
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম
পঞ্চগড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, একটা অভ্যূত্থানের সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা যে আমাদের শহীদ পরিবার রয়েছেন কিংবা আমাদের যারা আহতদের যোদ্ধা রয়েছেন তাদের সাথে থাকা এবং শহীদ পরিবারটা যেন আমাদের পরিবার হয়ে ওঠে। এটা সত্য যে খুব স্বাভাবিকভাবেই এক দেড় হাজার পরিবারের কাছে আমরা চাইলেই যেতে পারিনা। কিন্তু যখন যেই এলাকায় যাই ওই এলাকায় আমাদের যে শহীদ পরিবার থাকে অবশ্যই আমরা চেষ্টা করি সেই শহীদ পরিবারের বাসায় যাওয়ার, তাদের খোঁজ খবর নেয়ার এবং আমাদের জায়গা থেকে যেটুকু করা দরকার সেটি করার চেষ্টা করি।
রবিবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের নায়েক পাড়া এলাকায় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সাগর ইসলামের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে তাঁর কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সারজিস বলেন, অধিকাংশ শহীদ পরিবার যে খুব একটা সচ্ছল ব্যাপারটা এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিটিকে তারা হারিয়েছেন। সেই জায়গায় আমরা প্রত্যাশা করবো যে সরকারের জায়গা থেকে সরকার আরো তাদের প্রতি কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটি যেমন করবেন। তেমনি ব্যাক্তিগত পর্যায়ে কিংবা প্রাইভেট ভাবে যে প্রতিষ্ঠান গুলি, ব্যাক্তি গুলি তাদের জায়গা থেকে যতদূর সম্ভব পাশে থাকেন। এটা আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রত্যাশা করি।
সারজিস বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের ৫৩-৫৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। ফিলিস্তিনের মজলুমদের পাশে দাড়াতে কোন ব্যানার নিয়ে নয় দলমত নির্বিশেষে সবাই পাশে দাড়িয়েছে। জাতিসংঘ ইউনিসেফ মানাবাধিকারের বড় বড় লেকচার দেয়। কিন্তু গাজায় সেটা তারা করেনি। আমরা পৃথিবীর সবার কাছে আহ্বান জানাই ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য। এই গণহত্যা বন্ধ করতেই হবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছর দেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে দলীয় প্রভাবের পাশাপাশি বিদেশী রাষ্ট্রেরও প্রভাব ছিলো। বিগত বছরের নববর্ষ গুলোতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই শুধু দলীয় নয় বিদেশী রাষ্ট্রের প্রভাব আমরা দেখেছি। তাদের মত করে দলের যেমন ছিলো, তেমনি বিদেশী রাষ্ট্রের এজেন্সির ওইরকম কনসেপ্ট তৈরি করে এই নববর্ষ গুলোতে বিভিন্ন ধরণের অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া হতো।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা ক্ষমতার জায়গা থেকে কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া কখনোই সাসটেইনেবল (টেকসই) নয়। এটি কখনো আমরা প্রত্যাশাও করিনা। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ততটুকু স্পেস বাংলাদেশের মানুষকে দিয়েছে আমরা যা ধারণ করি, সেটাই প্রকাশ করি এবং করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি আগামীতেও যারাই এই দেশের দায়িত্বে থাকুক না কেন, তারর যেন কোন কিছু ক্ষমতাকে ব্যবহার করে চাপিয়ে দেয়ার সাহসটুকু না করে। বরং আমাদের প্রকৃতি সংস্কৃতি ধরাণ করার জন্য তারা যেন তাদের প্রচেষ্টা রাখে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে নতুন একটি নববর্ষ পেতে যাচ্ছি। বাংলাদেশের যে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আমাদের যে কালচারগুলো ছিলো- এগুলোকে ধারণ করে আমরা গ্রাম বাংলায় যেভাবে নববর্ষ কাটিয়েছি, যে সংস্কৃতিকে ধারণ করে আমাদের বাবারা, দাদারা, নানারা যেভাবে নববর্ষ পালন করে এসেছেন সেগুলোই আমাদের মূল কালচার। আমরা সেগুলোকে সামনে রেখে যদি নববর্ষকে উদযাপন করি, তাহলে সেটাই আমাদের নিজেদেরকে প্রকৃতভাবে তুলে ধরা হবে। আমরা প্রত্যাশা করবো- আমাদের সংস্কৃতির উপরে বাহ্যিক কোন দেশের বা নির্দিষ্ট কোন এলাকার অপসংস্কৃতি যেন চাপিযে না দেয়া হয় এবং এই অপসংস্কৃতির কারণে আমাদের মূল সংস্কৃতি যেন ঢেকে না যায়।
এসময় চাকলাহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, শহীদ সাগরের বাবা রবিউল ইসলাম, নাগরিক পার্টির পঞ্চগড়ের সংগঠক তানবীরুল বারী নয়ন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।