• ঢাকা মঙ্গলবার
    ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড় সীমান্তে এবারও বসছে না দুই বাংলার মিলনমেলা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড় সীমান্তে এবারও বসছে না দুই বাংলার মিলনমেলা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পাসপোর্ট ও ভিসা করতে না পারা সাধারণ মানুষের এক আনন্দের নাম বাংলা নববর্ষ। নববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে দুই বাংলার (ভারত ও বাংলাদেশ) মানুষ (আত্মীয়-স্বজন) মিলিত হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার কাছে। সুখ- দুঃখের গল্পের সাথে সামান্য উপহারে উপভোগ করেন দিন দুটিকে।

কিন্তু গেল কয়েক বছরের মত এবারও সেই আনন্দের কাটাতারের মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না পঞ্চগড় সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অপেক্ষায় থাকা মানুষেরা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সহ উভয় দেশের সরকারের নির্দেশনা না থাকায় গত ৬ বছরের মত ৭ম বারের মত বসছে না দুই বাংলার এই ভিন্ন আয়োজনের মিলন মেলা।

শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পঞ্চগড়-১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম। একই সাথে ভিন্ন এই আয়োজন বন্ধ থাকায় সীমান্তের কাছে সর্বসাধারণের প্রবেশে নিরুৎসাহিত করেছেন এই কর্মকর্তা।

জানা গেছে, সাধারণত পহেলা ও দ্বিতীয় বৈশাখে পঞ্চগড়ের অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি সীমান্তসহ বিভিন্ন সীমান্তের কাঁটাতারের পাশে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুই বাংলার এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হতো। এ সময় দু‍‍`দেশের হাজার হাজার মানুষ (আত্মীয়-স্বজন) জমায়েত হয়ে একে অন্যের সাথে কথা ও ভাববিনিময় করে আসতো। তবে এবারও সেই অন্যরকম আনন্দ চোখে পড়বে না।

ভৌগোলিক সীমারেখার বেড়াজালে বন্দি দুই বাংলার মানুষ চান আত্মীয়-স্বজনদের সান্নিধ্য। একটা সময় ছিল আত্মার সুতোয় বাঁধা ভারত-বাংলাদেশের এসব বাঙালি সুযোগ পেলে পরস্পর মিলিত হতেন কাটাতারের বেড়ার কাছে। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগ পর্যন্ত এ জেলা ভারতের জলপাইগুড়ির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু দেশভাগের কারণে এখানে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দু‍‍`দেশের নাগরিকরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের সীমিত সুযোগ পেতেন। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর থেকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তারা। অনেকেই দারিদ্র পরিবার হওয়ায় পাসপোর্ট করতে না পারায় উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগের মতো সময় ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে নববর্ষের দিন তারা কাঁটাতারের দুই ধারে এসে দেখা করার সুযোগ পেতেন। আর এতে করেই তৈরি হয় সীমান্তের কাটা তারের দুই পাশে মিলন মেলা।

তবে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২০১৯, ’২০ ও ’২১ সালে পঞ্চগড় সীমান্তে দুই বাংলার কাঁটাতারের মিলনমেলা বন্ধ হলে আর এই মেলা বসেনি। বিগত কয়েক বছর ধরে বৈশাখের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন সীমান্তে কাটাতারের মাঝে মিলন মেলা না বসলেও সীমান্তের দূরে মানুষের অপেক্ষার আশা নিয়ে উপস্থিতি থাকতেও দেখা গেছে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী  বলেন, সীমান্তের কাটাতারের মিলন মেলা নিয়ে আমরা কোন নির্দেশনা পাই নি। এবারও পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্তে বসছেনা দুই বাংলার মিলন মেলা।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়-১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরুল ইসলাম  বলেন, বাংলা নববর্ষ একটা ঐতিহ্য। বিগত দিনে দেখা গেছে নববর্ষকে কেন্দ্র করে অনেকেই পঞ্চগড় সীমান্তের কাছে ছুটে যায় ভারতের অভ্যন্তরে থাকা তাদের আত্বীয়-স্বজনদের দেখা করতে। তবে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২০১৯, ’২০ ও ’২১ সালে পঞ্চগড় সীমান্তে দুই বাংলার কাঁটাতারের মিলনমেলা বন্ধ হয়ে গেলে যা এখনো বন্ধ রয়েছে। তার মাঝেও সাধারণ অনেক মানুষ বিষয়টি না জেনে উৎসাহ নিয়ে সীমান্তের কাছে ছুটে আসে। এ বিষয়ে আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করছি। কারণ এবারও বসছে না এ মিলনমেলা। সীমান্ত নিরাপত্তায় বিজিবি তৎপর রয়েছে, অতএব আশা করি সাধারণ মানুষ নববর্ষকে কেন্দ্র করে সীমান্তে ছুটে যাবে না। একই সাথে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করবে না।

আর্কাইভ