প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১, ০৫:০৯ পিএম
বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না
তারমিনা আক্তার ওরফে ফুলতির (১৪)। প্রেমের প্রস্তাবে
রাজি না হওয়ায় বিয়ের
দিন তাকে ছুরিকাঘাত করা
হয়েছে। আহত হয়ে পাঁচ
দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেলেন
তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের বদরগঞ্জে।
পাঁচ
দিন রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার (১
আগস্ট) সকালে মারা যান তিনি।
তার এমন করুণ মৃত্যুতে
এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তারমিনার
বাড়ি উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের সাজানোগ্রাম এলাকায়। তিনি লোহানীপাড়া দাখিল
মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী
ছিলেন। তিনি তোয়াব আলী
ও পারভিন আক্তার দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান।
বুধবার
(২৮ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার
দিকে তাকে ঘুম থেকে
ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে
শাখাওয়াত হোসেন নামে এক যুবক।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওইদিন সকালে তাকে রংপুর মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরদিন
২৯ জুলাই ওই যুবকের বিরুদ্ধে
বদরগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়।
পরিবার
ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী
মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা এলাকার পশ্চিম বড়বালায় তারমিনা আক্তারের বড় বোন তহমিনার
বিয়ে হয়। তহমিনার আত্মীয়তার
সম্পর্কে একই এলাকার মোনায়েম
হোসেনের ছেলে শাখাওয়াতের দৃষ্টি
পড়ে তারমিনার ওপর। পরে তাকে
যুবকটি প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
এরপর
গত বুধবার (২৮ জুলাই) মেয়েটির
সঙ্গে একই ইউনিয়নের গাছুয়াপাড়া
এলাকার এক যুবকের বিয়ের
দিন ধার্য করে পরিবার। এ
ঘটনা জানতে পেয়ে শাখাওয়াত মোটরসাইকেল
যোগে নিজ বাড়ি থেকে
প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে
তারমিনার বাড়িতে আসে। এ সময়
বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
এ
অবস্থায় ঘুমন্ত তারমিনাকে ভোরে ডেকে দরজার
কাছে ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি
আঘাত করে সে। এতে
তারমিনা বুক, দুই ঊরু
ও পাঁজরে আঘাতপ্রাপ্ত হন। চিৎকার দিয়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তারমিনা। বাড়ির
লোকজন ছুটে এসে তাকে
রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে
চেতনা হারিয়ে ফেলেন তারমিনা। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে শাখাওয়াত
হোসেনকে ধাওয়া দিলে সে মোটরসাইকেল
নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পরে
তারমিনাকে গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি
বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে
ভর্তি করা হয়। পাঁচ
দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যু
হয় তার।
তারমিনার
মামা মানিক মিয়া বলেন, ‘শনিবার
(৩১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে
শেষবারের মতো কথা বলেছিল
ফুলতি। আজ (১ আগস্ট)
সকাল ৬টা ১০ মিনিটে
মারা যায়। শত চেষ্টা
করেও আমার ভাগনিকে বাঁচানো
গেল না। মানুষের দ্বারে
দ্বারে গিয়ে চিকিৎসার টাকা
জোগাড় করেছে তারমিনার বাবা। ধারদেনা করে সে এখন
নিঃস্ব। এরপরও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না।’
রংপুর
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হামিদুল ইসলাম
বলেন, ‘মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য
সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু
বুক ও পেটের মাঝামাঝি
স্থানে রক্তনালী কেটে যাওয়ায় তার
মৃত্যু হয়েছে।’
বদরগঞ্জ
থানার ওসি হাবিবুর রহমান
বলেন, ‘এ ঘটনায় ঘাতকের
বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়েছে। এখন
সেটি হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিকে
ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।’
সম্রাট/এম. জামান