বিশেষ প্রতিনিধি
কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণত্যাগ বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়ার নাম আত্মহত্যা। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'আত্মহত্যা' শব্দটি বেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এক গবেষণায় দেখা নানা কারণে দেশে ৪৭ ভাগ মানুষ একবার হলেও আত্মহত্যার চিন্তা করে। এদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ ভাগ। এই ২৫ ভাগ থেকে ২০২১ সালেই ১০১ জন শীক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যাকারীদের ৬১ শতাংশের বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার প্রবণতা ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্রদের বেশি। দেশের প্রায় ৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার আত্মহত্যার সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংখ্যাটি পেয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। এই শিক্ষার্থীদের মতো মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীও রয়েছে। সংগঠনটি দাবি করে, ২০২০ সালে ৭৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন।
আত্মহত্যা করা ১০১ জনের মধ্যে ৬২ জন বা ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একই সময়ে মেডিকেল কলেজ ও অনার্স কলেজের ১২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন, যা মোট আত্মহত্যাকারীর ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত বছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় ২৩।
এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।
দেখা গেছে, ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বয়সসীমার ৬০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ২৭ জন।
আঁচলের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, গত বছর আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৬৫ জন ছাত্র, অর্থাৎ আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩৬ শতাংশই ছাত্র। ছাত্রীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ছাত্র গত বছর আত্মহত্যা করেছেন।
করোনাকালে সারা দেশে বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। আর্থিক টানাপোড়েন, লেখাপড়া ও পরীক্ষা নিয়ে হতাশা, পারিবারিক সহিংসতা, অভিমান—এসব কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সেলিং দেয়া প্রতিষ্ঠান সাজিদা ফাউন্ডেশনের সাজিদা মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক রুবিনা জাহান মনে করেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক ।
তিনি বলেন, কোভিডের সময় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে একটা ছেলে বা মেয়ে যখন টানা দেড়-দুই বছর তার ঘরে থেকেছে, তার পরিবারের জন্য অনেক সময় তার ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু ঐ শিক্ষার্থী হলে থাকলে একটা টিউশনি করতো-তাহলে হয়তো তার নিজের জন্য একটা সাপোর্ট সিস্টেম থাকতো।
মোবাইল আসক্তদের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভোগাদের সংখ্যা অনেক বেশি। এক জরিপে দেখা গেছে, যারা দিনে তিন থেকে সাত ঘণ্টা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাদের ৮৮ ভাগই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।
এমএএন
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন