায়তুল
মোকাররমের প্রথম খতিব। তার পরে খতিব
নিযুক্ত হন মাওলানা ক্বারী
উসমান মাদানী (রহ.)। তিনি
এ মসজিদের খতিব ছিলেন (১৯৬৩-১৯৬৪), মাত্র এক বছর। পরবর্তী
খতিব ছিলেন- মুফতী সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান। তিনি ১৯৬৪-১৯৭৪
সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর
এ মসজিদের খতিব ছিলেন মুফতী
মাওলানা মুইজ (রহ.)। তিনি
দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৪-১৯৮৪ সাল পর্যন্ত।
এর পরে বায়তুল মোকাররম
মসজিদের দায়িত্ব পালন করেন খতিব
মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)।
তিনি ছিলেন দেশবরেণ্য আলেম। খতিব হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন ১৯৮৪-২০০৯
সাল পর্যন্ত।
সব মিলিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ বাংলাদেশের গর্ব এবং পৃথিবীর সুন্দর মসজিদগুলোর একটি।
ডিআইএ/এএল