
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শুরু হয়েছে প্রায় চারশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। আধ্যাত্মিক সাধক শাহ শামসুদ্দিন বুখারি (রহ.) এর উরস উপলক্ষে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ মেলা শুরু। সপ্তাহব্যাপী এ মেলায় রকমারি পণ্য ছাড়াও বড় আকারের মাছ দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের।
বাউল সাধকদের আধ্যাত্মিক গান ও সুরের মূর্ছনায় মেলা প্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন আবহ। মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়।
জানা গেছে, প্রায় চারশ বছর আগে কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় আস্তানা গাড়েন ১২ আউলিয়ার অন্যতম আধ্যাত্মিক সাধক হজরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বুখারি (রহ.)। তার মৃত্যুর পর সেখানে গড়ে ওঠে মাজার। প্রতি বছর হজরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বুখারি (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে বাৎসরিক উরস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুরিদ ও সাধকরা এখানে জড়ো হন। সেই থেকে মাজার সংলগ্ন খোলা ময়দানে প্রতি বছর বসে কুড়িখাই মেলা। শত বছরের পুরোনো এ মেলায় ঢল নামে লাখো মানুষের।
প্রতি বছর মাঘের শেষ সোমবার থেকে সপ্তাহব্যাপী বসে মেলা। তবে এবার নির্ধারিত দিনের আগ থেকেই শত শত বাউল মাজার প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। ফলে বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে শুরু হয় মেলা।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় আসছেন প্রিয়জনকে নিয়ে। ঘুরে দেখছেন বাহারি খেলনা, প্রসাধনী, মুড়ি-মুড়কি, জিলেপি, চুড়ি-গহনাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কেউ চড়ছেন লাগরদোলায়।
মাছ বাজারে জামাইদের ভিড়
সবকিছু ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে মাছের বাজার। এলাকার রীতি অনুযায়ী কটিয়াদী উপজেলার জামাইরা মেলার সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে তবেই যাবেন শ্বশুরবাড়ি। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মেলায়। বিক্রিও হচ্ছে বড় বড় রুই, কাতল, বোয়াল, চিতল, আইড়সহ নানা জাতের মাছ। কে কত বড় মাছটি কিনবে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা।
আয়োজকরা জানান, কুড়িখাই মেলার শেষ দুদিন বরাদ্দ থাকে শুধু নারীদের জন্য। এদিন নারীরা কেনাকাটা করবেন। এ সময়কে বলা হয় বউমেলা। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হবে
স্থানীয় শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িখা মেলা উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলার পরিবেশ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।
আয়োজক কমিটির আহবায়ক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূইয়া জানান, মেলাটি এ অঞ্চলের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। ফলে মেলাকে ঘিরে বাংলার যে লোক ঐতিহ্য তা আরও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হযরত শাহ শামছুদ্দিন বুখারী (রহ.) আউলিয়ার ওরস উপলক্ষে কুড়িখাই মেলাটি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এ অঞ্চলের লোকজনের মিলন মেলা। আর তাই এর ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।