প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২১, ০৯:১১ পিএম
মানুষের অনেক কঠিন কাজও সহজ
হয়ে যায় প্রযুক্তির সহায়তায়। কখনও কখনও সেটি জীবন রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। ঠিক তেমনি
এক ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কানাডার টরেন্টোতে।
একজন রোগীর দেহে প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ফুসফুসের একটি সেট সরবরাহ করতে একটি ড্রোন ১.২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৬ মিনিট। বিশ্বে এই প্রথম ড্রোনের মাধ্যমে ফুসফুস পরিবহন করা হয়েছে।
ড্রোনটি মাঝরাতে ইউএইচএন-এর টরন্টো ওয়েস্টার্ন হাসপাতাল থেকে যাত্রা শুরু করে জেনারেল হাসপাতালের ছাদে অবতরণ করে। অপারেশনটি সম্ভব হয়েছে হালকা কার্বন ফাইবারে একটি রেফ্রিজারেটেড পাত্রের কারণে, যা দ্বারা ফুসফুসটির তাপীয় পরিমিতি বজায় রেখে প্রতিস্থাপনের জন্য কার্যকরী হয়। তারপরে ফুসফুস সফলভাবে পালমোনারি ফাইব্রোসিসসহ ৬০ বছরের রোগীর মধ্যে প্রতিস্থাপিত করা হয়।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউএইচএন’স আজমেরা ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টারের টরেন্টো ফুসফুস প্রতিস্থাপন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ড. শাফ কেশহাভজে বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের প্রমাণ করেছি এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সফলভাবেই আমরা কাজটা করতে পেরেছি।’ ড্রোনটি ক্যুবেক-ভিত্তিক বায়োটেকনোলজি এভিয়েশন কোম্পানি ইউনিদার বায়োইলেকট্রনিক্স-এর সঙ্গে অংশীদারত্বে টরন্টো ফুসফুস ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের নেতৃত্বে ছিল। এটি অন্টারিওতে অঙ্গ ও টিস্যুদানের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ট্রিলিয়াম গিফট অফ লাইফ নেটওয়ার্ক (টিজিএলএন) থেকেও সমর্থন পেয়েছে। ইউনিথার বায়োইলেক্ট্রনিক্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মিকেল কার্ডিনাল বলেছেন, ‘আমি মনে করি যে ড্রোন প্রযুক্তির স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি আদর্শ হয়ে ওঠার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।’
অঙ্গ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ড্রোন এবং স্বায়ত্তশাসিত বিমানের ব্যবহার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করতে পারে, আর তা হলো, কীভাবে সময় বাঁচানো যায়। আজমেরা ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টারের মেডিকেল ডাইরেক্টর ডা. অতুল হামার বলেন, ‘অনেক সময়, আমরা একটি জীবন রক্ষাকারী অঙ্গ নষ্ট করে ফেলি কারণ আমরা সময়মতো এটি আমাদের কাছে পৌঁছয় না। অঙ্গটি খারাপ হয়ে গেলে সেটি আর প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত থাকে না।’ অপারেশনটি দেখায় যে, ড্রোন ডেলিভারি প্রযুক্তি, যা ইতোমধ্যেই কিছু দেশে অনলাইনে কেনা প্যাকেজের জন্য কার্যকর, প্রকৃতপক্ষে অঙ্গ পরিবহনের বর্তমান ব্যবস্থা উন্নত করতে এবং এর খরচ কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে ডা. কেশহাভজে বলেছেন, ‘এখন চ্যালেঞ্জ হলো, এই প্রযুক্তিটিকে বিশ্বজুড়ে রোগীদের কাছে উপলব্ধি করার জন্য মানিয়ে নেওয়া।’ সেই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ফুসফুস হলো ‘সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে সকল অঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ভঙ্গুর।’ প্রতি বছর গড়ে ৪১,০০০ রোগীর একটি অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়, এবং ৪৮,০০ নতুন রোগী ইউরোপে অপেক্ষমাণ তালিকায় নিবন্ধিত হয়।
প্রতি ঘণ্টায় ট্রান্সপ্লান্ট অপেক্ষমাণ তালিকায় প্রায় ছয়জন নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছেন। এদিকে, যে ব্যক্তির ফুসফুস প্রতিস্থাপিত হয়েছে গোটা ঘটনায় তিনি হতবাক হয়ে জানিয়েছেন, ‘সেই শুক্রবার আমি আমার মেয়ের সঙ্গে ছিলাম। তখন চিকিৎসকরা এসে জানান, আজ রাত বা কাল সকালের মধ্যেই আমার ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা যাবে। আর তারপরেই আমাকে তারা জিজ্ঞেস করেন, আমি এই গবেষণার অংশ হতে চাই কিনা। আমি রাজি হয়ে যাই। কারণ আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং বিষয়টি আমাকে উত্তেজিত করে তুলেছে। এরপর তারা জানান আজ রাতেই সম্ভবত একটি ড্রোন ফুসফুস নিয়ে আসছে। ঠিক তখনই চিকিৎসকের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে কথা বলার পরই তিনি বলেন, আপনার ফুসফুস এসে গিয়েছে।’ এ ক্ষেত্রে একজন দাতার দুর্বল ফুসফুস মেরামত করে প্রতিস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। ইউনাইটেড থেরাপিউটিকস-এর তৈরি ড্রোন ও অঙ্গ পরিবহনের বাক্স করে ফুসফুস দুটি টরেন্টোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
জেডআই/ডাকুয়া