
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনির অসহায় গরীব পরিবারের সন্তান মামুন হোসেন জীবন যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে সফলতার মাল্য গলায় পরতে সক্ষম হয়েছেন। চড়াই উৎরাই মোকাবলা করে মামুন বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন কর্তৃক ১৭তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর গ্রামের অসহায় গরীব পরিবারের সন্তান মামুন হোসেন। হতভাগ্য পিতা আব্দুল হাকিম মোল্যার ছেলে মামুন ভবিষ্যতে সহকারী জজের মত ঈর্ষণীয় পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন তখন কেইবা ভাবতে পেরেছিল।গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
মামুন শিশু কালে ৬২ নং গদাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। ছোট থেকে লেখা পড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল।অভাবের সংসারে পিতামাতা ছেলে বড় করে গড়ে তুলতে সাধ্যমত চেষ্টা করেন। প্রাইভেট পড়ানোর মত আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও উপদেশ ও ভালবাসার ঘাটতি ছিলনা। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন গদাইপুর জেহের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা ও পিতামাতার দোয়া নিয়ে ২০১২ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন।
এরপর থেকে পিতামাতার আগ্রহ বেড়ে যায়। উচ্চ শিক্ষার জন্য পাশে দাড়ান তারা। শত কষ্ট বুকে ধারন করে ভর্তি করান খান সাহেব কোমর উদ্দীন কলোজে। এই কলেজ থেকে ২০১৪ সালে তিনি কুতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করেন। শিক্ষক, অগ্রজ বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্টদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন তিনি এলএলবি (অনার্স) পড়ার। ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএল.বি (অনার্স) ও এলএল.এম (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। এরপর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবী সনদপ্রাপ্ত হন এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকায় অ্যাডভোকেট হিসাবে যোগদেন।
মামুন হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আমি যখন ভর্তি হই তখন থেকেই বাবা, মা এবং একমাত্র ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল মামুন একদিন বিচারক হবে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। তাদের এই তীব্র ইচ্ছা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম ছাত্রজীবন থেকে আমাকে বিচারক হতে অনুপ্রাণিত করেছে। তবে, পরপর ১৪, ১৫ ও ১৬তম বিজেএস পরীক্ষার ভাইবাতে আমি যখন অকৃতকার্য হতে থাকি তখন মা সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন, বুঝিয়েছেন ও সান্ত্বনা দিয়েছেন।
অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে, ১৭তম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে আল্লাহ আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।আমার এই সাফল্যের জন্য আমার ছাত্রজীবনের সকল শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার জন্য সবা দোয়া করবেন।