প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২১, ০৫:২২ পিএম
তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার প্রতিনিধি
ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি
ঢল ও জোয়ারের পানিতে
কক্সবাজারের দুই শতাধিক গ্রাম
প্লাবিত হয়েছে। গত দুই দিনে
প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ১৫
জনের। পাহাড়ি ধস ও ঝুঁকিপূর্ণ
অবস্থায় বসবাস করছেন জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
গত
২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫৪
মিলিমিটার। বাকখালী ও মাতামুহুরি নদীর
পানি বিপদ সীমার ৫
সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত
হচ্ছে।
জেলার
নিম্নাঞ্চলের ২ শতাধিক গ্রাম
প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও ভারী
বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফ উপজেলার
প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কক্সবাজার শহরতলির বাজারঘাটা, কলাতলী, চরপাড়া, কাঙালি পাড়া, নাজিরারটেক, খুরুস্কুল, চৌফলদন্ডী, পোকখালী। মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর,
বড় মহেশখালীর, হোয়ানক ও কালারমারছড়ার প্রায়
শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিংড়ি
ঘের ও বিভিন্ন মৎস্য
ঘের এবং পান বরজ,
ধান ও সবজি ক্ষেতের
ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
২৮
জুলাই বুধবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার
হ্নীলা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের
৫ জন ও মহেশখালী
উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নে এক বৃদ্ধার মৃত্যু
হয়। এবং রামু কচ্ছপিয়া
ইউনিয়নের নতুন তিতারপাড়া গ্রামে
বৃষ্টির পানিতে উঠানে খেলতে গিয়ে গর্তে পড়ে
দুই বছরের এক শিশু নিহত
হয়েছে।
এ
দিকে, কক্সবাজারের ঈদগাঁও খালে ঢলের পানিতে
মাছ ধরতে গিয়ে ৩
যুবক নিখোঁজ রয়েছে। দমকল বাহিনী ও
স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এসব
ঘটনায় নিহতরা হলো- টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ভিলেজার পাড়া ৪ নং ওয়ার্ডের
বাসিন্দা সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দুস শুক্কুর
(১৬), মোহাম্মদ জুবায়ের (১২), আব্দুল লতিফ
(১০) এবং মেয়ে কহিনুর
আক্তার (১৪) ও জয়নাব
আক্তার (৮)। মহেশখালী
উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা এলাকায় নিহত
হয়েছেন আলী হোসেন (৮০)
এবং রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া
নতুন তিতারপাড়া এলাকার ২ বছরের শিশু
পুত্র রহিম উল্লাহর মৃত্যু
হয়।
অন্যদিকে
গত মঙ্গলবার উখিয়ায় পানিতে ডুবে এক শিশু
ও পাহাড়ধসে ৫ রোহিঙ্গা নিহত
হয়েছে। আহত হয়েছেন ১২
জন। মহেশখালীতে দুইজন নিহত হন।
টেকনাফের
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ
মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, টেকনাফে
এক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে
ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার (২৮ জুলাই) ভোরে
হ্নীলা ইউনিয়নের ভিলেজার পাড়ায় ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের
ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের ৫
জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন
কয়েকজন।
কক্সবাজার
আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান
জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ভারী
বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজও বৃষ্টিপাত অব্যাহত
রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার
জেলায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকালও
ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কক্সবাজার ও
চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলসমূহে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ
দিকে ভারী বৃষ্টির কারণে
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে
ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে।
এ
বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি)
মামুনুর রশিদ জানান, ভারী
বর্ষণে কোথায় কী ক্ষতি হচ্ছে
তা খবর নেয়া হচ্ছে।
এ জন্য উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।
তিনি
বলেন, ‘পাহাড় কাটা রোধে জেলা
প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলছে। পাহাড়ধস নিয়ে জেলা প্রশাসনের
তৎপরতা অব্যাহত আছে।’
টিআর/এম. জামান