প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২২, ০৩:৫৬ পিএম
আজ
পবিত্র শবেবরাত। বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ রাত। মহান আল্লাহ
তায়ালার রহমত লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই রাতে নামাজ, দোয়াসহ বিভিন্ন নফল
ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা
খুলে দেবেন এ রাতে।
শবেবরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত অনেক বেশি। তবে শবেবরাতের বাঁধাধরা কোনো ইবাদত-আমল নেই। এই রাতের জন্য কোনো ইবাদত নির্দিষ্ট করাও জায়েজ
নেই। বরং মানুষ যতটা সম্ভব আল্লাহর ইবাদতে সময় কাটাবে। তবে ব্যক্তিগত সাধ্যানুযায়ী
চাইলে অনেক আমল করা যায়।
আল্লাহর
রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষকে বিচার করা হবে তার তাকওয়া দ্বারা। আর নামাজের মধ্য দিয়ে
তাকওয়া লাভ করা যায়।
এবার
পবিত্র ও বরকতময় এই রাতের ইবাদতের নিয়ম সঠিকভাবে জেনে নেওয়া যাক।
শবেবরাতের নামাজের নিয়ত
পাকপবিত্র হয়ে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াবেন। এরপর আরবি, বাংলা যেকোনো ভাষাতেই নিয়ত করতে
পারেন।
বাংলায়
নিয়ত করবেন, দুই রাকাত নফল নামাজ/সালাত
কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর।
শবেবরাতের ইবাদত
সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাজত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দুই রাকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম। ৬ রাকাত নফল নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা ও এরপর যেকোনো একটি সুরা পড়তে হবে। দুই রাকাত নামাজ শেষ করে সুরা ইয়াসিন বা ইখলাছ ২১ বার করে পড়বেন।
· ২
রাকাত নফল নামাজের জন্য প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং
১৫ বার করে সুরা এখলাছ পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরিফ পড়বেন। ফজিলত-রুজিতে
রবকত, দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখশিশ পাওয়া যাবে।
· ৮
রাকাত নফল নামাজের জন্য দুই রাকাত করে পড়তে হবে। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা
এখলাছ ৫ বার পড়তে হবে। একই নিয়মে বাকি রাকাতও আদায় করতে হবে।
১৪
রাকাত নফল নামাজের জন্য দুই রাকাত করে পড়বেন। প্রতি রাকাত সুরা ফাতিহার পর যেকোনো একটি সুরা পড়ুন।
·
৪
রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে পারেন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর ৫০ বার সুরা এখলাছ
পড়বেন।
·
আট
রাকাত নফল নামাজ এক সালামে পড়তে পারেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ
পড়বেন।
·
‘সালাতুল তাসবিহ' নামাজও পড়তে পারেন। এই
নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে।
শবেবরাতের রোজা
শবেবরাতের পরদিন রোজা রাখা সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছে- হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.)
থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "পনেরো শাবানের
রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগিতে কাটাবে এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা
এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী
আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছ কি কোনো রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে
সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।(ইবনে
মাজা, হাদিস নম্বর-১৩৮৪)
যা মেনে চলবেন
·
নামাজের
আগে নিজে পাকপবিত্র হয়ে নিন।
·
নামাজের
স্থানকে পাক পবিত্র রাখতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
·
নামাজের
জন্য আরামদায়ক পোশাক বাছাই করুন।
·
খাবার
খাওয়া নিয়ে সতর্ক হোন। এমন খাবার খাবেন না, যা নামাজের মাঝে সমস্যা করবে।
·
সারারাত
ইবাদত বন্দেগিতে কাটাবেন। তাই হাতের কাছে কিছু শুকনো খাবার রাখতে পারেন।
·
কোলাহল
নয়, একান্তে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকুন।
·
নামাজে
কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করুন।
·
পরের
দিন নফল রোজা রাখতে পারেন।
মনে
রাখবেন, শবেবরাতের সারারাত ইবাদত শেষে ফজরের নামাজ পড়া গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল রাখবেন, ঘুমের কারণে এই নামাজ যেন বাদ না হয়। শবেবরাতের নফল শেষ করে ভিতর নামাজ পড়ুন। এরপর
ফজরের নামাজ আদায় করুন।
শবেবরাতে
যেসব
কাজ
করবেন
না
শবেবরাতে নফল আমলের জন্য
দলে দলে মসজিদে এসে
সমবেত হওয়া। এই ধরনের কোনো
আমলের প্রমাণ হাদিস শরিফে নেই। আর সাহাবায়ে
কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল
না। তবে কোনো প্রকার
ঘোষণা বা আহ্বান ছাড়া
মানুষজন যদি মসজিদে একত্র
হয়ে যায়, তাহলে তারা
একাকী ইবাদত করতে পারে। এতে
কোনো সমস্য নেই।
লক্ষণীয়
যে, এক শ্রেণির যুবক
আছে— তারা এ রাতে
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায়, উচ্চ
স্বরে জিকির করে; অথচ ইসলামের
দৃষ্টিকোন থেকে এগুলো সম্পূর্ণ
বর্জনীয়। কারণ, এতে কোনো
রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হতে পারে।
আর অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল
ইবাদত করার কোনো বিধান
শরিয়তে নেই।
পটকা বাজানো, খিচুড়ি পাকিয়ে বণ্টন করা; মিষ্টি, হালুয়া ও শিরনি বিতরণ; মসজিদে একত্র হয়ে ইবাদত, জিকির, আতশবাজি, চেরাগপ্রথা ও কবরস্থানে মেলার মতো গমনাগমন ইত্যাদি সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার।
ডিআইএ/এফএ