প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৩, ১০:০০ পিএম
মাহিয়া মাহি। দেশীয় শোবিজের এই চিত্রনায়িকা শুরু থেকেই নানা কারণে আলোচনা ও সমালোচনার শিকার হয়েছেন।
আজ শনিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মাহিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসেনের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ঘটনার পর থেকে সারা দেশে তাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এর আগেও তিনি চাপাইনবাবগঞ্জের ২ আসনে নির্বাচন করা নিয়ে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে নমিনেশন নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তবে ঐ আসনের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন।
মাহিয়া মাহিকে নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ছিল ২০২১ সালে। মাহির সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের টেলিফোনে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন।
মাহিয়া মাহির সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের টেলিফোন কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। যা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তোলে। সেখানে নায়িকার উদ্দেশ্যে তাকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ কথা বলতে শোনা গেছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে। নারীদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য ও ধর্ষণের হুমকি সম্বলিত অডিও ফাঁসের মাঝেই তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কথোপকথন নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ওই অডিওতে নায়ক ইমনও ছিলেন।
মাহিয়া মাহি অনেকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন এমনও গুজব শোনা গেছে শোবিজে। শোনা যায় অভিনেতা সাইমন সাদিকের সঙ্গেও তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
২০১৬ সালের মে মাসে তিনি সিলেটের ব্যবসায়ী মাহমুদ পারভেজ অপুকে বিয়ে করেন। তার বিয়ের পর তার প্রাক্তন বন্ধু শাহরিয়ার ইসলাম সাওন তার সঙ্গে মাহিয়া মাহির কিছু ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে আপলোড করেন। তিনি দাবি করেন ২০১৫ সালে মাহিয়া মাহিকে বিয়ে করেন। কিন্তু মাহিয়া এই দাবি অস্বীকার করেন। ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত ফটো আপলোড করার জন্য তিনি আইসিটি আইনে শাহরিয়ার ইসলাম সাওনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
বিয়ের ৫ বছর পর কিছু কারণে ২০২১ এ সিলেটের ব্যবসায়ী মাহমুদ পারভেজ অপুর সঙ্গে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
পরে ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি গাজীপুরের ব্যবসায়ী এবং পলিটিশিয়ান রাকিব সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে গাজীপুরে দুটি মামলা হয়েছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে শুক্রবার রাতে বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া জমি দখলের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন।
২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে সেক্স স্ক্যান্ডালের খবরও রটেছিল। তখন তিনি হঠাৎ চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন। এই নিয়েও নানা কারণে তাকে নিয়ে গুজব রটে এফডিসিসহ মিডিয়ামহলে। তখন বিষয়টি অস্বীকার করে বিব্রতকর পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন মাহিয়া মাহি। একের পর এক নতুন ঘটনার জন্ম দেন তিনি। আরশাদ আদনান নামের এক নব্য প্রযোজক-কাম অভিনেতার সঙ্গে কলকাতায় গোপন অভিসারে বেরিয়েছিলেন মাহি এমন ঘটনা চাউর হয় বাজারে। শোনা যায় ওই বছর ১২ মে বিকেল ৫টায় জেড এয়ারওয়েজ ৯ ডব্লিউ ২৭৩ ফ্লাইটে কলকাতার উদ্দেশে একসঙ্গে ঢাকা ছেড়েছিলেন আদনান এবং মাহি। কলকাতায় গিয়ে একটি হোটেলে একইসঙ্গে অবস্থান করেন দু’জন। মাহি ঢাকা ছাড়ার পরেই বিষয়টি মিডিয়া পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ খবর কলকাতায় অবস্থানরত আদনান ও মাহির কানে পৌঁছলে ১৩ মে দু’জনেই আলাদা-আলাদা ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে আসেন। আদনান ফেরেন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এফএম কলকাতা জেড এয়ারওয়েজের এএল ৯ডব্লি-২৭৪ ফ্লাইটে। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা পরেই রিজেন্ট এয়ার আরএক্স-৭৯২-এর ফ্লাইটে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছান মাহি। এ প্রসঙ্গে প্রযোজক আরশাদ আদনানকে প্রশ্ন করলে তিনি তার জবাবে বলেন, ‘এটা মিথ্যে।
২০১৬ সালের দিকে হাফপ্যান্ট পরে ইফতার করেন সিলেটি বধূ মাহি। এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় সে সময়। ছবিতে দেখা গেছে মাহি হাফ প্যান্ট পরে ইফতার করছেন। আর সেই ছবি খুব অল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
ছবিটি নিয়ে যখন আলোচনা আর সমালোচনা চলছে তখন দেশের একটি অনলাইনকে মাহি জানান, ‘শুটিংয়ের সময় আমি ইফতার করতে বসেছি। কাপড় পরিবর্তন করে ইফতার করার মতো সময় ছিল না। আর কে কি বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না। অমি কোনো কথায় কান দিই না। কি বললো সেটা নিয়ে আমি বসে থাকি না। এটা স্বাভাবিক। আর আমার ধর্ম আমার কাছে।’ এরপর সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘আশীর্বাদ’ নিয়েও বিতর্কিত হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। সিনেমাটিতে কাজ করতে গিয়ে ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
মাহিয়া মাহি একজন জনপ্রিয় বাংলাদেশি অভিনেত্রী এবং বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। ২০১২ সালে ভালোবাসার রং সিনেমা দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নেন। শুধু বাংলাদেশের সিনেমাতেই নয় তিনি ভারতীয় সিনেমাতেও কাজ করেছেন ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায়।মাহি অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ভালোবাসার রং’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘পোড়ামন’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘অগ্নি’, ‘কি দারুণ দেখতে’, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘ময়নামতি’, ‘দেশা দ্য লিডার’, ‘ওয়ার্নিং’, ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ এবং মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘অনেক দামে কেনা’ ও ‘অগ্নি ২’।
আরিয়ানএস/এএল