প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম
বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল ১০টায় মারা যান তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান শরৎ সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন বাবা। তার মরদেহ আগামীকাল (মঙ্গলবার) দেশে আনা হবে।
দীর্ঘ সময় ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ফারুক। এর মধ্যে দুবার তার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২০২১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান ফারুক। তখন রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়লে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সিঙ্গাপুরে প্রায় চার মাস ধরে আইসিইউতে ছিলেন ফারুক। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মাস ছয়েক আগে তাকে কেবিনে নেয়া হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ফারুক।
কিংবদন্তি এ অভিনেতা প্রায় পাঁচ দশক ধরে বড় পর্দা মাতিয়েছেন। চিত্রনায়ক ফারুক বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা হলেও তিনি একাধারে ছিলেন প্রযোজক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৪৮ সালে ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে মানিকগঞ্জে জন্ম হলেও তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কাটে পুরান ঢাকায়। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ফারুক ছিলেন সবার ছোট। ব্যক্তিজীবনে ফারুক ফারজানা পাঠানকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন পাঠান শরৎ।
ফারুক তার অভিনয় জীবন শুরু করেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার।
অভিনয় জীবনে টার্নিং পয়েন্ট আসে ১৯৭৩ সালে। সে বছর খান আতাউর রহমান পরিচালিত আবার তোরা মানুষ হ এবং ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিলে চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের নজরে পড়েন তিনি।
১৯৭৫ সালে সুজন সখী ও লাঠিয়াল সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দর্শক হৃদয়ে চিরস্থায়ীভাবে জায়গা করে নেন ফারুক। এ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান এ অভিনেতা।
এরপর কাজ করেন সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়া ও নয়নমনি চলচ্চিত্রে। এ তিনটি সিনেমাই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সারেং বৌ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ফারুক। এ চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও ফারুকের অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে।
ফারুকের আরও যেসব সিনেমা দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে সেগুলো হলো নাগরদোলা, দিন যায় কথা থাকে, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই, সখী তুমি কার ইত্যাদি। সবগুলো সিনেমাই সেসময় ব্যবসাসফল হয়।
১৯৮৭ সালে মিয়া ভাই সিনেমায় অভিনয় করে সাফল্যের পর ফারুক চলচ্চিত্রাঙ্গনে এবং দর্শকহৃদয়ে মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
কিংবদন্তি এ অভিনেতা প্রায় পাঁচ দশক ধরে বড় পর্দা মাতিয়েছেন। অভিনয় জীবনে তার এসব কালজয়ী সিনেমার জন্য দর্শক হৃদয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকবেন চিত্র নায়ক ফারুক।
জেকেএস/