প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২, ০৮:৫৪ পিএম
আবুল কালাম আজাদ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্শ্ববর্তী জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুল থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই, তা সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি। সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে এসব তথ্য জানা যায়।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার লংগরপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে আবুল কালাম আজাদ ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু সে বছর তাদের বাড়িতে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে যায়। পরে প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবারটি। অর্থকষ্ট সামাল দিতে তাকেও কাজে যোগ দিতে হয়। ফলে লেখাপড়া আর হয়ে ওঠেনি তার।
কাজের খোঁজে ঢাকায় চলে আসেন আবুল কালাম আজাদ। রোজগার করে বাড়িতে টাকা পাঠালে পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন। কাজের সন্ধানে আসা কালাম বিয়েও করেন ঢাকায় থাকাবস্থায়। ২২ বছর ঢাকায় কাটানোর পর সংসারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ১৯৯৫ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান তিনি। সেখানে কাটান জীবনের আরও ১৮টি বছর। দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে শুরু করেন পড়াশোনা। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ভর্তি হন বকশীগঞ্জ চন্দ্রাবাজ রাশিদা বেগম হাইস্কুলে। সেখানে থেকেই দিয়েছেন এবারের এসএসসি পরীক্ষা। পাসও করেন তিনি।
তিনি প্রায় আট হাজার গান, কবিতা, ছড়া ও উপন্যাস লিখেছেন। সংরক্ষণের জন্য এসব লেখা ১৭টি বই আকারে বাঁধাই করে রেখেছেন। আর প্রকাশ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা ‘দেশরত্ন’ নামে একটি বই।
তার বড় ছেলে সামসুদ্দিন মৌলিভীবাজারে একটি কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক, মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করেন এবং ছোট ছেলে আনিসুর রহমান গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। ৬৭ বছর বয়সী কালাম বলেন, ‘ছোট ছেলে এসএসসি পাসের খবরটি আমাকে জানান। এ বয়সে এসএসসি পাস করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এই বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করাটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। তবুও আমি হাল ছাড়িনি, আর হাল ছাড়িনি বলেই পাস করতে পেরেছি।’ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায়ের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কালাম চাচার এসএসসি পাসের খবর শুনে আমিসহ এলাকার সবাই ভীষণ খুশি। তিনি এ বয়সে লেখাপড়া করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সমাজের কাছে সমাদৃত হয়ে থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে তার এই কর্মকাণ্ডে। তার এই কৃতিত্বের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।’
সজিব/