প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩, ০৭:৩২ পিএম
সম্প্রতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শাকিব খান অভিনীত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি দেখেছেন। এ খবর মিডিয়া ও অন্তর্জালে প্রকাশের পরই অনেক নেটিজেনের মনে হয়েছে, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটির প্রযোজক আরশাদ আদনান হওয়ায় ছেলের প্রযোজিত সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে দেখতে গিয়েছেন বাবা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। যা মোটেও সত্যি না হওয়ায় শাকিব খান তার ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
সাধারণত রাষ্ট্রপতির জন্য দেশের কোনো সিনেমা বিশেষ প্রদর্শনী হয়ে থাকে তার বাসভবনেই। কিন্তু সে রেওয়াজ ভেঙে রাষ্ট্রপতি শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পরিবারসহ উপস্থিত হন এসকেএস টাওয়ারে স্টার সিনেপ্লেক্সে। রাত ৮টায় সেখানেই উপভোগ করেন ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা। এ প্রসঙ্গে শনিবার ( ২ আগস্ট) রাতে ঢালিউড কিং শাকিব খান তার ভেরিফাইড ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
স্ট্যাটাসের মাধ্যমে শাকিব জানান, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি দেখতে আসেন। কারণ এ সিনেমার প্রযোজক তার ছেলে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। যুক্তি হিসেবে শাকিব তার স্ট্যাটাসে জানান, এর আগেও রাষ্ট্রপতির একমাত্র ছেলে আরশাদ আদনান একাধিক সিনেমা বানিয়েছেন। তখন প্রযোজক আরশাদ আদনানের বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। তাই তখন তার এত প্রটোকলও ছিল না। তারপরও কেন সিনেমা হলে ছেলের সিনেমা দেখতে যাননি, এমন যুক্তিও দিয়েছেন শাকিব।
এরপরই ভক্তদের শাকিব জানান, মূলত বাংলাদেশ ও বিশ্বের সিনেমা প্রেমীদের কেন ‘প্রিয়তমা’ হাসাচ্ছে, কাঁদাচ্ছে, এতো ভালোবাসা দিচ্ছে—কী আছে এই সিনেমায় তা দেখার জন্যই রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও এত প্রটোকল মেনে সিনেমা দেখতে ৪০ বছর পর সিনেমা হলে এসেছিলেন তিনি। ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছেন এ চিত্রনায়ক।
কেন রাষ্ট্রপতি ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা দেখলেন, সে কারণ জানানোর পাশাপাশি দীর্ঘ স্ট্যাটাসের সঙ্গে বিশেষ ওই মুহূর্তের একটি ভিডিও জুড়ে দিয়েছেন শাকিব। ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে শাকিবের পাশাপাশি দেখা যায় ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার টিম, জনপ্রিয় তারকা এবং রাষ্ট্রপতির পরিবারকে।
সিটি নিউজ ঢাকার পাঠকদের জন্য ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা, চিত্রনায়ক শাকিব খানের সেই দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরা হলো-
মুক্তির ২ মাস পার হলেও এখনও বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাঙালিরা পরিবার–পরিজন নিয়ে ‘প্রিয়তমা’ উপভোগ করছেন। নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জেনেছি, দেশ–বিদেশের নানা প্রান্তের সিনেমাপ্রেমীরা ‘প্রিয়তমা’ দেখে উল্লাসে মেতেছেন, আনন্দে ভেসেছেন, কষ্টে কেঁদেছেনও। এটা আমার ও ‘প্রিয়তমা’ টিমের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের।
এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যাটি ছিল আমার এবং পুরো বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য আরও গর্বের। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয় (মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন) ও ফার্স্টলেডি (ড. রেবেকা সুলতানা) পরিবার নিয়ে ‘প্রিয়তমা’ দেখলেন। সিনেমা দেখা শেষে মহামান্য আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে আমিও এগিয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। বললেন, ‘you are our pride, we really proud of you my son.’ পাশে থেকে আমাদের ফার্স্ট লেডি ডেকে নিলেন, অভিনন্দন জানালেন। প্রিয়তমা নিয়ে গর্বের কথাও জানালেন। বললেন, ওয়েলডান মাই বয়। দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ফার্স্টলেডির কাছ থেকে এমন উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যে কোনো শিল্পীর জন্য অত্যন্ত সম্মানের ও গৌরবের।
রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সুযোগ্য সন্তান আরশাদ আদনান এই সিনেমার প্রযোজক বলেই যে তিনি ‘প্রিয়তমা’ দেখতে এসেছেন বিষয়টি মোটেও এমন নয়! তার সন্তান এর আগেও একাধিক সিনেমা বানিয়েছেন। তখন এতো প্রটোকলে তিনি ছিলেন না, তারপরও দেখা হয়নি সেসব সিনেমা। এবার তিনি তার পুরো পরিবার নিয়ে আগ্রহ নিয়ে ‘প্রিয়তমা’ দেখতে এলেন, কারণ বাংলাদেশ ও বিশ্বের সিনেমা প্রেমীদের কেন ‘প্রিয়তমা’ হাসাচ্ছে, কাঁদাচ্ছে, এতো ভালোবাসা দিচ্ছে—কী আছে এই সিনেমায় তা দেখার জন্য!
সিনেমা দেখার পর বাবা মা হিসেবে গর্ব নিয়ে রাষ্ট্রপতি মহোদয় ও ফার্স্টলেডি তাদের সন্তানকে বুকে টেনে নিয়েছেন। অনেক বেশি গর্বের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। আসলেই সন্তানের যে কোনো ভালো কাজ বাবা–মাকে গর্বিত করে, আনন্দিত করে, ভালোবাসায় আপ্লুত করে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও মহামান্য তার পরিবার নিয়ে ‘প্রিয়তমা’ দেখেছেন, এ জন্য তাদের প্রতি আমি, প্রযোজক আরশাদ আদনান, পরিচালক হিমেল আশরাফ এবং প্রিয়তমা টিমের সবার পক্ষ থেকে অনেক কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
আমি জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বাংলা সিনেমা দেখেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামীতে হয়তো আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তার পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখবেন এবং তার দেশের সিনেমা দেখে তিনি আনন্দিত হবেন, গর্বিত হবেন।
আমি সবসময় পরিচ্ছন্ন এবং সুস্থ বিনোদনের সিনেমা করার চেষ্টা করি। যেটি সবাই বাবা-মা, পরিবার পরিজন নিয়ে নির্দ্বিধায় সিনেমাহলে একসঙ্গে বসে দেখতে পারবেন। কয়েক বছর আগে স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশি সিনেমা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাবে, ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে স্বপ্নের শুরুটা দারুণভাবে হয়েছে। আমাদের সবার স্বপ্নটাকে আরও বড় করে তুলেছে। আগামীতেও বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় সব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলা সিনেমার প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করে যাব, ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) ছিল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী, ফার্স্টলেডি অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানার জন্মদিন। মায়ের ৭০তম জন্মদিন স্মরণীয় করে রাখতেই বাবার সঙ্গে কথা বলে নিজের প্রযোজিত সিনেমা ‘প্রিয়তমা’ দেখার পরিকল্পনা করেন আরশাদ আদনান। সংবাদ মাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছিলেন প্রযোজক। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মায়ের জন্মদিনকে যেন সত্যি স্মরণীয় করে রাখলেন ছেলে।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্টার সিনেপ্লেক্সে কাটা হয় জন্মদিনের বিশাল কেক। কেকে লেখা ছিল, হ্যাপি বার্থডে ‘প্রিয়তমা’। সিনেমার সঙ্গে বাস্তবের ‘প্রিয়তমা’-র উপস্থিতিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে বিশেষ মুহূর্তটি।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/