• ঢাকা সোমবার
    ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে ধান কাটার উৎসব

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:২৬ এএম

কিশোরগঞ্জে ধান কাটার উৎসব

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পানান বিলে প্রায় ১০০ শতাংশ জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন মধ্য লাখুহাটি এলাকার কৃষক হারুন মিয়া। তাঁর জমির ধান একটু আগেভাগেই পেকে গেছে। তিনি জমির ধান কাটার ঘোষণা দিতেই কৃষক রাসেল মিয়াসহ আশপাশের যেসব কৃষকের গরু আছে, তাঁরা দল বেঁধে খড়ের বিনিময়ে ধান কাটতে জমিতে ভিড় করেন।

কৃষক রাসেল মিয়া ও রফিকুল ইসলামের নিজেদের ধানি জমি আছে। কিন্তু তাঁদের জমির ধান পাকতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। তাঁদের বাড়িতে থাকা গরুর খাবারের জন্য খড় দরকার। কিন্তু পুরোদমে ধান কাটা মৌসুম শুরু না হওয়ায় বাজারে এখন খড় পাওয়া কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেরা শ্রমিক না হলেও খড়ের বিনিময়ে ধান কাটা উৎসবে যোগ দিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জে খড়ের বিনিময়ে ধান কাটা উৎসব | প্রথম আলো

এভাবে প্রতিবছর যাঁদের ধান আগেভাগে পেকে যায়, অন্য কৃষকেরা খড়ের বিনিময়ে তাঁদের জমির ধান কেটে দেন। শুক্রবার হোসেনপুরের পানান বিলে গিয়ে এমন উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষকদের ধান কাটতে দেখা যায়। কৃষকেরা জানান, খড়ের বিনিময়ে ধান কাটার বিষয়টা তাঁদের কাছে উৎসবের মতো লাগে। খড়ের বিনিময়ে ধান কাটার উৎসবটি পানান বিলে আজ থেকে শুরু হয়েছে। দুই থেকে তিন দিন এ উৎসব চলবে। পুরোদমে ধান কাটার মৌসুম শুরু হলে তখন আর এ সুযোগ থাকে না।

আজ সকালে পানান বিলে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ ধান কাটছেন, কেউ ধান ঝেড়ে খড় আলাদা করে স্তূপ করে রাখছেন। কেউ কেউ মাথায় ও সাইকেলে করে কিছু খড়ের মুঠি নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন। তাঁরা কেউ ধান কাটার শ্রমিক নন। সবারই কমবেশি ধানি জমি আছে। মূলত বাড়িতে থাকা খড়ের জন্য তাঁরা ধান কেটে দিচ্ছেন। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হচ্ছেন। জমির মালিকের শ্রমিকের খরচ বেঁচে যাচ্ছে।জমির মালিক হারুন মিয়া বলেন, তাঁর ১০০ শতাংশ জমির ধান অন্যদের তুলনায় একটু আগেভাগে পেকে গেছে। ধান কাটার কথা জানাজানির পর এলাকার ৩০ থেকে ৪০ জন খড়ের বিনিময়ে ধান কেটে মাড়াই করে দিয়েছেন।

বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত বুড়িচংয়ের কৃষকরা

এতে তাঁর প্রায় ১০ হাজার টাকা শ্রমিকের খরচ বেঁচে গেছে। অন্যদিকে যেসব কৃষকের জমির ধান কাটতে এখনো ১০-১৫ দিন বাকি, তাঁরাও গরুকে খাওয়ানোর খড় পেলেন। এতে তাঁর কিছু খড় হারালেও কয়েক দিন পর অন্য জমির ধান কাটলে সেটা পূরণ হয়ে যাবে। পানান বিলে আগেভাগে পেকে যাওয়া ২০ থেকে ২৫ জন কৃষকের কয়েক একর জমির ধান এভাবে খড়ের বিনিময়ে কাটা হয়। কয়েক বছর ধরে এ প্রথা চলে আসছে।

স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, পানান বিলে তাঁর নিজেরও জমি আছে। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে প্রথম প্রথম যাঁদের ধান পাকে, তাঁদের ধান অন্যরা মিলে খড়ের বিনিময়ে কেটে দেন। কয়েক বছর ধরে পানান বিলে এ প্রথা চলে আসছে। এটাকে তাঁরা খড় উৎসব বলে ডাকেন।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকেরা ইতিমধ্যে টুকটাক ধান কাটা শুরু করেছেন। অনেক জায়গায় খড় উৎসবও চলছে। সপ্তাহ দুয়েক পর পুরোদমে ধান মাড়াই শুরু হবে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার ধানের বাম্পার ফলন পাবেন কৃষকেরা। শেষ পর্যন্ত যেন কৃষকদের মুখে হাসি থাকে, সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ