
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১১:৩১ পিএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার সম্পদ লুট করে, দেশকে ধ্বংস করে তারপর পালিয়েছে। ধ্বংস করেছে দেশের গণতন্ত্র আর মানুষকে বঞ্চিত করেছে তার ভোটাধিকার থেকে। তাই যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, যে কোনভাবে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সোমবার দুপুরে বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভাচুর্য়ালি প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেদের মধ্যে অযাচিত তর্ক করবেন না, যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না তাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সকাল ১০টার আগে থেকেই বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা রঙ-বেরঙের গেঞ্জি, টি-শাট, ক্যাপ পরে সম্মেলনস্থলে জড়ো হন। স্লোগানের স্লোগানে মুখরিত হয় খুলনা নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দান। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের কার্যক্রম। উড়ানো হয় শান্তির প্রতিক পায়রা। পরে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান। দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলন চলাকালীন বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ভাচুর্য়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যা আগের সরকার হরণ করেছে। দেশকে একটা খঁাদের কিনারায় ফেলে রেখে তারা পালিয়েছে। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের মানুষ দায়িত্ব দিলে সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার প্রতিজ্ঞা নিতে হবে প্রতিটি কাউন্সিল থেকে। দেশে সঠিকভাবে নির্বাচন হলে বিএনপি দেশ গঠনের সুযোগ পাবে; এটা শুধু আশা নিয়ে বসে থাকলে হবে না এজন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। প্রত্যকেটি নেতাকর্মী তৈরী হতে হবে। আমাদের কাজ, কথা, কর্মকাণ্ডে সেই প্রতিফলন থাকতে হবে। দেশের মানুষ আমাদের কাছে প্রত্যাশা করছে, সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। জনগণের পৌঁছাতে হবে। দেশের মানুষ দায়িত্ব দিলে সেই দায়িত্ব পালনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও শপথ নিতে হবে।
অযথা তর্ক বিতর্ক নিয়ে সর্তক করে তারেক রহমান বলেন, আমরা অযাচিত তর্ক-বিতর্ক না করে জনগণ ও দেশের স্বার্থ রক্ষা থেকে দূরে সরে না যাই। নিত্য পণ্যে মূল্য বৃদ্ধিতে প্রতিদিন যুদ্ধ করছে। এখন বাজার সিণ্ডিকেট কাজ করছে। দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। এই কাজগুলো করতে হলে সঠিক ব্যক্তিদের নিবার্চিত করতে হবে। আমরা যেন দেশের এমন পরিস্থিতি তৈরী না করি, যাতে করে পতিত স্বৈরাচার হোক অথবা এমন কেউ হোক যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না তারা সুযোগ না পেয়ে যায়।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীন, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যশোর বিএনপি নেতা সাবেরুল ইসলাম সাবু, কাজী আলাউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম কাগজী। সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন খুলনা মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু, সদর থানা বিএনপি’র সভাপতি কেএম হুমায়ুন কবীর, সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান মনি, খালিশপুর থানা বিএনপি’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু, দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সভাপতি মুর্শিদ কামাল, খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যা এই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। তাই তারা অধীর আগ্রহে বসে আছে ভোট দেওয়ার জন্য। এজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
সম্মেলনে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান বলেন, জনরোষে শেখ হাসিনা গুষ্টি শুদ্ধ পালিয়েছে। তিনি যে বলেছেন শেখ মুজিবের মেয়ে পালাই না। তার একদিন পরই চলে গেলেন। এ সময় তিনি সকলের কাছে আগামীর জন্য ধানের শীষে ভোট চান।
এদিকে বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনে সভাপতি পদে বর্তমান আহবায়ক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা, তারিকুল ইসলাম জহির, সাহাজী কামাল টিপু, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, কাজী মাহমুদ আলী ও নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদে ছয় জন যথাক্রমে শের আলম সান্টু, মাসুদ পারভেজ বাবু, মাহবুব হাসান পিয়ারু, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, তারিকুল ইসলাম তারিক ও শেখ সাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলটির মহানগরীর পঁাচটি থানা থেকে আগত ৫০৫ জন কাউন্সিলর নতুন নেতৃত্ব নিবার্চিত করবেন। দলটি প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পর খুলনা নগর বিএনপির নেতৃত্ব নিবার্চনে সরাসরি ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।
এর আগে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীণের প্রায় ১৪ বছর পর মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে ২০২১ সালরে ৯ ডিসেম্বর ৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০২২ সালে ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের র্পুনাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। আর বিএনপির খুলনা মহানগর শাখার সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। রাতে সার্কিট হাউজের মাঠে সম্মেলনস্থলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃৃতক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। আর ২০১২ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে এই সার্কিট হাউজ ময়দানের সমাবেশ করেছিল বিএনপি।
খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে অ্যাডভোেকটে শফিকুল আলম মনা সভাপতি এবং শফিকুল আলম তুহিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
কাউন্সিলে সভাপতি পদে অ্যাডভোেকটে শফিকুল আলম মনা ২৯৯ ভোট, তরিকুল ইসলাম জহির ১৮৯ ভোট এবং সাহাজি কামাল টিপু ৩ ভোট পেয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল আলম তুহিন ২৮৮ ভোট, নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর ২০৩ ভোট এবং কাজী মাহমুদ আলী ২ ভোট পেয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে।
১৬ বছর পরে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু ও হাসানুর রশিদ মিরাজ। সাদী ৩৭০ বাবু ২৬০ ও মিরাজ ২৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন এ ফলাফল ঘোষণা করেন।