• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলবেন না: ফখরুল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম

আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়ে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলবেন না: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অতি দ্রুত নির্বাচন চাই। আমি জানি না এ সরকার কি জেনে শুনে একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে, গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে চায় কিনা আমি জানি না।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ী মাঠে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি আশা করব যে, তারা সেটা করতে দেবেন না। অরাজনৈতিক দলসহ দুয়েকটা দল যারা আগে স্থানীয় নির্বাচন চাচ্ছে তাদের আমি অনুরোধ করব, দেশকে আর ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, সরকার যদি জনগণের প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং দেশে যদি শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে না আসে, তাহলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একে অপরকে খুন করে, মানুষকে মারে, আগুন জ্বালিয়ে দেয়, একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, আজকে কিছু কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে বিষোদগার করছেন। ১৫ বছর আমরা লড়াই করলাম, আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হলো, ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হলো, ৭০০ মানুষকে গুম করে দেওয়া হলো, সেটার দিকে খেয়াল নেই। বিএনপি যেন কিছুই করে নাই। এ ফ্যাসিস্টকে উৎখাতের ভিত্তি স্থাপন করেছে বিএনপি। ভিত্তি স্থাপন করেছে রাজনৈতিক দলগুলো যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আজকে সেজন্য এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে কোনো লাভ হবে না।  

তিনি আরও বলেন, অনেকে বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, সংস্কার তো আমরাই দেখিয়েছি। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান প্রথম সংস্কার করেন ১৯৭৫ সালে। যখন আওয়ামী লীগ চলে গেল, শেখ মুজিবের পতন হলো সেই সময় একদলীয় শাসন তথা বাকশাল ছিল। সে সময় কোনো দল ছিল না, সংবাদ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন থেকে বহু দলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে। তিনি সব সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বন্ধ অর্থনীতিকে খুলে দিয়ে তিনি উন্মুক্ত অর্থনীতির ব্যবস্থা করেছিলেন। তারই উত্তরসূরি খালেদা জিয়া গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান সেটাও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াই করেছিলেন। এর চেয়ে বড় সংস্কার আর কি হতে পারে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ভিশন ২০/৩০ দিয়েছিলেন। ২০৩০ সালে বিএনপি কি করবে সেই পরিকল্পনা দিয়েছিলেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছিলেন, আমরা রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাই। আর এবার তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন সংস্কারের। রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, কোনটা বলি নাই আমরা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা বলেছি প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হতে ভারসাম্য আনতে হবে। আমরা বলেছি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট করতে হবে। আমরা বলেছি জুডিসিয়াল কমিশন করতে হবে, প্রশাসনিক কমিশন করতে হবে এবং নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে সেখানে অবশ্যই জনগণের জন্য উপযুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।  এগুলো আপনারা চোখে দেখেন না। দেখবেন কীভাবে, আপনাদের মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে যে করেই হোক বিএনপিকে ঠেকাতে হবে। বিএনপিকে কি ইচ্ছা করলে ঠেকানো যায়? বহু চেষ্টা হয়েছে, বিএনপির জন্মের পর থেকে ভেঙে ফেলার জন্য, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বারবার এরশাদ চেষ্টা করেছেন, হাসিনা চেষ্টা করেছেন, ফখরুদ্দীন সরকার চেষ্টা করেছেন কেউ সরাতে পারেনি। ১৫ বছর ধরে এত নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা মামলা-মোকদ্দমা সব করেছে, একটা মানুষকে কি কেউ সরাতে পেরেছে? সবাই আছে বিএনপির সঙ্গে। এটা মনে করবেন না হাসিনা পালিয়ে গেছেন বলে আমরা সরকার পেয়েছি। জনগণের ক্ষমতা সেদিনই হবে যেদিন জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরে আসবে, জনগণ ভোট দিতে পারবে, সেদিনই বিএনপি শক্তিশালী হবে।

বর্তমান সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ চালের দাম ৮০ টাকা, সাধারণ মানুষের পক্ষে কি এটা কেনা সম্ভব? ডালের দাম বেড়ে গেছে, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। যারা গার্মেন্টসে চাকরি করেন তারা বাচ্চাকে একটা ডিম খাওয়াতে চায়, এ ডিম সে খাওয়াতে পারে না। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ অবস্থা। সেদিকে কোনো লক্ষ্য নাই।

ফখরুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছিল। তাকে ওপর থেকে ফেলে দিয়ে কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সেই তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে তার বিরুদ্ধে ৮৩টা মামলা দিয়ে দেশে যাতে না আসতে পারেন তার ব্যবস্থা করেছিল। এখনো সেই মামলাগুলো শেষ হয় নাই, আমাদেরও মামলাগুলো এখনো শেষ হয় নাই। আমরা এখনো কোর্টে যাই, আমাদের এখনো হাজিরা দিতে হয়। এটা তো কথা ছিল না। আপনাদের বুঝতে হবে কি ত্যাগ স্বীকার করে, কত জ্বালা-যন্ত্রণা, নির্যাতন সহ্য করে আমরা এ জায়গায় এসেছি। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য তিনি কোনো দিন আপস করেন নাই। বার বার চেষ্টা করা হয়েছে বিএনপিকে ভেঙে ফেলার, বিএনপির লোককে ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এক মাত্র ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ছাড়া আর কাউকে নিতে পারে নাই।

তিনি বলেন, আজকে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আমাদের সঙ্গে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন করেছেন তাদেরও রেহাই দেয় নাই। এমনকি আলেম-ওলামাদের পর্যন্ত রেহাই দেয়নি। আমরা ভুলে যাই নাই। শাপলা চত্বরে আমাদের আলেমদের, এতিমদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার কথা আমরা ভুলে যাই নাই। আমরা ভুলে যাই নাই জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার কথা। আমরা ভুলে যাইনি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার কথা আমরা ভুলে যাই নাই। এদের একটাই অপরাধ ছিল তারা গণতন্ত্র চাইতেন, অধিকার চাইতেন। তারা দেশের মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলন করতো। এ হাসিনা সরকার, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এ দেশ থেকে রাজনীতিকে চিরতরে নির্বাসিত করার জন্য। একটা মাত্র দল তার দল থাকবে আর কোনো দল থাকবে না এভাবে পরিকল্পনা করে সেই এগিয়ে যাচ্ছিল।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। সবার আগে ধ্বংস করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা। ভোট দিতে যেতে পারবেন না, ভোট দিতে যেতেই দেবে না। ২০১৪ সালের ভোট হয়নি, কোনো ভোটই হয়নি। ২০১৪ সালে ১৫৪ জন কে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করেছে। আর ভোটকেন্দ্রগুলোতে কুকুর ঘোরাঘুরি করেছে। শফিউল আলম প্রধান তখন ওই নির্বাচনের নাম দিয়েছিলেন ‘কুত্তা মার্কা’ নির্বাচন। ২০১৮ সালে আমাদের সঙ্গে হাসিনা নিজেই কথা বললেন। ওয়াদা দিলেন আমি নির্বাচনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবো। কোনো পক্ষপাতিত্ব করতে দেবো না, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে সেদিন নির্বাচনে গিয়েছিলাম। নির্বাচনের অনেক আগে থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল। কাউকে ক্যাম্পেইন করতে দিতো না, প্রচার করতে দিত না, আর আগের রাতে সব ভোট সিল মেরে নিয়ে গেল। ২০২৪ সালে আর একটা নির্বাচন দিল। এ নির্বাচনের নাম ডামি নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতারাই পক্ষ হবে এবং তাদের নেতারাই বিপক্ষে নির্বাচন করবে। আমরা একটা ফ্যাসিস্ট সরকারকে তাড়িয়েছি।

ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে অমি, ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভিসহ ঢাকা জেলার পাঁচ উপজেলা ও স্থানীয় নেতারা।

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ