প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১, ০৮:২৬ পিএম
নিজের মর্জি মতোই চলেন তিনি।
টালিগঞ্জের অন্যতম ঠোঁটকাটা ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত শ্রীলেখা মিত্র। মাঝে মধ্যেই
বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান এ অভিনেত্রী। কিন্তু সেসব নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নন
তিনি। এবার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন শ্রীলেখা।
‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক, এতে ক্যান্সার হয়’, ছবির শুরুতে প্রতিদিন এই বাণী সকলেই দেখেন বা পড়েন, কিন্তু ধূমপান ছাড়ার কথা ভাবতেই পারেন না এতে আসক্ত মানুষজন। ‘সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি’র সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার পাকা সিদ্ধান্ত নিলেন শ্রীলেখা।
কিন্তু আচমকা কেন এই সিদ্ধান্ত? এক সাক্ষাৎকারে শ্রীলেখা জানালেন, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। সারাক্ষণ গলায় অদ্ভুত অস্বস্তি। দম নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। সারাক্ষণ বুকে যেন চাপ ধরা ভাব। চিকিৎসকের কাছে গেলে সবার প্রথম যে ধূমপানে নিয়ন্ত্রণ আনবার কথা বলা হবে তা ভালোভাবেই জানেন শ্রীলেখা। তাই নিজে থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ দিন নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শ্রীলেখা লেখেন- ‘সিগারেট ছাড়তে চাই। এই ব্যাড হ্যাবিটটা আমার কলেজের দিনে। না সিনেমায় এসে সিগারেট ধরিনি। বাবার কাছ থেকে বকুনি, সঙ্গে এক-দুবার মারও খেয়েছি। মোগাম্বোর মতো ছিল বাবা তখন। সেই বাবা আবার আমার কাছ থেকে সিগারেট চুরি করেও খেয়েছিল। এ রকম রিলেশন ছিল আমাদের। কিন্তু সত্যি এবার ছাড়ব… ছাড়বই।’
তিনি আরও জানান, ‘অনেক সুখ-অসুখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, বেড়ে ওঠা, বুড়ো হয়ে ওঠা- সবটা জুড়ে তুমি ছিলে, আছো এখনও। তবে এবার তোমার মায়া ত্যাগ করতেই হবে… দুটোই বড় কষ্টের সিগারেট, বোঝো তো… সবই মায়া।’
ধূমপান নিয়ে শ্রীলেখার ঝুলিতে অনেক মজার স্মৃতি। কথায় কথায় জানিয়েছেন, এত ছোট বয়স থেকে ধূমপান শুরু। সবটাই বাবার অজান্তে। ফলে ঘরে ছাই ফেলার পাত্র যে রাখবেন, সে উপায়ও নেই। কী করতেন তখন? ‘আমার ঘরের ফুলদানিতে ছাই ফেলতাম। তার পরে নিজের গায়ে, ঘরে ছড়িয়ে দিতাম সুগন্ধি। বাবা যাতে কিছুতেই টের না পান’, বলতে বলতে ধরা গলায় তখন হাসির ছোঁয়া। এভাবেই কলেজ পেরিয়ে অভিনেত্রী অভিনয়ের দুনিয়ায়। একদিন একটি শট দেয়ার পরে সেটে দাঁড়িয়ে সুখটান দিচ্ছেন। হঠাৎ দেখেন বাইরে বাবা দাঁড়িয়ে। নিজেকে আড়াল করতে সঙ্গে সঙ্গে কলাকুশলীদের ভিড়ে মিশে গিয়েছেন।
কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। ‘রেনবো জেলি’র ‘পরি’ বকুনি এড়াতে কপালে ‘ব’ কাটছেন! কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে দেখেন বাবা বিছানায় শুয়ে। মেয়েকে দেখেই তার তর্জন-গর্জন, ‘এক হাট লোকের মাঝে দাঁড়িয়ে আমার মেয়ে ফুসফুস করে ধোঁয়া ছাড়ছেন! দেখে মনে হচ্ছিল মেট্রোরেলের নিচে গলা দিই।’ ধূমপানের কারণে বাবার হাতে মারও খেয়েছেন শ্রীলেখা। তবু ধূমপান ছাড়তে পারেননি।
এই নেশা তাকে শ্বশুর মশাইয়ের ঘর থেকেও সিগারেট চুরি করতে বাধ্য করেছিল! অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ফুলশয্যার রাতে তিনি আর তার স্বামী শিলাদিত্য সান্যাল (এখন প্রাক্তন) এক সঙ্গে বসে ধোঁয়া ছাড়ছেন। আর সিনেমা দেখছেন।
একটার পর একটা সিগারেট পুড়তে পুড়তে বাক্স ফাঁকা! এবার কী হবে? নেশা মেটাতে বাধ্য হয়ে শ্বশুর মশাইয়ের ঘরে চুপিচুপি মাঝরাতে হানা! সিগারেট চুরি করতে! বলতে বলতে হাসির পরেই ঝাপসা তার গলা! ‘যে বাবার থেকে নেশা করতে শিখেছিলাম, তিনি শেষের দিকে আমার সিগারেট চুরি করে খেতেন। ধরা পড়লে বলতেন, তোর তো সব দামি দামি সিগারেট!’
জেডআই/এম. জামান