
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি সরাসরি বুড়িমারী থেকে চালুর দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে স্থানীয়রা হাতীবান্ধা মেডিকেল মোড়ে মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। এর ফলে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকসহ সব ধরনের ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে দেশের বৃহত্তম বুড়িমারী স্থল বন্দর থেকে ছেড়ে আসা পন্যবাহী প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক আটকা পড়ে আছে। এতে অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবরোধকারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য এ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। তাদের দাবি, বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা রুটে সরাসরি বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল শুরু করতে হবে। আর তা না হওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ কমসূচী অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবেন।
জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল থেকে একই দাবিতে হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয়রা। এর ফলে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটের গত ৮ দিন ধরে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ১২ মার্চ বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে উদ্বোধনের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ট্রেনটি সরাসরি বুড়িমারী স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। এ পরিস্থিতিতে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ট্রেনটির নামকরণ ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ হলেও এটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে চলাচল না করায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। তারা অবিলম্বে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরাসরি ঢাকা রুটে ট্রেনটির চলাচলের দাবী জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। অবরোধে স্থানীয় বিএনপি নেতা সায়েদুজ্জামান কোয়েল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, অবিলম্বে জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অবরোধে অংশ নেয়া হাতীবান্ধা এলাকার শামসুল আলম বুলেট বলেন, ২০২৪ সালের ১২ মার্চ আন্তনগর ট্রেনটি সরাসরি বুড়িমারী থেকে যাত্রা করে। একদিন পর ১৩ মার্চ থেকে আবার লালমনিরহাট থেকে চলাচল শুরু করে। ফলে বুড়িমারীর যাত্রীদের একটি শাটল ট্রেনে লালমনিরহাটে গিয়ে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠতে হয়। এতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
পাটগ্রাম সংগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি এ টি জে সিদ্দিকী জানান, এর আগেও কয়েকবার রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে সরাসরি আন্তনগর ট্রেন চালুর দাবি করা হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অন্তত পাঁচবার দিন-তারিখ উল্লেখ করে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ট্রেনটি চালু না হওয়ায় আবার অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
অষ্টম দিনের মতো স্থানীয়রা পাটগ্রাম স্টেশনে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। লালমনিরহাট-বুড়িমারী ৮৪ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন আছে ১৩টি। এ রুটে প্রতিদিন চারটি ট্রেন চলাচল করে।
পাটগ্রাম রেলস্টেশনের মাস্টার নুর আলম বলেন, গত সোমবার থেকে রেলপথ অবরোধ চলায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ রুটে সকাল-দুপুর-বিকাল ও রাতে চারটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে।
এবিষয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আন্তনগর ট্রেনটি বুড়িমারী-ঢাকা রুটে সরাসরি চালুর প্রস্তুতি আছে। তবে এজন্য অনেক কিছুর অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকতে হবে। সবকিছুর কাজ চলমান কিন্তু স্থানীয়রা রেল কর্তৃপক্ষকে সময় না দিয়ে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা বিষয়টি রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত এলে সেই অনুযায়ী প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেন তিনি।
এই অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে বহু দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক আটকা পড়েছে এবং যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে, তবে অবরোধকারীরা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।