• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফেঁসে যাচ্ছে রাজধানীর নামিদামি ৭ স্কুল

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৩, ০১:৫৩ এএম

ফেঁসে যাচ্ছে রাজধানীর নামিদামি ৭ স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গলাকাটা টিউশন ফি আদায় করে ফেঁসে যাচ্ছে রাজধানীর নামিদামি সাত স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি ‘অ্যাকশনে’ যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। পরে এমপিও বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, চেতনা মডেল একাডেমি, বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, (এ প্রতিষ্ঠানটি সেনাবাহিনী পরিচালিত), ডেমরার সামসুল হক খান উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বনফুল আদিবাসী গ্রিনহাট কলেজ। 


এছাড়া হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভর্তি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) চিঠি দিয়েছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাধ্যমিক শাখাকে বলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান নীতিমালার বাইরে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে। আমাদের তদারকি দল পরির্দশন করে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, আমি অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে আছি। মন্ত্রণালয়ের চিঠি আমি দেখিনি। তবে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রমাণ পেলে এমপিও বাতিলসহ যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।

গত ২ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মাউশির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বেসরকারি স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজে (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২২ জারি করা হয়েছে। নীতিমালার ১০ নং ক্রমিকে আবেদন, ভর্তি ও অন্যান্য ফি (বেতন, টিউশন ফি, সেশন চার্জ) ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ভর্তি নীতিমালার ১১ নম্বর ক্রমিকে ভর্তি ফি বাবদ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না, করলে সরকার এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ আছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২২ এ নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায় করায় সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মাউশিকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান বলেন, আমি গত ১ মার্চ এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। ভর্তির সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় দায়িত্বে থাকা বনানী বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রিয়াঙ্কা হালদার শিখা বলেন, আমি এখন দায়িত্বে নেই, কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

এদিকে, একই তারিখে মাউশির ডিজিকে দেওয়া অপর এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসারের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি মিরপুরের হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল পরিদর্শনের জন্য প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পুনরায় তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভর্তি নীতিমালায় যা আছে

গত ৮ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা ভর্তি নীতিমালা ১০ ও ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে ভর্তি ফির হার উল্লেখের পাশাপাশি বিধান না মানলে শাস্তির কথা বলা হয়েছ।

১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সরকার যে খাতগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে সেগুলোতেই কেবল অর্থ নেওয়া যাবে। বেসরকারি গ্রামাঞ্চলের স্কুলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ফি সেশন চার্জসহ পাঁচশ টাকা। উপজেলায় এক হাজার, জেলা সদরে দুই হাজার এবং ঢাকা বাদে অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা যাবে না।

প্রতিষ্ঠান যদি আংশিক এমপিওভুক্ত (সব শিক্ষককে সরকার বেতন দেয় না) হয়, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা নিতে পারবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না, যা আট বা দশ হাজার টাকার মধ্যেই সীমিত থাকবে।

একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরের ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবছর সেশন চার্জ নেওয়া যাবে। তবে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া যাবে না।

উল্লিখিত বিধান না মানলে বা অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে সরকার এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। কিন্তু ভর্তি নীতিমালা উপেক্ষা করে উল্লেখিত সাতটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজধানীসহ সারা দেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাউশি ও মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের স্তূপ জমে। এছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে মোট ৭৯টি কমিটি গঠন করেছে।

গত ২১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের দায়ে অভিযুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গ্রীনফিল্ড স্কুল ও কলেজ, হোপ ইন্টারন্যাশনাল, চেতনা মডেল একাডেমি, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল ও কলেজ, শহীদ আনোয়ারা গার্লস স্কুল ও কলেজ, প্রিপারেটরি গ্রামার স্কুল, কসমো স্কুল, ডেমরার সামসুল হক খান উচ্চ বিদ্যালয়, বনফুল গ্রিনহার্ট আদিবাসী কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনর কলেজ এবং পুলিশ স্মৃতি স্কুল ও কলেজের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।


এসব স্কুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে মাউশিকে চিঠি দিয়েছে।

 

এডিএস/

আর্কাইভ