প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩, ১১:০২ পিএম
ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিং শাকিব খানের বিরুদ্ধে আনিত ধর্ষণের অভিযোগ বর্তমানে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন সিনেমার নির্মাতা আশিকুর রহমান। নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে এই চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসাবে নিজের অবস্থান ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন তিনি। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন আশিকুর।
পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
চিত্রনায়ক শাকিব খানের নামে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। অভিযোগ করার মাধ্যমে কি লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে এটা অভিযোগকারীর কাছেই পরিষ্কার নয়। যদি অনৈতিক কোনো কাজে কেউ সংঘটন করে থাকে, তবে তা যে কোনো দেশের আইনেও অপরাধযোগ্য। আমাদের সবারই সেটার বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার বদলে টাকা বা অন্য কোনো সুবিধা চাওয়াটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। তবে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত যে কোনো অভিযোগকে সত্যি বলা যায় না। অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। একটি চলচ্চিত্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, ব্যক্তিগত রোষানলের বিষয়ে সমাধান করা অগ্রহণযোগ্য। শাকিব খান ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুইবার অস্ট্রেলিয়াতে শুটিং করতে আসেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৭-৮ দিনের শুটিং করেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ‘সুপার হিরো’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়াতে আসেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি নাকি পালিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে, যেটা বাস্তবে কখনো হওয়া সম্ভব না। এই দেশে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে শেষ না দেখা পর্যন্ত তাকে দেশ ত্যাগ বা প্রবেশ এর অনুমতি দেয়া হয় না। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এই দুই চলচ্চিত্রের সকল কলাকুশলী সম্মান ও আতিথেয়তা সহকারে অস্ট্রেলিয়া আগমন ও ত্যাগ করেন।
২০১৮ সালে, শাকিব খান ও অন্যান্য কলাকুশলীরা যখন হোটেল হলিডে ইন এ অবস্থান করছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়া পুলিশ এর দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তার রুম এ যান। প্রায় ২০-৩০ মিনিটের অবস্থান শেষ এ তারা অন্যান্যদের আরও কিছু সাধারন প্রশ্ন করে চলে যান। এই ঘটনা ছাড়া শাকিব খানের সাথে পুলিশ এর আর কোনো ইন্টারেকশন আমার জানা নেই।
সেই দিন ও আমরা ইনডোরে মুভির, ২টা সিকোয়েন্সের শুট করি। তার এক দিন পর, আমি, রবিউল রবি ও শাকিব খানের আরেকজন লিগ্যাল প্রতিনিধি কোগরা পুলিশ স্টেশন এ যাই, উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য। শাকিব খানের প্রতিনিধি পুলিশ এর সঙ্গে বিভিন্ন কাগজ পত্র নিয়ে আলাদা একটি রুম এ বসেন। প্রায় ১ ঘণ্টার রুদ্ধদার আলোচনা শেষ এ, তদন্ত কারী কর্মকর্তা আমাদের জানান, জনাব শাকিব খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতার, তারা প্রমাণ পান নাই। তারপর, তিনি শাকিব খান এর সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলেন, এবং তাকে কোনো সন্দেহ ছাড়া ও নিশ্চিন্তে সিডনিতে শুটিং করতে বলেন।
উক্ত ঘটনার পর, আমরা আরও দুই সপ্তাহেরও বেশি সিডনিতে শুটিং করি। সফল ভাবে শুটিং করার পর, ‘সুপার হিরো’ চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মন জয় করে সুপারহিট হয়।
যেকোনো কাজ করার সময়, ছোটখাট অনেক ত্রুটি থাকে। সেগুলোকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করাটা মোটেও সমিচিন নয়। খাবার-দাবারসহ যে সকল অনর্থক অভিযোগ এসেছে, সেগুলো আসলে অনভিপ্রেত ও ক্ষুদ্র মানুষিকতার পরিচয় দেয়। শুটিং এর বিশাল কর্মব্যস্ততার মাঝে সময় পাওয়া কঠিন। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা বিরতিহীন শুটিং করার পর, সবারই মূল লক্ষ্য থাকত বিশ্রাম নেওয়া ও পরের দিনের শুটিং এর প্রস্তুতি নেওয়া। শাকিব খান, এবং আমরা যতক্ষণ একসঙ্গে শুটিং করেছি, কখনও আপত্তিকর কিছু চোখে পড়েনি। এ ছাড়া কাজের বাইরে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি কখনও আগ্রহ দেখাইনি। আমি যে কয়বার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ এ ব্যক্তিগত ভাবে, শুধু মাত্র এই মুভির জন্য গিয়েছি, তার খরচ, এই মুভিতে আমার পারিশ্রমিক এর থেকে বেশি। এই মুভিতে কাহিনি কার ও পরিচালক হিসাবে আমি যে সময় ও শ্রম দিয়েছি, তা টাকার অংকে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।
‘অপারেশন অগ্নিপথ’ চলচ্চিত্রটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিলিয়ে শুট করার একটাই কারণ ছিল, সেটা হল, আমরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি দেশকে বাংলাদেশ এর সিনেমার পর্দায় উপস্থিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু সার্থান্নেষী ও ঈর্ষা কাতর মানুষের কারণে আমরা, অসাধারণ একটি গল্প পর্দায় আনতে পারিনি। এই মুভিটি পর্দায় আসলে, বাংলা ভাষায় দর্শকরা অসাধারণ একটি স্পাই থ্রিলার উপভোগ করতে পারত। আমরা সবাই এখনও চাই এই মুভির কাজ শেষ করতে। সময় বলে দিবে, এই চাওয়াটা কত টুকু পাওয়া সম্ভব। তবে, মাত্র ৮ দিনের শুটিং আর দুই মিনিটের টিজারএ যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে, আমার মনে হয় না, বিগত কয়েক বছরে, কোনো চলচ্চিত্র এতটা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুভিটি সত্যিকারের অগ্নিপথ পাড়ি দিয়ে একদিন সোনালি পর্দায় মুক্তি পাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।