
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম
লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর দাবিতে গত ২১ এপ্রিল শুরু হওয়া রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে ৬ষ্ঠ দিনের মতো। রেলপথ অবরোধ থাকায় বন্ধ রয়েছে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথে চলাচল কারী চার জোড়া ট্রেন। এতে দূর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।
পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে থাকা অবরোধকারীরা জানায়, বহুল প্রতিক্ষিত বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত বছরের ১২ মার্চ চলাচল শুরু করে। তবে নাম বুড়িমারী এক্সপ্রেস হলেও ট্রেনটি লালমনিরহাট থেকে ঢাকা নিয়মিত চলছে। আর বুড়িমারী থেকে লালমনিরহাট পর্যন্ত একটি সাটল ট্রেন দিয়েছে এক্সপ্রেস এর পরিবর্তে। এতে করে বুড়িমারী পাটগ্রামের যাত্রীদের সেই সাটল ট্রেন দিয়ে লালমনিরহাট স্টেশনে এসে ঢাকাগামী বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে যাতায়াত করতে হয়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের।
আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল শুরুর পর থেকে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলাবাসী বুড়িমারী এক্সপ্রেস বুড়িমারী থেকে চালুর দাবি জানিয়ে তিন দফা অবরোধ, অবস্থান, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনকারীদের দাবির পেক্ষিতে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষ বুড়িমারী থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস চালুর আশ্বাস দেয় তারা। সে অনুযায়ী বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু সে আশ্বাস শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। সর্বশেষ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গত ১৪ এপ্রিল থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস বুড়িমারী থেকে চালুর আশ্বাস দিলেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি তারা। এর পরে গত ২১ এপ্রিল জেলার হাতিবান্ধা ও পাটগ্রামে রেলপথ অবরোধ করে বুড়িমারী টু ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেন বাস্তবায়ন পরিষদ। পরে এ আন্দোলনে যোগ দেয়, পাটগ্রাম উন্নয়ন পরিষদ, হাতিবান্ধা উন্নয়ন পরিষদ, বিএনপি, শিক্ষক সমিতি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে রেলপথ অবরোধে অংশ নেয়াদের দাবি বুড়িমারী এক্সপ্রেস দীর্ঘ ১৪ বছর আন্দোলনের ফসল, কিন্তু বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার চার উপজেলার লাখ লাখ মানুষ।
পাটগ্রাম সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক এ টি জেড সিদ্দিকী কাকনসহ সম্প্রতি কয়েকদফা আন্দোলনের পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বুড়িমাড়ী থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস চালুর আশ্বাস দেয়। সে অনুযায়ী বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু ট্রেনটি আর চালু হয়নি। তাই আর তালবাহানা নয় দ্রুত বুড়িমারী থেকে ট্রেন চালুর সকল পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি তার।
অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে পাটগ্রাম পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল বলেন, গত ১৪ বছর ধরে আন্দোলন করে পাওয়া বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলেও বুড়িমারী থেকে ছেড়ে যায় না। এতে জেলার একটি মাত্র উপজেলা এই ট্রেনের সুবিধা পায়। বরাবরের মতই আন্তঃনগর এক্সপ্রেসের সেবা বঞ্চিত থাকে আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার মানুষজন।
একই ধরনের মন্তব্য হাতিবান্ধায় রেলওয়ে স্টেশনে অবরোধে অংশগ্রহণকারীদের। হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় রেলপথ অবরোধকারীরা বলছেন আগামী সোমবারের পূর্বে বুড়িমারী এক্সপ্রেস বুড়িমারী থেকে চালুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গ্রহন না করলে রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথ অবরোধ করা হবে।
এদিকে রেলপথ অবরোধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, ও আদিতমারী থেকে লালমনিরহাট -পার্বতীপুর- সান্তাহার যাতায়াতকারী ট্রেন যাত্রীদের। আজ (শনিবার) সকালে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে বুড়িমারীর বাসিন্দা রাজু সরকার (৪৫) বলেন, গত ৬ দিন ধরে বন্ধ ট্রেন। গতকাল শুনেছি আজ সকাল থেকে চালু হতে পারে সে ট্রেন কিন্তু বুড়িমারী থেকে কোনো ট্রেন আসেনি। বুড়িমারীসহ জেলার কয়েকটি উপজেলার প্রধান যাতায়াত মাধ্যম ট্রেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে যাতায়াত ব্যয়।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রেলপথ অবরোধ থাকায় ট্রেন চলাচল বন্ধ জানিয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকাণ্ড মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবরোধকারীদের দাবিসহ বর্তমান পরিস্থিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।