• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

সাতক্ষীরায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের শতকোটি আত্মসাৎতের অভিযোগ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম

সাতক্ষীরায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের শতকোটি আত্মসাৎতের অভিযোগ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সুপেয় পানির প্রকল্পের নামে দীর্ঘ চার বছরে  সাতক্ষীরায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তকোটি আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ব্যাবস্থা নিতে  নির্বাহী  প্রকেীশলী মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরার জনস্বাস্থ্য  প্রকৌশল  অধিদপ্তরের দফতরে  একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা ও এলাকাবাসী। অভিযেগের

প্রাথমিক  সত্যতা পেয়ে চলতি মাসের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামকে অবশেষে কুষ্টিয়া জেলায় বদলি করেছে  এক  আদেশে  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর । তবে বদলী হলেও থেমে নেই তার দৌরত্ব ।

জানা গেছে ছুটির দিনে অফিসে বসে অফিসের নথিপত্র গায়েব করে বদলী ঠেকাতে রিতিমত বিভিন্ন মহলে দৌঁড় ঝাপ শুরু করে চলেছেন তিনি। এছাড়া টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল ধন সম্পদ গড়ে তোলা, যশোরের নিউ মার্কেট এলাকায় ৫ তলা বাড়িসহ ৮/১০টি প্লট সহ  কয়েক বিঘা জমি, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীসহ বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে সম্পত্তি কিনেছেন তিনি।

খোঁজ  নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে ২০ মে সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন শহিদুল ইসলাম । এরপর থেকে তিনি জড়িয়ে পড়েন লুটপাটের মহাযঞ্জে ।  গত ২০২০ -২১ অর্থ বছরে সুপেয় পানির জন্য সারাদেশে ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা খরচ করে হাতে নেয় আওয়ামী সরকার। এর মধ্যে ৫টি প্যাকেজে ২শত ১২ কোটি বরাদ্ধ হয় সাতক্ষীরার জন্য । প্রকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে রেইনওয়াটার হারবেষ্ট , গভীর নলকুপ, সাব মার্সেবল । প্রকল্পটির শুধু মাত্র  গরীব আর পিছিয়ে পড়া মানুষকে স্বল্প মূল্যে নিরাপদ পানি দেওয়ার জন্য ছিল  । কিন্তু  বরাদ্ধের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করে অনিয়মের মাধ্যমে লাভবান হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা, এমপি ও সহ স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা।
অনুসন্ধানে গেলে জানা যায়, জেলার আশাশুনি ও  শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি সংকট নিরসনে সারা ,দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ ও ‘উপকূলীয়  জেলা সমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ নামে দুটি প্রকল্পের আওতায়  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে প্রকল্পে  ৩ হাজার লিটারের পানি সংরক্ষণের ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ স্থাপন করা হয়। এসব প্রকল্পের আওতায় সরকারের উপকারভোগী প্রতি ব্যয় প্রায় ৪২ হাজার ২০০ টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ)। তবে সরকারী   এ
প্রকল্পে   গ্রাহক প্রতি ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা নেওয়ার কথা  থাকলেও কৌশালে হাতিয়ে ন্ওেয়া হয়েছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা । এছাড়া  নিম্ন আয়ের মানুষদের  বাদ দিয়ে স্বচ্ছল চাকরীজীবীদের কাছে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকায়  ফরি করে বিক্রি করছেন|

এসব ট্যাংক বলে অভিযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের । এই অনিয়মের সাথে স্থানীয় জন প্রকৌশল অধিদপ্তরে সাথে  স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত বলে অভিযোগের তীর  এলাকাবাসী।

তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দাবী  স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তালিকা পাওয়া গেছে সেই তালিকা অনুযায়ী  ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছিল । সেখানে কোন  দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই বলে এমন দাবী তাদের ।

শ্যামনগরের  আটুলিয়া  ইউনিয়নের  বাসিন্দা আল আমিন হোসেন, আলাফাত হোসেন , করিম শেখ, রমজান নগরের বাসিন্দা  আয়েশা খাতুন,আমেনা বেগম সহ অনেকে জানান, আমাদের এলাকায় সুপেয় পানির বড়ই  অভাব । দিনে দুই থেকে তিনবার  দূর হেঁটে পানি আনতে হয়। পানির পাত্র না থাকায় বৃষ্টির সময় পানি ধরে রাখতে পারেনা তারা । শুনেছি সরকার থেকে তিন হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি দেয়। সরকারী বরাদ্ধ তো স্বপ্নের মত । পানির সমস্যা নিয়ে  এরপর স্থানীয় মেম্বরদের কাছে  গেলে দিতে হয়  ১ থেকে ১৫ হাজার টাকা। দুঃখের বিষয় হল পানির ট্যাংকি গরীব অসহায়  মানুষ না পেয়ে এলাকার বিত্তবানরাই পাচ্ছেন। তারা  ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ক্রয় করছেন সরকারি ট্যাংক। আর এসব ট্যাংকি  ব্যবহার করছেন গরুর গোয়াল আর মুরগীর খামারে ।

নাম না জাননোর শর্তে স্থানীয় এক সংবাদ কর্মী জানান, সরকার পতনের কয়েকমাস আগেই  শ্যামনগর জুড়ে চলেছে ট্যংকি বিক্রির হরিলূট। আর এসবের  পেছেনে রয়েছে সাবেক সংসদ থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বর পর্যান্ত। গরীব মানুষকে ট্যাংকি না দিয়ে রমাজান নগরে ফারুক হোসেন নামে এক ইউপি সদস্য হাতিয়ে নিয়েছেন চারটি ট্যাংকি। এছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এলাকায় অধিকাংশ বিত্তবানদের  বাড়িতে  ২ থেকে ৩ টি ট্যাংকি । লুটপাটের এই মহাযজ্ঞে ক্ষোদ নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার  জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক প্রকৌশলী মো.মফিজুর রহমান জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী  মো. শহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরায় যোগাদানের পর অফিস কে দূনীতির এক অভয় অরন্যে পরিনত করেছিলেন । তৎকালীন সময়ে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানির বাসিন্দা হ্ওয়ার সুবাদে অফিসের সকল ঠিকাদারদের জিম্মি করে ফেলেছিলেন।৩ থেকে ৪ % কমিশন না দিলে কোন ঠিকাদার পেতনা কোন প্রকল্পের কাজ ।  এছাড়া ভ‚য়া প্রকল্প দেখিয়ে কয়েক কোটিটাকা আত্মসাৎ করেছেন ইতিমধ্যে । তার প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ করত কামাল এন্টার প্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান । জানামতে দীর্ঘ চার বছরো  টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির
মাধ্যমে প্রায় কয়েক শত  আত্মাসাৎ করেছেন বলে দাবী তার । ঘুষের টাকায় যশোরের নিউ মার্কেট এলাকায় ৫তলা বাড়িসহ ৮/১০টি প্লট সহ  কয়েক বিঘা জমি, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীসহ বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে সম্পত্তি রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, মো.শহিদুল ইসলাম ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরীতে যোগদান করলে ও তার পিতার মুক্তিযোদ্ধার  গেজেট হয় ২০১৬ সালে। এছাড়া তার একাডেমিক সনদ নিয়েও রয়েছে বির্তক। চাকরির শুরুতে চার লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে এমন গুঞ্জন শোনা যায়।

এবিষয়ে সংক্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কামাল এন্টারপ্রাইজের  ঠিকাদার প্রতিনিধি নজরুল  ইসলাম বলেন, অফিস থেকে যে তালিকা দেওয়া হয় , সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ট্যাংকি বিতরণ করছি।যদি কিছু বলার থাকে তাহলে অফিসে কথা বলেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তখন আমি বক্তব্য দিতে পারব। এখন আমি এ ব্যাপারে কোন তথ্য আপনাদের দিতে পারবনা বলে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন ।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ