• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পরকীয়া ও মাদকসহ নোবেলের যত বিতর্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১, ০৬:১৯ পিএম

পরকীয়া ও মাদকসহ নোবেলের যত বিতর্ক

বিনোদন প্রতিবেদক

ভারতের জি বাংলা টিভি চ্যানেলে প্রচারিত গানবিষয়ক রিয়্যালিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানটি দুই বাংলায়ই ব্যাপক জনপ্রিয়। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন মাইনুল আহসান নোবেল। গান দিয়ে বাংলাদেশে ও কলকাতায় অসংখ্য ভক্ত তৈরি করেছেন গোপালগঞ্জের এই ছেলে। সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকজন গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গেও।

নোবেল অল্প সময়ের মধ্যে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। কিন্তু সঙ্গীত ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই বিতর্কে জড়ান নোবেল।

শুরুতে তার ভক্তরা নোবেলের পক্ষে দাঁড়ালেও সময়ের সঙ্গে তারাও সরে যান। নোবেলের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্ম এ জন্য দায়ী! খুব অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

প্রেম নিয়ে বিতর্ক

প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন নোবেল। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোবেলের বেশ কিছু আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এক কিশোরীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয় ছবিগুলো। নোবেলের বিরুদ্ধে প্রেম ও সর্বস্ব লুটের অভিযোগ তুলেছিলেন ১৬ বছর বয়সী ওই ছাত্রী। ছাত্রীটি অভিযোগ করেছিলেন, গোপালগঞ্জে থাকার সময় নোবেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নোবেল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়েছিল। শুধু তাই নয়, মাতাল অবস্থায় গোপালগঞ্জের যেখানে সেখানে পড়ে থাকতেন নোবেল। এভাবে অনেক মেয়ের জীবন তিনি নষ্ট করেছেন বলেও মেয়েটি অভিযোগ করেন।

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ

২০১৯ সালের আগস্টের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘বাংলাদেশ’ গানটিকে নোবেল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে তুলনা করেন। এ ভিডিও সাক্ষাৎকারে নোবেল বলেন, “রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ যতটা না দেশকে (বাংলাদেশ) এক্সপ্লেইন করে, তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি এক্সপ্লেইন করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা ‘বাংলাদেশ’ গানটা।” জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে নোবেলের এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। তাকে তুলোধুনো করেন সব শ্রেণির শ্রোতা-দর্শক। এ নিয়ে কলকাতার বেশ ক’জন শিল্পীও কড়া মন্তব্য করেছিলেন। নোবেলের এমন কাণ্ডে তার ভক্তরাও বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। শুধু তাই নয়, তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন।।

গান চুরির অভিযোগ

২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর নোবেল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে ‘দেশ’ শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করেন। গানটির কথা ও সুর নিজের বলে দাবি করেন। এরপর নোবেলের বিরুদ্ধে এই গান চুরির অভিযোগ তুলেন ব্যান্ডদল ‘অ্যাবাউট ডার্ক’। ২০১৮ সালেও নোবেল এই গানটি নিজের দাবি করে প্রকাশ করেছিল। তখন সমালোচনার মুখে পড়ে গানটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে নোবেল ক্ষমা চেয়েছিল বলেও জানান ‘অ্যাবাউট ডার্ক’ ব্যান্ডের সদস্য পূর্ণ।

দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য

২০২০ সালের ১৯ মে দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন নোবেল। তার দাবি- গত ১০ বছরে এই দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতেই পারেনি। নিজের ফেসবুক পেজে নোবেল লিখেছিলেন—‌ ‘বাংলাদেশে তো গত ১০ বছরে ভালো করে কেউ মিউজিকই করেননি। দাঁড়াও তোমার লেজেন্ডদের না হয় আমিই শেখাব, কীভাবে ২০২০ সালে মিউজিক করতে হয়।’ তারপর শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কেউ কেউ নোবেলের এমন মন্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলেছেন। এতে নোবেল ভক্তদের বিব্রত হতে দেখা গেছে। যদিও পরবর্তীতে নোবেল জানান, এসবই তার পরবর্তী একটি গানের প্রচারণার জন্য করেছেন তিনি। কাউকে আঘাত দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না।

নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করা স্ট্যাটাস দেন নোবেল। এতে তিনি লিখেছিলেন—‘স্ক্যান্ডাল আমার হবে না তো হবে কার? চায়ের দোকানদার নরেন্দ্র মোদির? কে দেখবে চা-ওয়ালার স্ক্যান্ডাল? অন্যদিকে আমাকে নগ্ন দেখার মধ্যে তো বিরাট তৃপ্তি তাই না? নাহলে কি স্ক্যান্ডাল এত ভাইরাল হয়?’ এমন পোস্টের পর নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে পড়েন নোবেল। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবরও প্রকাশ করে।

বিতর্কের মুখে পড়ে এ শিল্পী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ভুল স্বীকার করে লিখেন—‘মোদিজির প্রেমে এখন ইন্ডিয়া মাতাল। মোদিজি জানতে পারলে আমাকে নোবেল পুরস্কার দিতেন। যে মোদিজিকে ক’দিন আগে সবাই গণহারে গালি দিত, সেই মোদিজির আজ কত শুভাকাঙ্ক্ষী। এসব কার অবদান, তোমরা বলো? বাই দা রাস্তা, স্যরি মেরে ইন্ডিয়ান ভাই ও বেহেনরা। আমার স্ট্যাটাসটা দেওয়া উচিত হয়নি। মাঝে মধ্যে ভুলে যাই আমি তো ইন্ডিয়ান নই। ক্ষমা করে দিও।’

গোপন বিয়ে

২০২০ সালের মে মাসে প্রকাশ্যে আসে নোবেলের গোপন বিয়ের খবর। তার বিয়ের কাবিননামাকে কেন্দ্র করে এ খবর চাউর হয়। কাবিননামা থেকে জানা যায়, নোবেলের স্ত্রীর নাম মেহরুবা সালসাবিল। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আরও জানা যায়—নগরীর নিকেতন এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন নোবেল। তবে কিছু গণমাধ্যম নোবেলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়র বরাত দিয়ে জানায়, এটি নোবেলের তৃতীয় বিয়ে। এর আগেও তিনি আরও দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। গতকাল সারা দিন নানা সমালোচনার পর রাতে বিয়ের কথা স্বীকার করেন নোবেল। এও জানান, এটি তার তৃতীয় নয়, প্রথম বিয়ে।

পরকীয়া ও মাদক

বেশ কয়েক মাস আগে প্রেমিকা জেবাসহ আরও একজনকে নিয়ে বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রিতে ভ্রমণ করেন নোবেল। এ সময় প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করে নোবেল তার ফেসবুক ওয়ালে ছবি শেয়ার করলে তোলপাড় শুরু হয়, তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান তার স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ।

গত ২৫ আগস্ট রাতে পর্যটন জেলা শহরে এসে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক নারীকে নিয়ে বান্দরবান সদরের রুমা বাসস্টেশন এলাকার গার্ডেন সিটি নামে এক আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে সঙ্গীতশিল্পী নোবেল। পরে ২৬ আগস্ট সকালে হোটেল থেকে বের হয়ে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় নেশাজাতীয় দ্রব্য খেয়ে ঘুরতে থাকার পাশাপাশি উদ্ভট আচরণ করতে থাকে এলাকাবাসীর সঙ্গে।

এ দিকে একজন শিল্পী হয়ে পর্যটন জেলা বান্দরবানে এসে প্রকাশ্যে এলাকায় নেশাদ্রব্য পান করা ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট করার কারণে এলাকার মানুষ তার ওপর রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে সে আবার সন্ধ্যায় শহরের গার্ডেন সিটি হোটেলে রাত্রিযাপনের জন্য উঠলে রাত ১২টায় হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে এসে মদপানের পাশাপাশি চিৎকার ও শোরগোল শুরু করলে তাকে শান্ত করতে হোটেল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

তার আচরণে হোটেলে থাকা অন্যান্য বোর্ডাররা বিরক্ত হয়ে তাকে সামলাতে আসলে সে এক বোর্ডারকে লাঞ্ছিত করে। পরে হোটেলের মালিক মো. জাফর নোবেলের এই কর্মকাণ্ড দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে ভোরবেলা সে তার রুমে ঘুমাতে যায়।

এ দিকে নোবেলকে ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়েছেন স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। গত মাসে- অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে তিনি নোবেলকে ডিভোর্সের চিঠি পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালসাবিল মাহমুদ নিজেই।

 

এস/এএমকে/এম. জামান

আর্কাইভ