প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০২:০১ এএম
মেহজাবীন চৌধুরী ছোট পর্দার সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের একজন। ১৩ বছরের অভিনয়জীবনে খণ্ডনাটক, ধারাবাহিক, ওটিটি মিলিয়ে ৪৯০টি কনটেন্টে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে কাজের মধ্যেও তাঁর অভিনয় করা প্রথম নাটকের কথা ভোলেননি আজও। ১৩ বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম অভিনীত নাটক ‘তুমি থাকো সিন্ধু পাড়ে’ প্রচারিত হয়। দিনটি স্মরণ করে মঙ্গলবার মেহজাবীন তাঁর ফেসবুক পেজে সহশিল্পীর সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তাতে মেহজাবীন লিখেছেন, ‘১৩ বছর আগে আজকের দিনে আমার প্রথম অভিনীত নাটক প্রচার হয়েছিল। প্রথম সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলাম মাহফুজ আহমেদ ভাইয়াকে। পরিচালক ছিলেন ইফতেখার আহমেদ ফাহমি।’
মেহজাবীনের কোনো দিনই ইচ্ছা ছিল না নাটকে অভিনয় করার। দেশের বাইরে বেড়ে ওঠা মেহজাবীন তখন বুঝতে পারলেও ঠিকঠাকমতো গুছিয়ে বাংলায় কথাই বলতে পারতেন না।
তাহলে কীভাবে নাটকে আসা? ২০১০ সালের ২২ জানুয়ারি লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার বিজয়ী হন মেহজাবীন। এরপর দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে চলে যান। এর কিছুদিন পর চ্যানেল আই থেকে নাটকে অভিনয়ের ডাক আসে। কিন্তু রাজি নন মেহজাবীন। কারণ, বাংলা বলায় সমস্যা। কীভাবে নাটক করবেন তিনি। কিন্তু সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে তো বসে থাকলে চলবে না, কাজ করতে হবে।
প্রথম আলোকে মেহজাবীন বলেন, ‘খুব করে তাঁরা আমাকে বোঝালেন, গল্পটি আমার ওপরই। একজন মেয়ে দেশের বাইরে থেকে এসে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কীভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়, সেটা নিয়েই গল্প। আমাকে বোঝানো হলো, ঠিকমতো বাংলা বলতে না পারা সমস্যা নয়। অভিনয়ের সময় সব দিকে থেকে সাহায্য করা হবে। শেষ পর্যন্ত ঢাকাতে এলাম। কিন্তু কাজের আগেই আরও সমস্যা ঘনীভূত হলো।’
কেমন সেটি, জানতে চাইলে মেহজাবীন বলেন, ‘আমি আগে ভাবতাম, নাটকের শুটিংয়ের আগে শিল্পীদের চিত্রনাট্য দেওয়া হয়, অনুশীলন করতে হয়, তারপর শুটিংয়ে। অনুশীলন তো দূরের কথা, শুটিংয়ের আগে চিত্রনাট্যই দেওয়া হলো না। আমি তো চিন্তায় পড়ে গেলাম। ক্যামেরার সামনে কীভাবে কী করব, ভয় পাচ্ছিলাম।’
এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে শুটিং হয়। শুটিংয়ের দুদিন আগে আমাকে বলা হলো, কয়েকটি সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি নিয়ে যেতে হবে শুটিংয়ে। কিন্তু আমি তো চিত্রনাট্যই পাইনি, চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে কেমন সালোয়ার-কামিজ, কেমন শাড়ি সঙ্গে নেব, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। নিজের টাকায় কস্টিউম কিনতে হবে, সেটাও জানা ছিল না। কারণ, টাকাটাও তো একটা ব্যাপার ছিল। সব মিলিয়ে অনেকটাই নার্ভাস হয়ে গেলাম।’
প্রথম দিনের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে ভয়, কিছুটা নার্ভাস নিয়ে মাকে সঙ্গে করে শুটিং লোকেশনে গেলাম। প্রথম দিন ধানমন্ডি, টিএসসি, চারুকলার লোকেশনে কাজ ছিল। তবে কাজ করতে গিয়ে ভয় কিছুটা দূরও হলো। জানতে পারলাম, ফাহমি ভাইয়েরা কোনো চিত্রনাট্য দেন না শিল্পীদের, এভাবেই কাজ করেন তাঁরা। প্রথম প্রথম তো একেকটি দৃশ্যের জন্য অনেকবার টেক নিতে হয়েছে। কিন্তু কোনো রকমই বিরক্ত হননি পরিচালক; বরং পরিচালক এতটাই দক্ষ যে আমার প্রতিটি দৃশ্যই ধরে ধরে বুঝিয়ে দিয়ে কাজ করছিলেন। তখন বুঝলাম, কতটা মেধাবী পরিচালক ফাহমি ভাই।’
প্রথম নাটকে মেহজাবীনের সহশিল্পী ছিলেন মাহফুজ আহমেদ। শুটিংয়ের আগে তাঁর অভিনীত নাটকও দেখার সুযোগ হয়নি মেহজাবীনের। তবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলেন, তিনি অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা।
মাহফুজ আহমেদের বিপরীতে অভিনয় করতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মেহজাবীন বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, ঠিকঠাক গুছিয়ে বাংলা বলা সমস্যা ছিল তখন আমার। তো শুটিংয়ে অনেকবার শট নিতে হয়েছে আমার জন্য। মাহফুজ ভাই নাকি একটু বিরক্তও ছিলেন। মাহফুজ ভাই নাকি মনে মনে আমাকে নিয়ে বলেছিলেন, এই মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’
‘২০১৮ সালে আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য মাহফুজ ভাইয়ের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তখন তিনি সাক্ষাৎকারে কথাটি স্বীকার করেছিলেন। সাক্ষাৎকারের একাংশে তিনি বলেছেন, “আমার সেদিনের ধারণা পাল্টে দিয়েছ মেহজাবীন। এখন তোমার ক্যারিয়ার, তোমার অভিনয় নিয়ে গর্ব হয় আমাদের।’ এখনো মাঝেমধ্যে দেখা হলে মাহফুজ ভাই কথাগুলো মজা করে বলেন।’
দর্শকের কাছে সেই মেহজাবীন আর এই মেহজাবীনের এখন আকাশ-পাতাল ব্যবধান। বর্তমান মেহজাবীন তাঁর এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘১৩ বছর আগে সেই প্রথম নাটক থেকে এখানে আসতে আমার একার কোনো অর্জন নেই। প্রথম নাটকে অভিনয়ের পরপর শুরুর দিকে কাজের সময় কীভাবে সংলাপ দিতে হবে, কীভাবে অভিনয় করতে হবে, কীভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে হবে, অনেক পরিচালক, অনেক সহশিল্পী আমাকে হাতে ধরে ধরে কাজ শিখিয়েছেন। এগিয়ে দিয়েছেন আমাকে। তাই আজকের এই মেহজাবীন তার নিজের একার নয়, অনেক মানুষের অবদান আছে তার মধ্যে।’
মেহজাবীন জানান, প্রথম নাটকে অভিনয় করে ১৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন তিনি।