
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কালের কণ্ঠের সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপু। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের টানা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির পর, দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে করা আপিলের ভিত্তিতে তার জামিন মঞ্জুর হয়।
পরে বিকাল ৪টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারা ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের একটি দল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে সাংবাদিক টিপুকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এ সময় অনেক সাংবাদিক আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাংবাদিক টিপুর শাস্তির ঘটনায় সাংবাদিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা, সাতক্ষীরা ও তালা উপজেলায় সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরদিন বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এই আন্দোলনেরই ফলস্বরূপ, আপিলে জামিন মঞ্জুর হয়।
তিনি বলেন, সংবাদের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটি অন্যতম স্তম্ভ। একজন সাংবাদিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো গণতন্ত্র ও স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকি। টিপুর মুক্তি সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ফল। আমরা চাই, ভবিষ্যতে আর কোনো সাংবাদিক যেন এভাবে নিপীড়নের শিকার না হন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রিপন বিশ্বাস জানান, টিপুর পক্ষে অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান জামিনের আবেদনসহ আপিল করেন। শুনানি শেষে আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়।
মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক দক্ষিণের মশালের সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই-এলাহী এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ বেতার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের আবুল কাসেম। বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাংবাদিক নেতা অ্যাডভেকেট আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আবু জাফর, নিউজ টোয়েন্টিফোর ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের মনিরুল ইসলাম মনি, মানবজমিনের এস এম বিপ্লব হোসেন, ঢাকা টাইমসের মো. হোসেন আলী প্রমুখ।
মুক্তির পর সাংবাদিক টিপু বলেন, তালায় একটি প্রকল্পের অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি নির্যাতনের শিকার হই। প্রকৌশলী আমাকে মারধর করে এবং ইউএনও আমাকে ১০ দিনের কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা দেন। আমার বিরুদ্ধে নেওয়া এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছিল অনিয়ম ঢাকার অপচেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে আমার মুক্তি সম্ভব হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার কলম চলবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) তালা উপজেলার একটি ৯ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের সঙ্গে সাংবাদিক টিপুর বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ইউএনও শেখ রাসেল পরে ১৭৬ ধারায় টিপুকে শাস্তি দেন। ঘটনাটি সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং সাংবাদিকরা ইউএনও’র অপসারণ ও ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।