• ঢাকা রবিবার
    ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

মেলার আড়ালে জুয়া-নাচ, ক্ষুব্ধ জনতা পুড়ালো প্যান্ডেল

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম

মেলার আড়ালে জুয়া-নাচ, ক্ষুব্ধ জনতা পুড়ালো প্যান্ডেল

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বৈশাখী মেলার আড়ালে চলছিল জমজমাট জুয়ার আসর ও অশ্লীল নৃত্য। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী প্যান্ডেল ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে আয়োজক ও জুয়ারীরা আগেই পালিয়ে যাওয়ায় কেউ আটক বা হতাহত হয়নি।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কৈ কাশদহ গ্রামের মটেরকুড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, বৈশাখ উপলক্ষে গ্রামের একটি খোলা মাঠে সাত দিনের মেলার আয়োজন করা হয়। দিনের বেলায় দোকানপাট ও ম্যাজিক শো থাকলেও সন্ধ্যার পর এক ঝলমলে প্যান্ডেলে চলে নাচ-গান ও অশ্লীল নৃত্য। পাশাপাশি বসানো হয় ফর-ডাবু দিয়ে জমজমাট জুয়ার আসর।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় জাকির মিয়া ও গোলজার মেম্বারের নেতৃত্বে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছিল। মেলার জন্য প্রশাসনের অনুমতিও নেওয়া হয়নি। আয়োজকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার কারণে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে বলেও অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হুদা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারদের সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে।

বাধা দেওয়ার পরও আয়োজকরা তা উপেক্ষা করায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। রাতে উচ্চ শব্দে গান-বাজনায় অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয়রা লাঠিসোটা নিয়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।

এরপর বালারছিড়া বাজারে স্থানীয়রা এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। এতে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান সরকার।

তিনি বলেন, ‘মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীল নাচ-গান দিয়ে এলাকার পরিবেশ ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে। সুন্দরগঞ্জের মাটিতে কোনো অপকর্ম বরদাশত করা হবে না। জুয়া বন্ধ না করলে নেতাগিরির দিন শেষ হয়ে যাবে। আমরা সাধারণ মানুষ, তবে আমাদের ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। এখন সুন্দরগঞ্জবাসী সজাগ—প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও জুয়া-অসামাজিকতা রুখে দেব।’

মাজেদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘জুয়ার আয়োজন চলছে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায়। আমরা জানি, আয়োজকদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও টাকা নিয়েছেন। যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তারাই এই দুর্নীতির মূল।’

থানা পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তা রাতের অন্ধকারে টাকা ভাগ করে নেয়, আর দিনে নিরব থাকে। ওসি সাহেব, আপনি যদি সুন্দরগঞ্জে শান্তিতে থাকতে চান, তবে অবিলম্বে জুয়া বন্ধ করুন। অন্যথায় থানা ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি নিতে আমরা বাধ্য হব। আমাদের দুর্বল ভাববেন না—প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমরা জানি কী করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকাবাসীকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিক। অপরাধীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি, সুন্দরগঞ্জকে জুয়া ও অশ্লীলতা মুক্ত রাখা এখন আমাদের অঙ্গীকার।’

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাকিম আজাদ বলেন, মেলার আয়োজন সম্পর্কে থানাকে কেউ আগে থেকে অবহিত করেনি। বিষয়টি জানার পর বিকেলেই পুলিশ পাঠানো হয় এবং তারা রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করে। তবে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় জনতা একত্রিত হয়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘মাদক ও জুয়াসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অপরাধে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ