প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২, ০৭:০২ পিএম
সালমান শাহকে বলা হয় ঢাকাই সিনেমার ‘রাজপুত্র’। মৃত্যুর দুই যুগ পরও তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও আবেদন কমেনি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরো অনেক বেশি রঙিন হয়েছে তাকে নিয়ে ভালোবাসার রঙ। এখনো টিভি পর্দায় তার অভিনীত ছবি প্রচারিত হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন।
নব্বইয়ের দশকে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটা সালমান শাহ পর্দা থেকে বেরিয়ে হয়ে উঠেছিলেন কোটি তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের নায়ক। শুরুতেই বিশাল সাফল্য দিয়ে সালমান প্রাণসঞ্চার করে দিলেন মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রে। তারপর শুধুই ইতিহাস। অনেকেই বলে থাকেন সালমানের মতো জনপ্রিয় নায়ক হয়তো আর কখনোই কোনোদিন জন্মাবে না এই ইন্ডাস্ট্রিতে।
আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সেই অমর নায়কের জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তার বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। সালমানের জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তবে চলচ্চিত্রে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ নামেই পরিচিত ছিলেন।
বেঁচে থাকলে আজ ৫১ পেরিয়ে ৫২ বছরে পা দিতেন অসংখ্য ভক্তের এই স্বপ্নের নায়ক। সালমানবিহীন এদেশে দীর্ঘদিন ধরেই তার জন্মদিন উদযাপন হয়ে আসছে। যা অন্য কোনো প্রয়াত নায়কের বেলায় চোখে পড়ে না কখনো। এদিক বিবেচনায় এটা বড় একটি রেকর্ড। ১৯ সেপ্টেম্বর দিনটি এলে সালমানভক্তরা তার জন্মদিনের কেক কাটেন এখনো।
সালমান শাহ পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। ওই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে একইসাথে দুজনের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। সালমান-মৌসুমী জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে। সেই থেকে একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন সালমান শাহ। সেগুলোর প্রায় সবগুলোই সুপারহিট। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম- অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া, জীবন সংসার, প্রেম প্রিয়াসী, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন ইত্যাদি।
সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের জুটি ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা জুটিও বলেন অনেকে।
চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। সামিরা ছিলেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের দুটি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন।
দাম্পত্য জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই সালমানের মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়ে। এদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিংফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য থেকে যায়।
১৯৯৬ সালে সালমান শাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেই শোক সইতে না পেরে আত্মঘাতী হন বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তারা সবাই সালমানের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। প্রিয় তারকার মৃত্যুর খবরে এভাবে তরুণ-তরুণীদের আত্মাহুতি দেয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই সালমান শাহ মরেও অমর হয়ে আছেন এ দেশের লাখো ভক্তের হৃদয়ে।
জেডআই/