নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই মুহূর্তে গোটা দেশে আলোচনায়। হুট করেই পুরো পরিস্থিতি বদলে গেছে দেশের অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টির। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল প্রভোস্ট বডির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে ওঠে। রোববার বিকেল ৩টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য, ১০ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১৫ জন শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।
তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২৭টি রাবার বুলেট ও ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে তার বাসভবনে নিয়ে আসেন।
শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাত থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন শীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় সিটি নিউজ ঢাকার। তারা বলেন, তারা হল ছাড়বেন না। এখানে থেকেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
পাশাপাশি তারা বলেন, কিছু হলের পানি-বিদ্যুৎ বন্ধের চেষ্টা করা হতে পারে। তাই আমরা হল নিজেদের দখলে নেব, যাতে এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে কেউ।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রক্টর আলমগীর হোসনকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ নিজ বাসভবনে রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে।’
এ ছাড়া বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলে নতুন প্রাধ্যক্ষ হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আবাসিক হল এবং প্রভোস্টদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া উপাচার্যের পাশাপাশি প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর, ছাত্র উপ-নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদেরও পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে সাবেক বর্তমানসহ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন।
সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রথম ছাত্রী হল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলে প্রভোস্টদের রুমে তালা দিয়েছেন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ছেলেদের হলেও তালা ঝুলানো হয় বলে জানা গেছে।
সকাল থেকে ছেলেদের শাহপরাণ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, প্রথম ছাত্রী হল, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনে হল না ছেড়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু শিক্ষার্থী হলে ছেড়েছেন বলেও জানা গেছে। এরপর সকাল ৯টা থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সার্বিক বিষয়ে ফিজিক্যাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে সভাপতি, রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেনকে সদস্য সচিব এবং সকল ডিনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকায় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে অনেককে অফিস ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তাদের অনেকে আবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও দাবি করেছেন।
এদিকে শাবিপ্রবির ২০২১ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’
নির্ঝর/ডা
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন