• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

পতাকা অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বেরোবির ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ০৪:৫৯ পিএম

পতাকা অবমাননার মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বেরোবির ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা

বেরোবি প্রতিনিধি

জাতীয় পতাকা অবমাননা করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় এ বিষয়ে দায়ের করা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা। গত ২৫ জুলাই রংপুরের অতিরিক্ত জেলা বিচারক মো. তারিখ হোসেন ওই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গঠিত চার্জ বাতিল করে মামলা হতে তাদের অব্যাহতি দেন। এ বিষয়ে প্রকাশিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ একটি কপি সিটি নিউজ ঢাকার হাতে এসেছে।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা জাতীয় পতাকাসদৃশ ব্যানার হাতে স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে ছবি তোলেন। ওই ছবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহামুদুল হক তার ফেসবুকে পোস্ট করলে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে তাজহাট থানায় দু’টি মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহামুদুল হক ও মশিউর রহমান এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ।

এরপর রংপুর মেট্রোপলিটন আদালত-৩ এটি এনজিআর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে এবং গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন শিক্ষক ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। উক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদ হোসেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও প্রভাষক মো. রহমতুল্লাহ, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নুর আলম সিদ্দিক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ছদরুল ইসলাম সরকার।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান ও প্রভাষক আবু সায়েদ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান, ড. মো. রশীদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক চালর্স ডারউইন ও কর্মকর্তা শুভংকর চন্দ্র সরকার, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদ-উল-হাসান, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইউম শারাফাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রভাষক মো. শামীম হোসেন। 

বিচারিক আদালতের গঠন করা উক্ত চার্জকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তার পক্ষ থেকে রংপুর জজকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্র উক্ত ফৌজদারি মামলার বাদী হলেও বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহামুদুল হক এবং গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান মামলায় পক্ষ হওয়ার জন্য আবেদন করেন।

রংপুর জেলা জজ তাদের আবেদন নামঞ্জুর করলে তারা এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন এবং সেখানেও পরপর দুটি বেঞ্চ তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর ফলে দীর্ঘদিন রিভিশন মামলার শুনানি ব্যাহত হয়। এরপর গত ২৫ জুলাই দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারিক আদালতে চার্জশিট বাতিল করে মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেন রংপুর জজকোর্টের ২য় আদালতের বিচারক মো. তারিখ হোসেন।

এ রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামিগণ ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেননি। তারা ব্যানার আকারে জাতীয় পতাকার অনুরূপ ব্যানার ব্যবহার করেছিলেন। তারা সরাসরি বিকৃত করে জাতীয় পতাকা কোনো অফিস বা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করেননি।

এ ছাড়াও আসামিদেরকে স্বাধীনতাবিরোধী দলের সমর্থক মর্মে জিডিতে উল্লেখ করা হলেও প্রসিকিউশন রিপোর্টে তা পাওয়া যায়নি। বরং আসামিদের সকলেই সরকারদলীয় (স্বাধীনতার পক্ষের) শিক্ষক দলের সমর্থক। কাজেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছেন বলে বিশ্বাস করা যায় না।

বিচারক তার রায়ে আরও বলেন, ফৌজদারি অপরাধের প্রাথমিক ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মিনস রিয়া (আসল উদ্দেশ্য), কিন্তু আসামিদের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও পরবর্তী আচরণ হতে প্রতীয়মান হয় যে, জাতীয় পতাকা অবমাননা করার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে তারা জাতীয় পতাকা নয় বরং ব্যানারে জাতীয় পতাকার অনুরূপ আকৃতি ব্যবহার করেছিলেন।

জেইউ/এএল
আর্কাইভ